চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

টানা তৃতীয় মেয়াদের সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তি নজর বাড়–ক গণতন্ত্র ও সুশাসনে

৮ জানুয়ারি, ২০২০ | ২:১৯ পূর্বাহ্ণ

টানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয় পেয়ে গত বছরের ৭ জানুয়ারি সরকার গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ। নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত প্রতিশ্রুতি পূরণে এই এক বছরে অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে সরকার। টানা ১১ বছরে বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বাধীন সরকার বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এখন উন্নয়নের মহাসড়ক ধরেই শুধু হাঁটছে না বাংলাদেশ, পরিবেশ সুরক্ষাসহ নানা ক্ষেত্রে নেতৃত্বও দিচ্ছে। ২০০৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ আজ মানবউন্নয়নসহ সব সূচকে বিষ্ময়কর অগ্রগতি, সাফল্য অর্জন করেছে। স্বাধীনতার পর যারা বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আখ্যা দিয়েছিল, আজ তারাই একবাক্যে স্বীকার করছে, ‘বাংলাদেশ উন্নয়নের বিষ্ময়’। সারাবিশ্বের কাছে বাংলাদেশ আজ দ্রুত গতিতে দারিদ্র্য বিমোচনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, উন্নয়নের রোল মডেল। অতীতের মতো সরকারের গত এক বছরেও ব্যাপক সাফল্য এসেছে। আন্তর্জাতিক পরিম-লেও বেড়েছে সরকার ও দেশের ভাবমূর্তি। তবে গণতন্ত্র ও সুশাসনে জনকাক্সিক্ষত অগ্রগতি হয়নি।

রেকর্ডসংখ্যক রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় নির্বাচনে তিন-চতুর্থাংশ আসনে বিজয়ী হওয়ার পর তারুণ্যনির্ভর চমকের সরকার গঠন করেছিলেন টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেই তিনি বলেছিলেন বাংলাদেশকে সবদিক দিয়েই সমৃদ্ধ ও বিশ^সেরা দেশে পরিণত করবেন তিনি। সে লক্ষে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী বেশকিছু পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে। সেসবের সুচারু বাস্তবায়নও শুরু হয়ে গেছে। গত এক দশকের মতোই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থেকেছে। ফলে দ্রুত অগ্রসরমাণ অর্থনীতি হিসেবে বাংলাদেশের নাম সারাবিশ্বেই আলোচনায় ছিল। মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস ম্যাগাজিন বলছে, চলতি বছর এশিয়ায় প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থাকবে বাংলাদেশ। চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ এবং বৈশ্বিক আমদানি-রফতানি মন্দায় বিশ্বঅর্থনীতি যখন ধুঁকছে, ঠিক তখনই বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে এ ধরনের মন্তব্য খুবই তাৎপর্যবহ বলতে হবে। ফোর্বস’র মতে, ২০২০ খ্রিস্টাব্দে বৈশ্বিক মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির ৫০ শতাংশ এশিয়া থেকে আসবে। এসময়ে এশিয়ায় জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে সাড়ে ৫ শতাংশ। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হবে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম ও তাজিকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। প্রবৃদ্ধির হারে চলতি বছর এশিয়ায় সবার ওপর থাকতে পারে বাংলাদেশ। প্রসঙ্গত, ২০১১ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি প্রত্যেক বছর কমপক্ষে ৬ শতাংশ ছিল। ব্যবসা সহজ হওয়ায় বাংলাদেশে গতবছরের প্রথমার্ধে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ সাড়ে ১৯ শতাংশ বেড়ে এক দশমিক ৭ বিলিয়নে পৌঁছেছে। মার্কিন এই সাময়িকী বলছে, স্বল্প মজুরির টেক্সটাইল খাত, তৈরি পোশাক খাত ও জুতা শিল্পে বাড়তে থাকা বিদেশী বিনিয়োগের কারণে ২০২০ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের হার ৮ শতাংশ হবে। এটি আশা জাগানিয়া খবর নিশ্চয়ই।

সরকারের প্রথম বছরে শিল্পায়ন, শিক্ষা, বিদ্যুৎ, সড়ক, রেলপথ ও বিমান পথে যোগাযোগের অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটেছে। নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্যবিমোচন, খাদ্যনিরাপত্তা অর্জনে নিশ্চয়তা, জ্বালানি ক্ষেত্রে উন্নয়নের ঘোষণা বাস্তবায়নের পথে। বিগত বছরে পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেলসহ প্রায় এক ডজন অবকাঠামোগত মেগা প্রকল্পে অগ্রগতি হয়েছে চোখে পড়ার মতো। বিমানের বহরে বোয়িংয়ের দুটি উড়োজাহাজ যুক্ত হয়েছে। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠায়ও সরকারপ্রধানের যথেষ্ট আন্তরিকতা ছিল। ক্যাসিনোকা–চাঁদাবাজির সঙ্গে যুক্ত বেশ কয়েকজন যুবলীগ, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকে সংগঠনের পদ থেকে অব্যাহতি এবং শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজন দুর্নীতিবাজকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় সরকারের পাশাপাশি দলেরও ইমেজ বেড়েছে। তবে তা আকস্মিক থমকে যাওয়ায় লক্ষ পূরণে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। জনমনেও নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের হার সন্তোষজনক হলেও গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মানবাধিকারের মতো ইস্যুতে সরকারের ব্যর্থতা রয়েছে ব্যাপক। গেল বছর গুমের অভিযোগের সংখ্যা তেমন ছিল না, কিন্তু বছরজুড়ে সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতিও ‘সন্তোষজনক’ ছিল না। মানবাধিকার, আইনের শাসন ও জবাবদিহিতা নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা প্রশ্ন আছে। তবে দক্ষ, সেবামূলক ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গড়ে তোলার উদ্যোগ অনেক দূর এগিয়েছে। জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গড়ে তোলার অঙ্গীকার পুরোপুরি পূরণ না হলেও এ ক্ষেত্রে সরকারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। বাংলাদেশ আজ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের পথ ধরেই এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করেই তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা দেশকে নিয়ে যাচ্ছেন উন্নয়নের মহাসোপানে। আশা করা যায় আগামী চার বছরে দেশকে আরও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে সক্ষম হবেন তিনি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট