চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

যথার্থই জনগণের বন্ধু হয়ে উঠুক পুলিশ

৯ জানুয়ারি, ২০২০ | ৪:৩৭ পূর্বাহ্ণ

‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, পুলিশ হবে জনতার’ মূল প্রতিপাদ্য ধারণ করে প্রতিবারের ন্যায় এবারও বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় ৫ জানুয়ারি থেকে পালিত হচ্ছে পুলিশ সপ্তাহ। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রদত্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের জনবান্ধব হিসেবে গড়ে ওঠার আহ্বান জানিয়ে যেসব কথা বলেছেন, তা সময়ের প্রেক্ষাপটে খুবই প্রণিধানযোগ্য। তিনি যথার্থই বলেছেন, পুলিশবাহিনী জনমানুষের আস্থা ও বিশ^াস অর্জন করতে পারলে যে কোনো ধরনের অপরাধ দমন করা সহজ হবে। বস্তুত পুলিশ যদি সবসময় আইনের রক্ষকের ভূমিকা পালন করে, তাহলেই কেবল এ আস্থা অর্জন করা সম্ভব।
স্বাধীনতাযুদ্ধে পুলিশের অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। স্বাধীনতা লাভের পর দেশ গড়ার কাজেও তাদের অবদান অতুলনীয়। বিভিন্ন সময়ে পুলিশবাহিনী জীবনবাজী রেখে দেশের মানুষ ও জাতীয় সম্পদ রক্ষা করেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং সমাজ থেকে অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে দায়িত্ব পালন করার কথা থাকলেও অনেক সময় কিছু পুলিশসদস্য জড়িয়ে পড়ে নানা অপরাধমূলক কর্মকা-ে। তাদের আচার-ব্যবহার ও কার্যকলাপের কারণে পুলিশ হয়ে পড়ছে জনবিচ্ছিন্ন। এতে পুলিশের ভাবমূর্তিতে পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। কমে যাচ্ছে পুলিশের ওপর জনগণের আস্থাও। পুলিশবাহিনীর সব সদস্যের মধ্যে জনগণের ও রাষ্ট্রের সেবকের মানসিকতা থাকলে এমনটি হতো না। যারা শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকা-ে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ থাকলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের আদলে জনবান্ধব পুলিশবাহিনী গড়ার পথ মসৃণ হবে নিশ্চয়ই।
যদি সব পুলিশসদস্যই সঠিকভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন এবং তাদের ওপর যদি কোনো ধরনের রাজনৈতিক বিধিনিষেধ না থাকে, তাহলে সমাজ দ্রুতই অপরাধমুক্ত হবে, সন্দেহ নেই। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, পুলিশ সবসময় স্বাধীনভাবে অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী নিজেই পুলিশবাহিনীকে দায়িত্ব পালনে স্বাধীন দেখতে চাইলেও দলের বিভিন্ন নেতাকর্মী পুলিশকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে চান। চাকরি যাওয়ার ভয়ে পুলিশরাও তেমন উচ্চবাচ্য করেন না। আবার পুলিশবাহিনীর মধ্যে লুকিয়ে আছে ‘সর্ষের ভূত’। একটি অংশ নিজেদের আখের ঘুচাতে নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও সমাজ থেকে অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে দায়িত্ব পালন করার কথা থাকলেও তারা জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধমূলক কর্মকা-ে। চুরি-ডাকাতি, চাঁদাবাজি, মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানির ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়, গ্রেপ্তারবাণিজ্য এবং ছিনতাই ঘটনাসহ নানা অপকর্মে এরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষে জড়িয়ে পড়েন। তারা সাধারণ মানুষকে রক্ষার পরিবর্তে নানা হয়রানির মাধ্যমে জীবন অতিষ্ঠ করে তোলেন। এরা রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের স্বার্থের হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এদের দ্বারাই ক্ষুণœ হয়েছে এবং হচ্ছে পুলিশবাহিনীর ভাবমূর্তি। এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে সংবাদমাধ্যমে বহু খবর প্রকাশিত হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে অনেকের শাস্তিও হয়েছে। কিন্তু এখনও পুলিশবাহিনীতে শতভাগ সৎ ও যোগ্য লোকদের সমাবেশ ঘটেনি। নিশ্চিত করা যায়নি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। ফলে জঙ্গি দমনসহ নানা কাজে সাফল্যের পরও পুলিশকে সত্যিকার অর্থে ‘জনবান্ধব’ বলা যাচ্ছে না। রক্ষক যদি ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, তাহলে মানুষ যাবে কোথায়?
বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে এগিয়ে যাচ্ছে। আগামি বছরের মধ্যে পুরোপুরি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে সামিল হওয়ার লক্ষ আছে। এই লক্ষ পূরণে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখাতে হবে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সমঝোতা ও পুলিশবাহিনীকে প্রকৃতই জনবান্ধব করার বিকল্প নেই। যেহেতু জনগণের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্ব মুখ্যত পুলিশ বাহিনীর, সেহেতু এই বাহিনীতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী সৎ, যোগ্য ও দক্ষ লোকদের নিয়ে আসতে হবে। কোনো অপরাধীর ঠাঁই যাতে পুলিশে না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে পুলিশবাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত থেকে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। যদি দেশ ও জনস্বার্থ বিবেচনায় তা-ই করা হয়, তাহলে পুলিশ জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করবে। মানুষ মনে করবে হ্যাঁ, পুলিশ আমাকে সাহায্য করবে, আমার পাশে আছে এবং থাকবে, আমার একটা ভরসার স্থান আছে। সেই জায়গাটা অর্জন করতে হবে, সেই বিশ্বাসটা গড়তে হবে। প্রকৃত অর্থে দেশের পুলিশবাহিনী নিরপেক্ষভাবে আইনের রক্ষকের ভূমিকা পালন করে, দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালনই যদি হয় পুলিশের ব্রত, যদি সততা, নৈতিক মূল্যবোধ এবং আইনই যদি হয় পেশাগত ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনের পথনির্দেশক, তাহলে তারা সত্যিই জনগণের বন্ধু হয়ে উঠবে। বাংলাদেশকে প্রকৃতই শহীদদের স্বপ্নের আদলে গড়ে তুলতে এর বিকল্প নেই।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট