চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

পৌষের বিদায়লগ্নে হাড়কাঁপুনে শীত আসুন শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াই

১৩ জানুয়ারি, ২০২০ | ২:০২ পূর্বাহ্ণ

ঋতুচক্রের হিসেব অনুযায়ী এখন চলছে পৌষের বিদায়লগ্ন। অর্থাৎ শীতের ভরমৌসুমে প্রবেশকাল। এ সময়ে সারাদেশে জেঁকে বসতে শুরু করেছে শীত। পৌষের শেষপ্রান্তে এসে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে শীতের প্রকোপ বেড়ে চলেছে। ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ার দাপটে হাড় কাঁপানো শীতে কাঁপছে সাধারণ মানুষ। সারা দিন ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে চার দিক, সেইসঙ্গে বইছে হিম হাওয়া। চট্টগ্রামে শীত ও শীতের কুয়াসা কিছুটা কম হলেও সারা দেশেই সন্ধ্যার পর থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো কুয়াশাপাত হচ্ছে। ঘন কুয়াশার কারণে দিনের বেলায়ও হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহনগুলোকে চলাচল করতে হচ্ছে। শীতজনিত নানা রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বৃদ্ধ ও শিশুরা। কনকনে ঠা-া ও শীতজনিত রোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েকজনের মৃত্যুও হয়েছে। আবহাওয়া দপ্তর বলছে, এই শৈত্যপ্রবাহ আরও কয়েক দিন চলবে। এ অবস্থায় শীতের ছোবল থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষায় ত্বরিৎ পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই।
উল্লেখ্য, শীতমৌসুমের শুরুর দিকে দফায় দফায় বয়ে যায় শৈত্যপ্রবাহ। এরপর কিছুদিনের বিরতি ছিল। এখন আবার শুরু হয়েছে শীতের প্রকোপ। আবহাওয়া বিভাগ (বিএমডি) বলছে, এটা দু-একদিনে শৈত্যপ্রবাহে রূপ নিতে পারে। যা মাঘের শুরুতে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহে পরিণত হতে পারে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, শীতের অনুভূতি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বেশি ভূমিকা রাখছে শীতল বায়ুর প্রবাহ। অপরদিকে উচ্চবলয় পশ্চিমবঙ্গসহ বাংলাদেশের তৎসংলগ্ন পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এসব কারণে সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা হ্রাস পেয়েছে। এটা আরও অব্যাহত থাকতে পারে। তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি ঘনকুয়াশা এবং কনকনে হিমশীতল বাতাসের প্রবাহ বাড়িয়ে দিয়েছে শীতের তীব্রতা। আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে, এবারের শীতে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে কয়েকটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। ফলে শীত আর শীতজনিত রোগবালাই আরো বেশি কষ্ট ও প্রাণনাশের কারণ হয়ে উঠতে পারে। প্রসঙ্গত, তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলে। আর তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তাকে মাঝারি ও ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে গেলে তা তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। সেই হিসাবে দেশের কোথাও শৈত্যপ্রবাহ নেই। তবে দু-একদিনের মধ্যেই দেশে মৃদুু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়ে যেতে পারে।
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী গ্রামীণ জনপদগুলোতে হাড়কাঁপানো শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শৈত্যপ্রবাহে সাধারণত বিপর্যস্ত হয় দেশের খেটে খাওয়া মানুষের জীবন। ছিন্নমূল মানুষ, যারা রেল স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, ফুটপাতে সংসার পেতে বসবাস করেন, তারাই সবচেয়ে বেশি কষ্ট ভোগ করেন। অবস্থাপন্নরা শীত-কষ্ট তেমন অনুভব না করলেও দরিদ্রপাড়ার বাসিন্দারা হাড়ে হাড়ে শীতের তীব্রতা তথা শীত-যন্ত্রণা অনুভব করে। যে কোনো দুর্যোগ দৈবপাকে এই দুস্থ ও ছিন্নমূল মানুষরাই বিপাকে পড়েন বেশি। তাদের পক্ষে একদিকে শীতবস্ত্র ও লেপ-কম্বল কিনে শীত নিবারণ করা যেমন দুরূহ, অন্যদিকে পুষ্টিহীনতার কারণে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতাও তাদের কম। ফলে শীতজনিত বিভিন্ন রোগে তারাই আক্রান্ত হয় বেশি। তাদের গায়ে বিঁধে যায় কনকনে ঠা-া বাতাস। গরীব ও গরম কাপড়হীন এসব দুঃস্থ মানুষের যেন কষ্টের শেষ নেই। শীত যতোই তীব্র হয়, ততোই তাদের জীবন হয়ে পড়ে স্থবির। একে শীতের কষ্ট, তার ওপর নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানিসহ শীতজনিত রোগের প্রকোপ গরীব-অসহায়দের জীবনে জেঁকে বসে। গ্রাম-নগরে চারপাশে তাকালেই শীতার্ত অসহায় মানুষের দুর্ভোগ চোখে পড়ে। যদিও শহুরে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ার কারণে শীতবস্ত্র ক্রয় করে শীত নিবারণ তেমন কঠিন হচ্ছে না। তবে প্রত্যন্ত গ্রাম-গঞ্জের অবস্থা এখনো উদ্বেগজনক। এ অবস্থায় শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর কোনো বিকল্প থাকতে পারে না।
পর্যাপ্ত পরিমাণ গরম কাপড় সংগ্রহ করে তা সামর্থ্যহীনদের মধ্যে বিতরণের পাশাপাশি তারা যাতে চিকিৎসাসেবা পেতে বিড়ম্বনার শিকার না হয় তাও নিশ্চিত করা উচিত। দেশের ব্যাংক, বীমাসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বড় বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান তাদের সামাজিক দায়িত্ব হিসেবে শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কর্মসূচি নিলে মানুষ উপকৃত হবে। ওষুধকোম্পানি ও চিকিৎসকদের সংগঠনগুলোও বিভিন্ন স্থানে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প করে বাড়িয়ে দিতে পারে সহযোগিতার হাত। বিত্তবানদের যৎসামান্য ভালোবাসা ও সহানুভূতিই পারে শীতার্ত মানুষের হৃদয়ে উষ্ণতার পরশ বুলিয়ে দিতে। মানুষ তো মানুষের জন্যই। আমরা আশা করতে চাই, শীতার্ত মানুষদের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ার আগেই সরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে। তবে, সরকারের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অসহায় শীতার্ত মানুষের সাহায্যার্থে আমাদের সবার সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। আসুন সবাই নিজ নিজ সামর্থ্য নিয়ে শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াই।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট