চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নারীনিগ্রহ রুখতে চাই নাগরিক পদক্ষেপ

অধ্যাপক রতন কুমার তুরী

১৮ জানুয়ারি, ২০২০ | ৩:২২ পূর্বাহ্ণ

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ঢাকার কুর্মিটোলা এলাকায় মুখ বেঁধে অজ্ঞান করে ধর্ষণ করে মজনু নামে এক সিরিয়াল ধর্ষক। এনিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলনে ফেটে পড়ে। তাদের সাথে যুক্ত হয় দেশের আপামর জনগণসহ বুদ্ধিজীবীরাও। অবশেষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতার পর ধর্ষক মজনু পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে মজনু স্বীকার করেছে যে সে ফুটপাতে বিচরণরত ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধি এবং ভবঘুরে মহিলাদের টার্গেট করে এমন অপকর্মগুলো করে। প্রকৃৃতপক্ষে ধর্ষণ বিষয়টি ঠিক তখনই বেশি ঘটে, যখন ধর্ষণকারী এমন ঘটনা করে সহজে পাড় পেয়ে যায়। আমাদের সমাজে কিছু দুষ্টচক্র সবসময় ছিলো এবং বর্তমানেও আছে। এদের সংখ্যা নিতান্তই কম হলেও এদের জন্যই সভ্যতা এবং সমাজ বার বার প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এমন অমানুষদের কাছে সমাজের কোনো মা-বোনই নিরাপদ নয়। দূর অতীতে এদেশে মেয়েদের কোনো স্বাধীনতা ছিলোনা। তারা ছিলো চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি। বাঙ্গালি সমাজ ছিলো অপেক্ষাকৃত রক্ষনশীল। শিক্ষা বলতে শুধু পুরুষদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো। মেয়েদের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে স্বনির্ভরভাবে জীবন যাপনের জন্য বেগম রোকেয়া তার লেখনি দিয়ে যুদ্ধ করে গেছেন। শুধুমাত্র বাঙালি মেয়েদের শিক্ষিত করতে বেগম রোকেয়া ‘অবরোধবাসিনী’ এবং ‘সুলতানাস ড্রিম’ এর মতো বই লিখে তাদের জাগাতে চেয়েছিলেন। সেই বেগম রোকেয়ার পথ ধরেই আজ বাঙালি নারিরা অনেক দূর পথ এগিয়ে গেছেন। বর্তমানে বাঙালি নারিরা সমাজে পুরুষদের মতো সমান অবদান রেখে চলেছেন। বলতে গেলে পুরো পৃথিবীতে আজ নারিদের জয়জয়কার। সেই ধারাবাহিকতা আজ বাংলাদেশেও নারিরা সমাজ এবং রাষ্ট্রের প্রতিটি জায়গায় তাদের কর্মক্ষেত্রে বিচরণ করছে। কর্মক্ষেত্রের সুবাদে বর্তমানে নারিদের অধিক রাত পর্যন্ত চাকরি

করে বাড়ি ফিরতে হয় আবার অনেক নারিদের কাজের প্রয়োজনে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়।

আমরা অনেক সময় মিডিয়ায় দেখি এমন চলতি পথে কিছু কুলাঙ্গার সুযোগ বুঝে একা কিংবা দলবদ্ধ হয়ে কোনো নারিকে ধর্ষন করেছে। খুব সম্ভবত এমন ঘটনা সমূহ ঘটে চললেও অনেক নারিই লজ্জা এবং সমাজের মানুষের ভয়ে তা বেশির ভাগই প্রকাশ করেনা। এমন প্রকাশ না করার বিষয়টা সবচেয়ে বেশি ঘটে সমাজের প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের ক্ষেত্রে তারা মনে করে এমন ঘটনা প্রকাশ হলে তারা মানুষের কাছে মুখ দেখাতে পারবেনা। অন্যদিকে ধর্ষণ বিষয়ক ঘটনা সমাজে টাকার বিনিময়ে দফারফা করার খবরও পাওয়া যায়। ফলে এ সমস্ত ধর্ষকরা সমাজে বুক ফুলিয়ে হাঁটার সুযোগ পায়। অনেক সময় ধর্ষন বিষয়ক মামলা আদালত পর্যন্ত গড়ালেও ধর্ষণের শিকার নারিদের এমন কিছু প্রমাণ আদালতে হাজির করতে বলা হয় যা আদৌ সম্ভব হয়না ফলে ভিকটিম ন্যায়বিচারতো পায়ই না বরং তাদের হয়রানি হতে হয়। এসব কারণে ধর্ষণের শিকার অনেক নারিই আদালতে যেতে চায় না। এ বিষয়ে নারি ও শিশু নির্যাতন বিশেষ আদালত থাকলেও অনেক ভূক্তভোগী নারি অর্থ এবং সঠিক নির্দেশনার অভাবে মামলাগুলো চালাতে পারেনা আর এই কারণে অনেক ধর্ষক জঘন্য অন্যায় করেও পার পেয়ে যায়। এবিষয়ে সমাজের সকল স্তরের মানুষকে সজাগ হতে হবে। ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটলেই তাদের ধর্ষিতার পাশে এগিয়ে আসতে হবে এবং আদালতে গিয়ে সাক্ষী দিতে হবে। অনেক সময় আমরা দেখতে পাই এমন মামলায় নারিরা স্বাক্ষী হিসেবে থাকলেও তারাও এগিয়ে আসেনা তারা ভয় পায়। প্রকৃতপক্ষে ধর্ষণের মতো ঘটনা রুখতে হলে প্রথমতঃ নারিদের সচেতন হতে হবে পাশাপাশি সমাজের সর্বস্তরের মানুষ নারিদের সম্মানের চোখে দেখতে হবে। ধর্ষক যেই হোক তাকে আইনের আওতায় এনে চরম শাস্তি দিতে হবে। ঘটনা ঘটার সাথে সাথেই যদি এসব ধর্ষকদের বিচার করা যায় তাহলে অন্য কেউ এমন কাজ করতে সাহস পাবেনা।

আইনশৃঙ্খলাবাহিনীদেরও এ বিষয়ে সর্বাগ্রে সহযোগিতা করতে হবে। তারা যদি আন্তরিকতার সাথে যথাযথ ভাবে ধর্ষন মামলা দ্রুত আদালতে তোলে এবং ধর্ষককে গ্রেফতার করে তাহলে এসমস্ত ধর্ষকদের বিচার হতে সময় ক্ষেপণ হবেনা। ধর্ষণ বিষয়ে আইন কঠোর করা বাঞ্ছনীয়। আইনের কঠোরতা না থাকলে ধর্ষক ভয় পাবেনা, সে একই কাজ আবার করবে। ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড হওয়া দরকার।

অধ্যাপক রতন কুমার তুরী কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক, মানবাধিকারকর্মী।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট