চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

স্কুলে স্কুলে পাঠ্যপুস্তক উৎসব শিক্ষার মানোন্নয়নেও নজর দিতে হবে

৬ জানুয়ারি, ২০২০ | ২:৫৭ পূর্বাহ্ণ

দেশের সব শিশুকে শিক্ষার আওতায় আনতে এবং শিক্ষাবর্ষের সূচনালগ্ন থেকেই শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় নিমগ্ন করতে প্রতিবছর ১ জানুয়ারি বর্ণাঢ্য আয়োজনে দেশব্যাপী স্কুলে স্কুলে পালিত হয় পাঠ্যপুস্তক উৎসব। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বুধবার সারাদেশে উদযাপন করা হয়েছে জাতীয় পাঠ্যপুস্তক উৎসব। শিশু থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ৪ কোটি সাড়ে ২৭ লাখ শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দেয়া হয় নতুন শিক্ষাবর্ষের ৩৫ কোটি ৩১ লাখ ৫৪ হাজার ৬৩৮ কপি নতুন বই। এবার সারা দেশে পাঁচ নৃগোষ্ঠীর শিশুদেরও তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত মাতৃভাষায় ছাপানো বই দেয়া হয়। এছাড়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য ছাপানো হয়েছে ব্রেইল বই। ফলে নতুর বছরের শ্রেণিকার্যক্রম শুরু করতে কারো অসুবিধা হবে না। শিক্ষার্থীরা নতুন বই নিয়ে নবস্বপ্ন ও নব আনন্দে পড়াশোনা শুরু করতে পারবে। দেশের প্রতিটি জনপদে, প্রতিজন শিক্ষার্থীর হাতে পাঠ্যপুস্তক তুলে দেওয়ার মতো এই চ্যালেঞ্জিং কাজটি সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছে সরকার। এ জন্যে সরকার ধন্যবাদার্হ।

২০১০ খ্রিস্টাব্দ থেকে বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় শহরে পাঠ্যপুস্তক উৎসব পালিত হয়ে আসছে। বই উৎসবের মাধ্যমে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, ইবতেদায়ি, দাখিল, এসএসসি ভোকেশনাল ও কারিগরি শিক্ষার্থীর হাতে নতুন পাঠ্যপুস্তক তুলে দেয়া হয়। বিনামূল্যে আনন্দের সঙ্গে বইগুলো শিক্ষার্থীর হাতে পৌঁছে দেয়ার জন্য প্রতি পাঠ্যপুস্তক বাবদ আলাদা খরচ সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিসে সরকার কর্তৃক প্রদান করা হয়ে থাকে। সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলোও নিজস্ব খরচে শিক্ষাঅফিস থেকে বিনামূল্যের পাঠ্যবই সংগ্রহ করে উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দিচ্ছে। এভাবে রাষ্ট্রের সব শিক্ষার্থীর হাতে একই দিনে বিনামূল্যে নতুন বই তুলে দেয়ার উৎসব দিন দিন মহিমান্বিত হচ্ছে। এতে শিক্ষার প্রতি জনআগ্রহ বাড়ছে, একইসঙ্গে পাঠগ্রহণও আনন্দময় হচ্ছে। শিক্ষার্থীর ঝকঝকে নতুন বই পাওয়ার আনন্দ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে রাষ্ট্রকেও গর্বিত করে।

দৈনিক পূর্বকোণসহ দেশের বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত পাঠ্যপুস্তক উৎসবের ছবিগুলোতে দেখা যায়, বছরের প্রথমদিন নতুন বই পাওয়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের চোখে ছিল আনন্দের ঝিলিক, নতুন বই হাতে পাওয়ার অনাবিল এক উচ্ছ্বাস। বই হাতে পাওয়ার পর অনেক শিক্ষার্থী নিজে নিজেই পড়া শুরু করে দেয়। এক সময় বিষয়টি কল্পনাই করা যেতো না। উৎসবের মাধ্যমে বছরের প্রথম দিনেই বিনামূল্যে নতুন বছরের পাঠ্যবই পাওয়া তো দূরের কথা, পকেটের পয়সা দিয়ে বছরের অর্ধেক গত হওয়ার পরও বইয়ের দেখা মিলতো না। পাঠ্যবইয়ের অভাবে পড়ালেখা ছাড়াই চলে যেতো বছরের অর্ধেক সময়। আবার দেরীতে বই হাতে পেলেও সেসব বইয়ে থাকতো নানা ধরনের ত্রুটি। এতে চরম ক্ষতির শিকার হতো কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। এই চিত্রের অবসানে পদক্ষেপ নেওয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। চালু করা হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্যে বিনামূল্যের বই বিতরণ কর্মসূচি। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার তা নবম শ্রেণি পর্যন্ত বিস্তৃত করেছে। তাঁর এই সুচিন্তিত পদক্ষেপের ফলে শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিনেই জাঁকজমকপূর্ণ উৎসবের মাধ্যমে বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দেওয়া হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে দেশের সাধারণ মানুষের সন্তানদের শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণের জন্য প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে

বিনামূল্যে বই, খাতা, পেনসিল, দুধ, ছাতু, বিস্কুট বিতরণসহ ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মানুষের ঘর নির্মাণের জন্য বিনামূল্যে টিন দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথ ধরেই আজ দেশের প্রতিটি জেলায় টেকনিক্যাল, পলিটেকনিক্যাল, মহিলা পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট ও উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। এখন বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ, বৃত্তি প্রদানসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিক্ষাবিস্তারের পথ মসৃণ করা হয়েছে। প্রথম দিকে মজ্জাগত দুর্নীতিসহ নানা কারণে কিছুটা সমস্যা ও ত্রুটিবিচ্যুতি দেখা গেলেও নাগরিকসমাজের সমালোচনা ও সরকারের কঠোর পদক্ষেপে তা অনেকাংশেই কমে গেছে। তুলনামূলকভাবে এবারের বইগুলো ভালোমানের কাগজে ছাপা হয়েছে। বইগুলো আকর্ষণীয় ও রঙিন। গত বছর থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ব্রেইল বই, পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের ভাষায় লেখা প্রাক-প্রাথমিকের বই ও শিক্ষা উপকরণ এবং শিক্ষক নির্দেশিকাও বিতরণ শুরু হয়। এবারও তা অব্যাহত ছিল। এ উদ্যোগ দেশে শিক্ষাবিস্তার আন্দোলনকে আরো বেগবান করবে, সন্দেহ নেই।

তবে, শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যের পাঠ্যবই তুলে দেওয়ার মূল উদ্দ্যেশ্য হাসিল করতে চাইলে অবশ্যই শিক্ষার মান বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে। শিক্ষা হতে হবে যুগোপযোগী, আধুনিক, নৈতিকতানির্ভর ও বিজ্ঞানসম্মত। সৎ এবং দক্ষ মানবসম্পদ তৈরীই হবে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য। এ জন্যে দুর্নীতির মূলোৎপাটন এবং শিক্ষাপ্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। কাজটি চ্যালেঞ্জিং বটে, তবে আন্তরিকতা থাকলে লক্ষ্য অর্জন কঠিন হবে না। শিক্ষাকে সত্যিই দারিদ্র্য বিমোচন এবং উন্নয়নের হাতিয়ার বানাতে চাইলে অবশ্যই সবার জন্যে শিক্ষাসুযোগ নিশ্চিত করতে হবে এবং শিক্ষাখাতকে দুর্নীতির ছোঁয়া থেকে মুক্ত রাখতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট