চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

দাঁড়াতে হবে শীতার্ত মানুষের পাশে

মাহমুদ আহমদ

১৪ জানুয়ারি, ২০২০ | ৩:৪৩ পূর্বাহ্ণ

গত কয়েকদিন থেকে আবারো দেশের বিভিন্নস্থানে শীতের তীব্রতা অনেক বেড়েছে। বর্তমান শৈত্যপ্রবাহ আর ঠা-ায় দেশের উত্তরাঞ্চলের নিম্ন আয়ের জনগণ অত্যন্ত কষ্টে দিনাতিপাত করছেন, সেই সাথে ডায়রিয়া, জ্বর, হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ ঠান্ডাজনিত রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। শীতকালে দেশের কোথাও শীত বেশি কম হতেই পারে, এতে কারো হাত নেই, এটি প্রাকৃতিক। তবে এক্ষেত্রে শীতার্তদের জন্য আমাদের অনেক কিছুই করণীয় আছে। আমরা পারি শীতার্তদের জন্য আমাদের সাহায্যের হাত প্রসারিত করতে।

আল্লাহপাক আমাদের দু’টো হক আদায় করার আদেশ দিয়েছেন, একটি হল আল্লাহর হক আর অপরটি হল বান্দার হক। আল্লাহপাক এটা কখনই পছন্দ করবেন না যে, একজন আরামে রাত্রিযাপন করবে আর তারই এক প্রতিবেশী ভাই কষ্টে নিপতিত থাকবে। বরং ইসলামে শিক্ষা হল তুমি যা নিজের জন্য পছন্দ কর তাই অন্যের জন্য পছন্দ কর। হজরত রসুল করিম (সা.) বলেছেন, ‘বান্দা যতক্ষণ তার ভাইকে সাহায্য করবে, আল্লাহ ততক্ষণ তাকে সাহায্য করতে থাকবেন’ (মুসলিম)। হজরত আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত অপর এক হাদিসে মহানবী (সা.) বলছেন, ‘তোমরা পৃথিবীবাসীর প্রতি দয়া কর। আকাশের মালিক আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়া করবেন’ (মুসান্নিফ আবি শায়বাহ)। হজরত উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই! আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন, যে তার বান্দাদের প্রতি দয়া করে’ (বোখারি ও মুসলিম)।
আমরা দেখতে পাই, প্রতি বছরই এ সময়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের গরীব, অসহায় মানুষ শীতের তীব্রতায় খুব কষ্ট করেন। যাদের কাছে শীতের মোকাবেলা করার মত তেমন কোনো বস্ত্র থাকে না, যার ফলে বিভিন্ন অসুখ-বিসুখেও তাদের ভুগতে হয়। এসব লোকদের সাহায্য করাই হলো বান্দার অধিকার আদায় করা আর এমনটা করাই ইসলামের শিক্ষা। আর এর মাধ্যমেই আল্লাহপাক বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হোন।

যারা আল্লাহর বান্দার কষ্টের সময় সহযোগিতা করে আল্লাহপাক তাকে তার বন্ধু বানিয়ে নেন। তাই আল্লাহকে লাভ করতে হলে অসহায়দের সাহায্য করা একটি বড় মাধ্যম। আমরা সহজেই আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি লাভ করতে পারি এসব অসহায় শীতার্ত মানুুষদের পাশে দাঁড়িয়ে।
এ জগতে কেউ যদি বস্ত্রহীন, ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্তকে আহারের ব্যবস্থা করে তাহলে আল্লাহপাক তাকে অসংখ্য নেয়ামতে ভূষিত করেন। যেভাবে হাদিসে বর্ণিত আছে, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দুনিয়াতে মানুষকে খাদ্য দান করেছে, সেদিন তাকে খাদ্য দান করা হবে। যে আল্লাহকে খুশি করার জন্য মানুষকে পানি পান করিয়েছে, তাকে সেদিন পানি পান করিয়ে তার পিপাসা দূর করা হবে। যে মানুষকে বস্ত্র দান করেছে, তাকে সেদিন বস্ত্র পরিধান করিয়ে তার লজ্জা নিবারণ করা হবে’ (আবু দাউদ)।
এই শীতে হাজার হাজার গরীব মানুষ অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছে, সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে ছোট ছোট শিশু ও বৃদ্ধদের। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সমাজ ও দেশের প্রতিটি সচেতন নাগরিকের দায়িত্ব অনেক বেড়ে যায়। শীতের এই দিনগুলোতে যেই যেই স্থানের জনগণ সবচেয়ে বেশি কষ্ট করছে আমাদের সবার দায়িত্ব হবে সামর্থ্য অনুযায়ী তাদেরকে সহযোগিতা করা। আমাদের সবার একটু সহযোগিতার ফলে একটি পরিবার, একটি শিশুর মুখে হাসি ফুটতে পারে। আমরা কী পারি না এই সব শীতার্তদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে? আমরা কী পারিনা তাদের দু:খের দিনের বন্ধু হতে? মানুষ হিসেবে কী আমাদের ওপর এই দায়ীত্ব বর্তায় না তাদের সাহায্য করা? সমাজে এমন মানুষও রয়েছেন যারা সব সময় অন্যের সাহায্যের জন্য নিবেদিত থাকে, চলুন না তাদের সাথে নিজেকেও সম্পৃক্ত করে নেই।
শীতার্তদের সাহায্যের জন্য দেশের বিত্তশালী, বিভিন্ন এনজিও, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ সাধারণ মানুষকে পাশে দাঁড়ানো উচিৎ। আসলে এই প্রচ- শীতে যারা বেশি কষ্ট করেন তারা নিতান্তই গ্রামের সহজ-সরল দরিদ্র মানুষ। আমরা যদি সবাই মিলে এদের পাশে গিয়ে দাঁড়াই তাহলে হয়তো তারা এই শীতটা কিছুটা আরামে অতিবাহিত করতে পারবে। অবুঝ শিশুদের মুখেও হাসি ফুটে উঠবে। এইসব লোকদের জন্য আমাদের অনেক কিছুই করার আছে, আমাদের সবার সম্মিলিত সহযোগিতার ফলে হাজারো মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে সহায়ক হতে পারে।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক মানুষকে স্বার্থপর ও কৃপণ হতে নিষেধ করেছেন। স্বার্থ ছাড়া কোনো কাজেই হাত দেব না বলে যারা প্রতিজ্ঞা করে, তাদের চিন্তা করে দেখা উচিত। মানুষ যদি বাস্তবিক মানুষকে ভালোবেসে থাকে তবে সবার ব্যথায় ব্যথিত হবে ও সবার দু:খে দু:খিত হবে এটাই সত্য। কারো শরীরের কোন অঙ্গ যদি আঘাত পায় বা দুর্বল হয়ে পড়ে তবে সে কী আনন্দ পায়? বরং কষ্ট পাওয়াটাই স্বাভাবিক। সমাজের এক অংশ ক্ষুধার্ত, ব্যাধিগ্রস্ত, বস্ত্রহীন হলে অপর অংশ তাদের সাহায্যার্থে প্রাণঢালা সাহায্য করবে। এটাই প্রতিটি ধর্মের শিক্ষা আর এর ফলেই সুষ্ঠু ও বলিষ্ঠ জাতি গড়ে উঠবে।

প্রত্যেহ সৃষ্টি সেবার কত সুযোগই না পাওয়া যায়, যেগুলো পালনের জন্য আল্লাহ শিক্ষা দিয়েছেন কিন্তু আমরা সে সুযোগের সদ্ব্যবহার করি না বরং অবহেলা করি, অবজ্ঞার চোখে দেখি। স্রষ্টার সৃষ্টিকে অবহেলা করে ¯্রষ্টাকে তুষ্ট করা যায় না। মানুষের দুঃখ ও ব্যথায় ব্যথিত হয়ে, তাকে মনে-প্রাণে অনুভব করে, তার প্রতিকার করার জন্য সর্বপ্রকার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়াই হচ্ছে ধর্মের শিক্ষা। প্রত্যেক ব্যক্তি যদি তার দায়িত্বের প্রতি সজাগ থাকে তবেই সৃষ্টি সেবার মহান এক সংঘ গড়ে উঠবে। অপরের প্রতি অনুকম্পা, সহানুভূতি, উদারতা ও দয়া প্রদর্শন করা আজ আমাদের দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে। দয়া হতে দানশিলতার সৃষ্টি হয়। দানশিলতা ও সেবা করা মানবচরিত্রের একটি বৈশিষ্ট্য আর নির্দয় ব্যক্তি পাষাণবৎ। অপরের অশ্রু দর্শনে যার হৃদয় বিগলিত হয় না, সে জনসেবার দাবি করতে পারে বটে, কিন্তু কার্যত: কোনো উপকারই করতে পারে না। দুঃখির দুঃখমোচন, বিপন্নকে উদ্ধার, শোকাতুরের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করা সৃষ্টি সেবার অন্তর্ভুক্ত। লোক দেখানো দয়া, দান, উপাসনাকে আল্লাহ পছন্দ করেন না। কর্তব্যানুসারে জনসেবা করতে হবে প্রকাশ্যে ও গোপনে। তবে এতে বিনয় অবলম্বনই শ্রেয়। সকল ধর্মই মানবসেবার কাজকে পুণ্য বলে আখ্যায়িত করেছে। সেবার উৎসাহ না থাকলে অন্ধ, খঞ্জ বধিররগণ করাল গ্রাসে নিপতিত হতো। মানবসেবায় মন উদার হয়। এতে আনন্দ লাভ করা যায়।

আসুন, আমরা সবাই সেইসব লোকদের পাশে যাই, যারা অপেক্ষায় বসে আছেন, হয়তো আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোনো এমন ফেরেশতাকে পাঠাবেন যিনি তাদের সাহায্য করবেন, তাদের গায়ে একটি কম্বল জড়িয়ে দিবেন। আমি কি একটু ভেবে দেখেছি, আমার সন্তানদের যেন শীতে সামান্য কষ্ট না হয় সে জন্য কতই না আয়োজন আর আমার পাশেই যে হাজারো মায়ের আদরের সন্তান শীতে কতই না কষ্ট করছে। আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে অসহায় এ শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর তৌফিক দান করুন, আমিন।

মাহমুদ আহমদ ইসলামী গবেষক ও কলাম লেখক সধংঁসড়হ৮৩@ুধযড়ড়.পড়স

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট