চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ঐতিহাসিক খন্দকের যুদ্ধ

ডা.মোহাম্মদ ওমর ফারুক

১৭ জানুয়ারি, ২০২০ | ৩:৪৬ পূর্বাহ্ণ

‘খন্দক যুদ্ধ’- যেটি ৫ম হিজরীতে সংঘটিত হয়। এটিকে আহযাব- এর যুদ্ধও বলা হয়। এ যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে সূরা আল্-আহ্যাব নাযিল হয়। এতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে (মানুষ), তোমরা যারা ঈমান এনেছো, তোমরা নিজেদের ওপর আল্লাহতায়ালার অনুগ্রহের কথা স্মরণ করো, যখন শক্র সৈন্য তোমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছিলো, অতপর আমি তাদের ওপর এক প্রচন্ড বায়ু প্রেরণ করেছি এবং (তাদের কাছে) আমি পাঠিয়েছি এমন সব সৈন্য, যাদের তোমরা কখনো দেখতে পাওনি; তোমরা যখন যা কিছু করছিলে- আল্লাহতায়ালা অবশ্যই তা দেখছিলেন, যখন তারা তোমাদের ওপর থেকে, তোমাদের নীচ থেকে তোমাদেরকে (হামলা করার জন্যে) আসছিলো, যখন (ভয়ে) তোমাদের চক্ষু বিস্ফোরিত হয়ে পড়েছিলো, প্রাণ হয়ে পড়েছিলো কন্ঠাগত এবং (আল্লাহর সাহায্য বিলম্ব দেখে) তোমরা আল্লাহতায়ালা সম্পর্কে নানা রকমের ধারণা করতে লাগলে!’।

হযরত সুফিয়ান (রাঃ) সম্মিলিত সামরিক জোট করেন ইসলামকে উৎখাত করার জন্য। আমরা কাফেলার সবাই দু’রাকাত দুখুলুল মসজিদ নামাজ পড়লাম, যেখানে ঐতিহাসিক খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে, যে যুদ্ধে সাহাবী সালমান র্ফাসির পরামর্শক্রমে মুসলমানগণ পরিখা খনন করেছিলেন কাফেরদের বিরুদ্ধে মদিনাকে সুরক্ষার জন্য। উক্ত যুদ্ধে এক পর্যায়ে প্রচন্ড মরুঝড় শুরু হয়, এতে কাফেরদের তাঁবু লন্ডভন্ড হয়ে যায়। এটাই কুরাইশদের বিরুদ্ধে শেষ যুদ্ধ, এরপরে আর কোন যুদ্ধ হয়নি। তখন প্রচন্ড শীতকাল ছিল। হযরত আনাস (রা) কর্তৃক বর্ণিত-তিনি বলেন, মুহাজির এবং আনছার মদিনার চারপাশে পরিখা খনন করার সময় পিঠে করে মাটি বহন করছিলেন এবং এ কবিতাটি আবৃত্তি করছিলেন, ‘আমরা যতদিন বেঁচে আছি ততদিন ইসলামের জন্য মুহাম্মদ (সা) এর হাতে কসম গ্রহণ করছি। আর নবী করিম (সা) এ কথা বলে তাদেরকে উত্তর দিচ্ছিলেন, ‘হে আল্লাহ ! পারলৌকিক কল্যাণ ছাড়া প্রকৃত কল্যাণ আর কিছুই নেই।’ সুতরাং তুমি আনছার ও মুহাজিরদেরকে অফুরন্ত কল্যাণ দান কর (সহিহ্ বোখারী- ২৬২৭)। অপরদিকে হযরত বারা (রা) কর্তৃক বর্ণিত: তিনি বলেন, পরিখা খননকালে আমি নবী করিম (সা) কে মাটি বহন করতে দেখেছি। মাটি লেগে তাঁর উদরের শুভ্রতা ঢাকা পড়েছিল। এ সময় তিনি বলছিলেন, হে মাবুদ! তোমার দয়া না হলে আমরা সৎপথ পেতাম না, ছদকাহ্ দিতাম না এবং নামাযও পড়তাম না। হে আল্লাহ! আমাদেরকে শান্তি ও স্থিরচিত্ততা প্রদান কর এবং যখন আমরা শক্রর মুকাবিলায় অবতীর্ণ হই, তখন আমাদেরকে দৃঢ়পদ করে দাও। প্রথম লোকগুলোই (মক্কাবাসী কাফের, যাদেরকে প্রথমেই ইসলামের দাওয়াত দেয়া হয়েছিল) আমাদেরকে অত্যাচার করতে তৎপর হয়েছে।

তারা যখনই ফেতনা সৃষ্টি করেছে, আমরা তা প্রত্যাখান করেছি-(সহিহ্ বোখারী- ২৬২৯)। খন্দকের যুদ্ধের স্থান অতিক্রম করে আমরা মসজিদে কেবলাতাইন পৌঁছি-যেটাকে দু’কেবলার মসজিদও বলা হয়। হোটেলের রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে আবার পবিত্র হারাম শরীফের দিকে যাত্রা-অদম্য এক যাত্রা, মন মানতে চায় না যেন। কিসের এক শিহরণ দোলা দেয় সারা শরীরময়। উচ্ছ্বাসভরা আবেগগুলো গুছিয়ে রাখি অতি সন্তর্পণে-আবার কি আর ফিরে আসবো এ নয়নের মদিনায়? ঘুরপাক খেতে থাকে অনেকগুলো প্রশ্ন।
রিয়াজুল জান্নাতে দু’রাকাত নামায পড়ার অদমনীয় ইচ্ছেটাকে আটকাতে পারেনি এ মন। যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে যাই। প্রচন্ড ভীড়ের মাঝে দু’রাকাত নামায পড়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচি। আমার রাসূল (সা) কে সালাম দিয়ে ৩৮ নম্বর গেইটের ভেতর বসে পড়ি। হিংগলার বাসিন্দা, সৌদি প্রবাসি মনছুর ভাই আসলেন-কুশল বিনিময়ের পর অব্যক্ত কথামালায় হারিয়ে গেলাম নিজেরই অজান্তে। আছর-ইফতার-মাগরিব নামায শেষে মদিনার হারাম শরীফের বিজ্ঞ আলেমগণের ইমামতিতে তারাবির নামায আদায় করলাম। সম্মানিত ইমাম সাহেবগণ যখন আল্লাহর কোরআন তেলওয়াত করছিলেন তখন কেন যেন মনে হচ্ছিল-আরশের উপর থেকে আমার রাব্বুল আ’লামিন কোরআন নাযিল করছেন।

পৃথিবীর সমস্ত কান্না এসে জমা হয় দু’চোখের রেটিনায়। গাল বেয়ে চোখের পানি পড়ে ভিজে যায় কাঁচাপাকা দাঁড়িগুলো। মহাবিশ্বের মহাবিস্ময় আল-কোরআন যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে আমায়-পৃথিবীর সমস্ত শান্তিময় সু-বাতাস লেপ্টে আছে এ কিতাবে। ছোট্ট মাশরুর সহ রাসূল (সা) এর রওজা পাক জিয়ারত শেষে পার্শ্ববর্তী তাইয়েবা মার্কেটে কেনাকাটা সারি।

ডা.মোহাম্মদ ওমর ফারুক সভাপতি, রাউজান ক্লাব, জুনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), জেনারেল হাসপাতাল, রাঙ্গামাটি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট