চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

নিয়ন্ত্রণে জরুরি পদক্ষেপ নিন আবারও ঊর্ধ্বমুখী পণ্যবাজার

৫ জানুয়ারি, ২০২০ | ৩:০১ পূর্বাহ্ণ

নিত্যপণ্যের বাজার সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে রাখতে সরকারের চেষ্টার শেষ নেই। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে পণ্যমূল্য। দেশে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ে যে তুঘলকি কা- ঘটে চলেছে, তার কোনো কূল-কিনারা করতে পারছে না সরকার। মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যের বাজার নিয়ে যে দুর্বৃত্তপনা করছে, তা দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট। কিন্তু এদের অপতৎপরতা বন্ধে সরকারের কোনো পদক্ষেপই কাজ দিচ্ছে না। পেঁয়াজ তো আছেই; চাল, ডাল, তেল, চিনি, শাক-সবজি সব ক্ষেত্রেই রয়েছে মুনাফাশিকারিদের কালো হাত। বিভিন্ন অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে সবজিবাজারে পাইকারি দরের চেয়ে খুচরা দর কেজিপ্রতি অনেক বেশি। চালের দাম তো বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। অন্যান্য নিত্যপণ্যের দামও স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে। মাঝেমধ্যে বাজার মনিটরিং টিমের অভিযান দেখা গেলেও পণ্যমূল্যে এর তেমন প্রভাব দেখা যায় না। এতে চরম বিপাকে পড়ছে স্বল্প আয়ের সাধারণ মানুষজন। নিত্যপণ্যের বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের এমন দাপট কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।

টিসিবির হিসাবে এখন ১৮টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম গত বছরের এ সময়ের তুলনায় বেশি। গণমাধ্যমের খবর বলছে, বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম এক লাফে লিটারে বেড়ে গেছে আট টাকা। প্যাকেটজাত চিনির দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি সাত টাকা। বাজেটের পর এখন পর্যন্ত খোলা চিনির দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১২ টাকা। গত এক সপ্তাহে পেঁয়াজ, আলু, চিনি, ভোজ্য তেল, ডিম, এলাচি ও ময়দার দাম কমবেশি বেড়েছে। কিন্তু কমার তালিকায় নেই একটি পণ্যও। দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির অজুহাত দেখাচ্ছে। কিন্তু বাজারবিশেষজ্ঞদের মত হচ্ছে, বিশ্ববাজারের তুলনায় বাংলাদেশে দাম অনেক বেশি। বরাবরের মতো অভিযোগ হচ্ছে, অসাধু বিক্রেতারা সিন্ডিকেট করে অসহায় ক্রেতাসাধারণের পকেট কাটছে। চালের দাম নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হলেও এখনও আশাব্যঞ্জক তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। বাজার নিয়ন্ত্রণে টিসিবির ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। টিসিবি সঠিকভাবে বিপণন কার্যক্রম চালালে এই নৈরাজ্য কমে যেত। চট্টগ্রামে চালু হওয়া বাজার মনিটরিং কার্যক্রমও শক্তিশালী নয়। তাও আবার মাত্র কয়েকটি বাজারে সীমাবদ্ধ। ফলে অসাধু ব্যবসায়ীদের মূল্যকারসাজি রোধ করা যাচ্ছে না। বাজার মনিটরিং কার্যক্রম শক্তিশালী না হওয়ায় অসাধু ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করে তুলছে। নগরীর সব বাজারে যদি মনিটরিং টিমের শক্তিশালী কার্যক্রম থাকতো এবং তা বছরব্যাপী চলমান রাখা যেতো তাহলে স্বল্প আয়ের মানুষ মূল্যসন্ত্রাস থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পেতো নিশ্চয়ই।

অভিযোগ আছে, বাজার নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে যুক্ত আছে সরকারের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা একটি দুর্বৃত্ত ব্যবসায়ীচক্র। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা এ চক্রটি নাকি খুবই শক্তিশালী ও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। তারা ইচ্ছেমতো বাজার নিয়ন্ত্রণ করে অনায়াসে অন্যায্যভাবে বিপুল মুনাফা লুটে নিচ্ছে। ফলে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন সময় সরকার উদ্যোগ নিলেও তা কার্যকর করতে পারছে না। অভিযোগটি আমলে নেয়া জরুরি। সরকারকে মনে রাখতে হবে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যে উচ্চস্তরে উঠেছে সে তুলনায় জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বাড়েনি। মূল্যপরিস্থিতির কারণে সাধারণ মানুষের পুষ্টিঘাটতি দেখা দিচ্ছে। এতে জীবনঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। অতি মুনাফালোভীচক্রের কারণে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জীবনে দুরবস্থা নেমে আসবে, তা কারো কাম্য হতে পারে না। যেভাবেই হোক, জনগণকে এই জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার করতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট