চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ছে প্রতিকারে দ্রুত ব্যবস্থা নিন

১১ জানুয়ারি, ২০২০ | ৩:১২ পূর্বাহ্ণ

নারীর প্রতি সহিংসতা আজ দৃষ্টিকটুভাবেই দৃশ্যমান। প্রতিনিয়তই উন্মত্ত পাশবিকতার নির্মম যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে নারী। প্রতিদিনই দেশব্যাপী একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটে চলেছে। এক এলাকায় ধর্ষণের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গণমাধ্যমে আসছে নতুন আরেক ধর্ষণের খবর। এমন নির্মম খবরের যেন শেষ নেই। দিনকয়েক আগে রাজধানীর কুর্মিটোলায় পাশবিক নির্যাতনের শিকার হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক ছাত্রী। এক মাদকাসক্তই তাকে ধর্ষণ করে হত্যার চেষ্টা চালায় বলে গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ। বুধবার ভোরে গাজীপুর থেকে ধর্ষণকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এভাবে প্রতিদিনই ঘটছে নারীর ওপর পাশবিক নির্যাতনের ঘটনা। কোনটি গণমাধ্যম পর্যন্ত আসে, কোনটি চাপা পড়ে যায় নানা কারণে। অপরাধীদের ভয়ে, লোকলজ্জায়, সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণœ হওয়া এবং কন্যার ভবিষ্যৎ চিন্তায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ধর্ষণের ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়া হয়। ফলে গণমাধ্যম পর্যন্ত সে সব খবর আসে না। এমনকি থানা-পুলিশ পর্যন্ত সে সব সংবাদ পৌঁছে না। যার কারণে বেশির ভাগ ধর্ষণ-ঘটনাই সাধারণ মানুষের জানার বাইরে থেকে যায়। আইনের কঠোর প্রয়োগ না হওয়ার পাশাপাশি মাদকের বিস্তার এবং ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ থেকে চ্যুতির কারণেই যে এসব ঘৃণিত ও চরম পাশবিক অপকর্ম হচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সন্দেহ নেই, এ ব্যাপারে এখনই প্রতিষেধক-উদ্যোগ না নিলে আগামিতে তা নিয়ন্ত্রণহীন পর্যায়ে চলে যাবে।
বিভিন্ন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বলছে, দেশে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে। মহিলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী গত বছর মোট ৪,৬২২ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের শিকার হয়েছে এক হাজার ৭০৩ জন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৭৭ জনকে। ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ২৪৫ জনের সঙ্গে। গত এক বছরে সংঘটিত ধর্ষণের ঘটনা ২০১৭ ও ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের চেয়ে বেশি। সংগঠনটির তথ্য অনুযায়ী, গত বছর এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে ২৪ জন; অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার হয়েছে ৫১ জন; অপহরণের শিকার হয়েছে ১৪৭ জন; অপহরণের চেষ্টা করা হয়েছে ১১ জনকে; ১৭ জন নারী ও শিশুকে পাচার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে সাতজনকে যৌনপল্লীতে বিক্রি করা হয়। একই সময়ে বিভিন্ন কারণে ৬৩২ জন নারী ও কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে; উত্ত্যক্ত করা হয়েছে ১০৪ জনকে, এ কারণে আত্মহত্যা করেছে ১৭ জন। গত বছর নির্যাতনের কারণে ২৬৪ জন আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে; ফতোয়ার শিকার হয়েছে ২৪ জন। অতি সম্প্রতি ঢাবি ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হওয়ার পাশাপাশি রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে পৌর কাউন্সিলরের বাড়িতে স্কুলছাত্রীকে ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে সাত বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ এবং ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে এক কিশোরী ও ঢাকার সাভারে এক গৃহবধূকে ধর্ষণচেষ্টার খবরও এসেছে গণমাধ্যমে। নানা গবেষণা রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ধর্ষণের বেশির ভাগ ঘটনাই প্রকাশ্যে আসে না, অভিযোগ দায়ের হয় না, পুলিশের খাতায় নথিভুক্ত হয় না। নারী ও শিশু ধর্ষণ ঘটনায় প্রায় ক্ষেত্রেই উভয় পক্ষের লোকজন দিয়ে মীমাংসা করিয়ে নেয়া হয়। কখনও কখনও ধর্ষকের সঙ্গে ধর্ষিতাকে বিয়ে দেয়া হয়। ফলে এসব নির্যাতনের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়তে থাকে। এটি কোনো মতেই সভ্য ও সুস্থ সমাজের লক্ষণ হতে পারে না।
আমরা মনে করি, যৌনসন্ত্রাসের ভয়াবহ চিত্রের অবসানে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই। ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংস অপরাধের রাশ টেনে ধরার জন্য প্রথম কর্তব্য হচ্ছে এসব অপরাধের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগে গতি সঞ্চার করা। দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের মধ্য দিয়ে সমাজে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু তা যদি না হয় বা উল্টোটা হয়, তখন সমাজ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যায়। অপরাধীরা তখন বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তাই অপরাধমুক্ত করতে আইনের নিরপেক্ষ ও কঠোর প্রয়োগের বিকল্প নেই। দ্রুততর করতে হবে বিচারের কাজও। উচ্চআদালতের রায় অনুযায়ী ধর্ষণজনিত অপরাধের বিচার ছয় মাসের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। কিন্তু নানা কারণে তা হচ্ছে না। এতে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। বিষয়টি আমলে নিতে হবে। আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি সমাজ মানসেও পরিবর্তন আনতে হবে। ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংস আচরণের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ থাকতে হবে। সবাই যদি সতর্ক ও সচেতন থাকে, তাহলে ধর্ষণের হার নিশ্চয়ই কমে আসবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট