চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ফারহানা নওশিন তিতলী চাই শিক্ষাবান্ধব শিক্ষাঙ্গন

৭ জানুয়ারি, ২০২০ | ২:০৬ পূর্বাহ্ণ

নতুন বছরে নোংরা ছাত্র রাজনীতি মুক্ত শিক্ষাবান্ধব শিক্ষাঙ্গন চাই। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী আসে মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে। এই শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে পরিবার বা তাদের ব্যক্তিগত নানা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাকে কেন্দ্র করে। কিন্তু ক্যাম্পাসে আসার পর যেখানে তারা জ্ঞানচর্চা করবে সেখানে তার ঠিক উল্টোটা দেখা যায়। বিশেষ করে ছাত্রদের এই বিভ্রান্তিগুলোতে পড়তে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে শুরু করে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার কর্তৃত্বে থাকে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন।

সেক্ষেত্রে নিরুপায় মধ্যবিত্ত পরিবারের ছাত্রগুলোকে বাধ্য হয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশ নিতে হয়। রাজনীতির চর্চা যদি আজ সঠিক ভাবে এগিয়ে যেতো তাহলে বর্তমান দেশ বা শিক্ষাঙ্গন এমন বিভ্রান্তিতে পড়তো না। শিক্ষাঙ্গনে আজ যেখানেই অরাজকতার পেছনে মূল হোতা ছাত্র রাজনীতি। আমি ব্যক্তিগতভাবে আমার ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল ছাড়া কোন মহৎ কাজ করতে দেখিনি। আমি দেখেছি তাদের অস্থিতিশীলতার কারণে অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীকে বিভ্রান্তিতে পড়তে। কল্যাণের অজুহাতে যে ছাত্র সংগঠন খুন করতে কুণ্ঠাবোধ করেনা সেই সংগঠনের কি আদৌ কোন প্রয়োজন আছে? ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনগুলো একই ধাঁচের রাজনীতি চর্চা করে। বিএনপি-জামায়াত জোট যখন ক্ষমতায় ছিল তখন ছাত্রদল ও ছাত্র শিবিরের দৌরাত্ম ছিল, বর্তমানে ছাত্রলীগের। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের তথ্যানুসারে, গত ১০ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে লাশ হয়েছেন ২৪ জন শিক্ষার্থী। এই ২৪ জনের মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ জন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ জন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ জন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ জন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ জন, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ জন। এছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও ৩ হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেছে। এসব হত্যাকা-ের ১৭টি ঘটেছে ছাত্রলীগের আভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে! লেজুড়ভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের আধিপত্য বিস্তার, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির কারণে মূলত এসব হত্যাকা- ঘটেছে।২০০৯ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের একাংশের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আসাদ ওরফে রাজীবকে হত্যা করে লাশ বহুতল ভবন থেকে ফেলে দেওয়া হয়। ২০১০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কর্মী নাসরুল্লাহ নাসিমকে নিজ সংগঠনের কর্মীরাই মারধর করে বহুতল ভবন থেকে ছুড়ে ফেলে হত্যা করেন। ২০১০ সালে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী আবুবকর সিদ্দিক। একই বছর ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে মারা যান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ। ২০১০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারির রাতে চট্টগ্রামের ষোল শহর রেলস্টেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মহিউদ্দিন কায়সারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। একই বছরের ১২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবিরের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে শাহ আমানত হল ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মামুন হোসেন নিহত হন।

২০১০ সালের ২৮ মার্চ রাতে শাটল ট্রেনে করে চট্টগ্রাম শহর হতে ক্যাম্পাসে ফেরার পথে চবি মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র হারুন অর রশীদকে গলাকেটে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। ২০১২সালে চাপাতির কোপে প্রাণ হারান পুরান ঢাকার দরজি বিশ্বজিৎ দাস। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। একজন ছাত্র হয়ে আরেকজন ছাত্রকে খুন করার এখতিয়ার কি কারো আছে যারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবী আদায়ে পাশে থাকবে এমন ছাত্র রাজনীতি চাই। যে ছাত্র সংগঠন সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িত, টেন্ডার বাজিতে জড়িত এমন ছাত্রসংগঠন কাম্য নয়। দেহবল যখন কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে যথেষ্ট নয়, তখন মুক্ত কলম হোক অন্যায়ের বিরুদ্ধে হাতিয়ার। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় হোক নোংরা ছাত্র রাজনীতি মুক্ত।

শিক্ষাঙ্গন হবে মুক্ত জ্ঞান আহরণের স্বাধীনস্থান। যেখানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করাসহ বিভিন্ন ধরণের গবেষণামূলক ও সামাজিক কাজকর্ম করা হয়ে থাকে। সুতরাং মনের বিরুদ্ধে নয়, শিক্ষাঙ্গন হোক মনের ভাব বা চেতনাকে বহিঃপ্রকাশের অন্তঃস্থল।
বিশ্ববিদ্যালয় অর্থাৎ উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে গবেষণা। গবেষণার জন্য একেক জনের ভিন্ন রকম চিন্তা, চেতনা থাকাটাই স্বাভাবিক। সবার চিন্তা এক নয়। যেখানে চিন্তা ভিন্ন সেখানে মতাদর্শ ভিন্ন হওয়াটাই স্বাভাবিক। এই স্বাধীনতা টুকু না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্ত জ্ঞান চর্চা বা আহরণে বাঁধাগ্রস্ত হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট