চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

শীতার্তদের রক্ষায় সুচিন্তিত পদক্ষেপ চাই

আবু জাফর সিদ্দিকী

১৩ জানুয়ারি, ২০২০ | ২:০২ পূর্বাহ্ণ

কনকনে শীত, কুয়াশায় অন্ধকারাচ্ছন্ন। কেউ অট্টালিকায় আরামের ঘুমে বিভোর কেউ আবার রাস্তার পাশে, রেল স্টেশনে বা বাসস্ট্যান্ডে কোনো রকমে একটা গরম কাপড় নিয়ে রাত্রিযাপন করছে কেউ বা আবার গরম পোশাক না পেয়ে সারারাত আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। এটাই কিন্তু বাস্তব চিত্র। এ চিত্রকে বদলাতে পারি আমরাই। আসুন আমরা সাধ্যমতো শীতার্তদের পাশে দাঁড়াই। এটা আমাদের মানবিক দায়িত্ব। আমাদের দায়িত্ববোধই পারে বিশ্বকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে।

ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের প্রকোপে নিদারুণ কষ্ট ও দুঃসহ অবস্থায় পড়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের লাখ লাখ দুস্থ, নিঃস্ব, ছিন্নমূল, গরিব, দুঃখী, বস্ত্রহীন, শিশু, বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ। প্রচন্ড শীতে যানবাহন চলাচল, পণ্যদ্রব্য ও পত্রিকা সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ, তরিতরকারি আবাদ ইত্যাদি। অনেকেই ভুগছেন সর্দি, কাশি, জ্বর, পেটের পীড়া, আমাশয়, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়ায়। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের কষ্ট বেড়েছে বহুগুণে। শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজন যথাযথ চিকিৎসা, ওষুধপথ্য এবং সরকারি ও বেসরকারিভাবে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ। এজন্য জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমাজের বিত্তবানদের শীতার্ত বস্ত্রহীন মানুষের পাশে অবশ্যই দাঁড়ানো উচিত। এসব লোকের ব্যাপারে মহানবী (সা.) পরকালীন পুরস্কারপ্রাপ্তির কথা ঘোষণা করেছেন।

এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ঘোষণা এসেছে, ‘পূর্ব ও পশ্চিমদিকে তোমাদের মুখ ফেরানোর মধ্যে কোনো পুণ্য নেই; কিন্তু পুণ্য আছে আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতগণ, কিতাবগুলো এবং নবীগণের প্রতি ইমান আনলে এবং আল্লœাহর প্রেমে আত্মীয়-স্বজন, এতিম, মিসকিন, ভ্রমণকারী, সাহায্য প্রার্থীদের এবং দাসমুক্তির জন্য অর্থ প্রদান করলে, নামাজ প্রতিষ্ঠা করলে ও জাকাত প্রদান করলে এবং প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা পূর্ণ করলে, অর্থ সংকটে, দুঃখ-ক্লেশে ও সংগ্রাম-সংকটে ধৈর্যধারণ করলে। এরাই তারা যারা সত্যপরায়ণ এবং তারাই মুত্তাকি।’ -সূরা বাকারা : ১৭৭ মানবতার ধর্ম ইসলামে সবার প্রতি দয়া প্রদর্শন করতে বলা হয়েছে।
বলা হয়েছে, যার অন্তরে দয়ামায়া আছে, যে পরোপকারী, আল্লœাহ তাকে ভালোবাসেন। এ প্রসঙ্গে হযরত রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তোমরা ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও, রুগ্ন ব্যক্তির সেবা করো এবং বন্দিকে মুক্ত করো অথবা ঋণের দায়ে আবদ্ধ ব্যক্তিকে ঋণমুক্ত করো।’ -সহিহ বোখারি হাড়কাঁপানো শীতে যে বিপুল জনগোষ্ঠী বর্ণনাতীত দুঃখ-কষ্টে দিন যাপন করছে তাদের পাশে দাঁড়ানো ধর্মপ্রাণ মানুষের নৈতিক দায়িত্ব। এ বিষয়ে হযরত রাসূলে কারিম (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব একটি মুসিবত দূর করবে, আল্লœাহ কিয়ামতের দিন তার মুসিবতগুলো দূর করে দেবেন।

আর যে ব্যক্তি কোনো অভাবী মানুষকে সচ্ছল করে দেবে, আল্লœাহ তাকে ইহকাল ও পরকালে সচ্ছল করে দেবেন এবং আল্লœাহ বান্দার সাহায্য করবেন যদি বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্য করে।’-সহিহ মুসলিম
ধর্মীয় এবং মানবিক উভয় দিক মানুষ এবং মানবতার কথা বলে। যে কোনো বিপদে মানুষের পাশে থাকার কথা বলে। আমরা সবাই যার যার জায়গা থেকে যতটুকু সম্ভব মানবতার পাশে দাঁড়ালে কোনো মানুষ পথে-ঘাটে আর্তনাদ করবে না। পৃথিবীটা হবে সুখময়, শান্তিময়। জয় হোক মানুষের, জয় হোক মানবতার।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট