চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

এড. মোঃ সাইফুদ্দীন খালেদ

১১ জানুয়ারি, ২০২০ | ৩:১২ পূর্বাহ্ণ

একুশ শতকে পদার্পণ করে বর্তমান বিশ্ব যে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পালাবদলে অংশ নিচ্ছে নারী সেখানে এক অপরিহার্য অংশীদার, জীবন যুদ্ধেও অন্যতম শরীক ও সাথী। বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কুসংস্কার কাটিয়ে নারীরা এগিয়ে আসছে মানুষের ভূমিকায়, আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে। কিন্তু তাদের অগ্রযাত্রায় যৌন নিপীড়ন, ইভটিজিং ও ধর্ষণ বিশাল প্রতিবন্ধকতার ভূমিকা পালন করছে যা নারীশিক্ষা ও তাদের জীবনযাত্রায় প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। নারীনির্যাতনের সংখ্যা দ্রুত হারে যেন বেড়ে যাচ্ছে।

সভ্যতার এই চরম উৎকর্ষতায় এসে বাংলাদেশের মত একটি উন্নয়নশীল দেশের নারীরা প্রতিদিনই নির্যাতিত হচ্ছে। সাধারণত আমাদের গণতান্ত্রিক রাষ্টে প্রত্যেক নারী-পুরুষের স্বাধীনভাবে চলা ফেরা করা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। নারীশিক্ষার বিষয়টি আমাদের সামাজিক অগ্রগতি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে অপরিহার্য বিষয় হিসেবে জড়িত। আধুনিক সমাজে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলেরই মৌলিক অধিকার সমান ও অভিন্ন। এককালে মাতৃতান্ত্রিক সামাজে নারীরা ছিল প্রধান। পরবর্তীকালে সমাজে পুরুষের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হলে নারী হয়ে পড়ে অন্তপুরবাসী। ‘ইভটিজিং এর শিকার বা ধর্ষণের শিকার’ শিরোনামে সংবাদগুলো বড়ই নির্মম। এ অমানবিক বিষয়টি মানুষকে অবমূল্যায়ন করছে। বাড়ছে সামাজিক সমস্যা ও সমাজজীবনে অনাকাক্সিক্ষত দুঃখ-দুর্দশা। আবার কখনো শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষা গ্রহণে যাওয়া ছাত্রী ধর্ষিতা হয়ে, যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে ফিরে আসছে। অথচ এদের কাছ থেকে পরিবার যেমন অনেক কিছু আশা করে তেমনি জাতিও অনেক কিছু আশা করে থাকে। কিন্তু সেই স্বপ্নকে চিরতরে ধ্বংস করে দিচ্ছে। পারিবারিক শিক্ষার অভাব, আইনের সঠিক প্রয়োগ না করা, সর্বোপরি প্রত্যেক ধর্মের নিজ নিজ ধর্মীয় অনুশাসনগুলো সঠিকভাবে পালন না করার জন্য এ ধরণের সামাজিক অবক্ষয় ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যথার্থ উদ্দেশ্য থেকে মানবমন বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে অবক্ষয়ের সৃষ্টি হচ্ছে। নৈতিক মূল্যবোধ ধুলোয় লুটোপুটি খাচ্ছে। এগুলোর জন্য দায়ী আমাদের যুবসমাজের সঠিক মনুষ্যত্ববোধের অভাব। যখন তাদের চরিত্র থেকে মহৎ গুণ বিদূরিত হয়ে অন্যায় অনাচার আশ্রয় নেয়। জীবনের কোন মহৎ লক্ষ্য থাকে না তখন এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। দেশে আইন আছে, সমাজে ঘৃণাও আছে। তবুও দুষ্ট ক্ষতের মত এই বিষয়টি সমাজজীবনে নিরাময়ের অযোগ্য হয়ে আছে। কত নিরপরাধ কিশোরী-তরুণীর জীবন যে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই। আজ আমাদের সমাজটা অবক্ষয়ে নিমজ্জিত হতে যাচ্ছে। আইনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ-েরও বিধান রয়েছে। প্রয়োজনে মহানগর পুলিশ অধ্যাদেশকে সংশোধন ও আধুনিকায়ন করে যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি রোধে মহামান্য হাইকোর্টের রায়ের দিক-নির্দেশনার অনুকরণে আইন প্রণয়ন করা।

এসব বন্ধে সামাজিক আন্দোলন বা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন ও আধুনিকায়ন করে সঠিক ও যথাযথভাবে প্রয়োগ নিশ্চিত করা। বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি, সামাজিক সংগঠন, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও পাড়ায় পাড়ায় মহল্লায় কমিটি গঠন করে তাদের পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের যৌথ উদ্যোগে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে বিশ্বের মেধা, দক্ষতা, প্রতিভার অর্ধেক ভান্ডার সঞ্চিত রয়েছে নারীর কাছে। সামাজিক নিরাপত্তার অভাব তাদের শিক্ষার পথে যেন বাধা না হয়। নারীসমাজ যাতে শিক্ষার আলোতে উদ্ভাসিত হতে পারে সে লক্ষে প্রয়োজন প্রচলিত ধারার পাশাপাশি বিশেষ ধরণের শিক্ষাপরিকল্পনা। সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কোন নারী কোন শিশু যেন ধর্ষণের শিকার না হয়। স্কুল-গামী ছাত্রী যেন কোনোভাবে নির্যাতনের শিকার না হয়। বাস এর ভিতরে বাসের নাম্বারসহ সিসি ক্যামেরা দেওয়া থাকা দরকার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের নির্বিঘেœ যাতায়াতের উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ছাত্রীরা যাতে নির্বিঘেœ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করতে পারে সেজন্য শুধু তাদের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা থাকতে হবে। পাশাপাশি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা নিশ্চিত করতে হবে।

অ্যাডভোকেট মোঃ সাইফুদ্দীন খালেদ
আইনজীবী, বাংলাদশ সুপ্রীম কোর্ট।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট