চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

চাই কঠোর পদক্ষেপ মাদকের গ্রাস থেকে মুক্ত নয় শিশুরাও

১৯ জানুয়ারি, ২০২০ | ৪:৪০ পূর্বাহ্ণ

এখন মাদকের গ্রাস থেকে শিশুরাও মুক্ত নয়। মাদকব্যবসায়ীরা যুবসমাজকে প্রধান টার্গেট করলেও এখন শিশুরাও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মাদকের শিকার হচ্ছে। মাদকের আগ্রাসনে শিশুদের জীবনও সংকটাপন্ন হয়ে উঠেছে। সংবাদমাধ্যমের নানা অনুসন্ধানী রিপোর্ট এবং বিভিন্ন গবেষণাপ্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, দেশে মাদকাসক্ত শিশুর সংখ্যা অনেকটা জ্যামিতিক হারেই বাড়ছে। শিশুমাদকাসক্তের এই চিত্র সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে সন্দেহ নেই।

নানা গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, মাদকসেবন ও কেনা-বেচায় সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয় শিশু-কিশোররা। এ কথা আক্ষরিক অর্থে সত্যি হয়ে উঠেছে মাদকাসক্ত শিশুকিশোরদের সংখ্যা বাড়ায়। বিভিন্ন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বলছে, প্রতিনিয়তই বাড়ছে শিশুকিশোর মাদকাসক্তের সংখ্যা। এছাড়া নানা কারণে স্বাভাবিক শৈশব ও কৈশোর হারিয়ে ফেলছে শিশুকিশোরদের একটি বড় অংশ, যারা পথশিশু হিসেবে পরিচিত। এরা মাদকের গ্রাসে পরিণত হচ্ছে। এমনকি মাদকপাচারেরও প্রধান মাধ্যম তারা। মাদকদ্রব্য কেনাবেচায় শিশুকিশোর ও নারীদের যোগদান করার সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে। শিশুকিশোর, তরুণ-তরুণী কিংবা নারীরা মাদকাসক্ত ও পাচারমাধ্যমে পরিণত হওয়ার খবর উদ্বেগজনক। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, মাদক সম্ভাবনাময় যুবসমাজ ও শিশুকিশোরদের ক্রমশ ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। অস্ত্র, ডাকাতি, খুন, ছিনতাইসহ দেশে প্রতিনিয়ত যেসব অপরাধ ঘটে চলছে সে সবের বেশির ভাগের পেছনেই রয়েছে মাদক। পুলিশ বিভাগের নানা তথ্যেও জানা যায়, নারী ও শিশু-কিশোরদের একটি অংশ মাদক কেনাবেচায় জড়িয়ে পড়েছে। একইসঙ্গে শিশুকিশোররা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। অপরাজেয় বাংলাদেশ’র পথশিশু সংক্রান্ত তথ্যে দেখা যায়, পথশিশুদের প্রায় সবাই কোনো না কোনো মাদক সেবনে জড়িত। এসব শিশুকিশোর টানা মাদকাসক্তের কারণে ঘর ছেড়ে পার্কে, খামারে, রাস্তাঘাটে, রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ডে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। অপরাধ বিজ্ঞানীদের মতে, মাদকের ভয়াবহতায় নিষ্পাপ শৈশব-কৈশোর হিংস্র বাস্তবতার সম্মুখীন হচ্ছে। বিভিন্ন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বলছে, দেশে সংঘটিত মোট অপরাধের মধ্যে শতকরা আশি ভাগের সঙ্গেই মাদকের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। ধর্ষণ, ধর্ষণপরবর্তী হত্যা, খুন, হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি চালানো, ছিনতাইসহ এ ধরনের অধিকাংশ অপরাধের সঙ্গেই কোন না কোনভাবে মাদকের সংশ্লিষ্টতা থাকে। সর্বশেষ গত ৫ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী মাদকাসক্ত যুবক ভাসমান ছিনতাইকারী মজনু কর্তৃক ধর্ষিত হওয়ার ঘটনা ঘটে। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মজনু মাদকাসক্ত অবস্থায় ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটায় বলে স্বীকার করে। এমন ঘটনার পর আবারও মাদক আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়ায়।

এখন ফুটপাত থেকে স্কুল-কলেজ পর্যন্ত মাদকের থাবা বিস্তৃত হয়েছে। অপরাধবিজ্ঞানীদের মতে, শিশু-কিশোর ও নারী মাদকাসক্তরা নিষ্ঠুর আর নিয়ন্ত্রণহীন হয় বেশি। তাদের দ্বারা যে কোনো অপরাধমূলক কর্মকা- হতে পারে এটাই স্বাভাবিক। মনে রাখতে হবে, পিতা-মাতার আশ্রয়-প্রশ্রয় কিংবা খেয়াল না রাখায়, ভালোবাসা থেকে বিচ্ছিন্ন করায় সন্তানরা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। ফলে তারা স্বাভাবিক জীবনের বাইরে গিয়ে মাদকাসক্ত এমনকি যৌন আসক্ত হয়ে উঠে। তাদের বাঁচাতে জনসচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশে মাদকের বিস্তার রোধ করতে হলে মাদক পাচারের রুটগুলো অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সঙ্গে প্রয়োজনে নৌবাহিনী ও সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করে অভিযান চালাতে হবে। দেশের অভ্যন্তরে যারা মাদক বিক্রি করছে তাদেরও কঠোরভাবে দমন করতে হবে। একই সঙ্গে মাদকের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। অভিভাবক, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সমাজের সর্বস্তরে মাদকবিরোধী অবস্থানকে শক্তিশালী করতে হবে। মনে রাখেতে হবে, মাদক শিশুকিশোর, নারীসহ সব বয়েসীর জন্য ভয়ানক। বিশেষ করে শিশুকিশোর ও নারীদের এটা হিংস্র করে তোলে। এ কারণে নৈতিক শিক্ষা, ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পরিবারে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে, সন্তান ও শিক্ষার্থীরা মাদকসেবনের দিকে যাচ্ছে কিনা। তাদেরকে মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে জানাতে হবে।

মানুষের সবচেয়ে বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হল তার পরিবার, তাই মাদকমুক্ত হতে হলে পরিবারকে সচেতন হতে হবে। পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আইনশৃংখলাবাহিনীর সংস্থাসহ সব স্তরের লোকজনের সমন্বয়ে মাদকমুক্ত দেশ গড়তে না পারলে সুস্থ সমাজ গঠন কঠিন হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট