চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মহানগরীতে যানজটে ঈদের বাজারে ভোগান্তি

১৮ মে, ২০১৯ | ২:১৮ পূর্বাহ্ণ

ত্রুটিপূর্ণ ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট এবং প্রশাসনিক নির্লিপ্ততার কারণে এমনিতেই সারাবছরই যানজটে বেহালদশা নগরবাসীর, রমজান এলে তা চরম আকার ধারন করে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। রমজান মাসে অতি মুনাফার আশায় ফিটনেসবিহীন লক্করঝক্কর গাড়ি রাস্তায় নামানো, ট্রাফিক আইন না মানা, যত্রতত্র পার্কিং, হকার ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের রাস্তা দখল, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, সংস্কারহীন সড়ক ও উড়াল সড়ক নির্মাণযজ্ঞ এবং নির্মাণকাজ ও নির্মাণসামগ্রী ফুটপাতসহ রাস্তার বড় অংশ দখল করে নেয়াসহ নানা কারণেই যানজটের এই অসহনীয় চিত্র। যানজটের কারণে দশ মিনিটের পথ পেরোতেই ঘণ্টা পার হয়ে যায়। এতে সময় ও আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি নাগরিকযন্ত্রণারও সীমা নেই। রমজানের প্রথম দশকে চট্টগ্রামে যানজটের ভয়াবহ চিত্র দেখে বুঝাই যাচ্ছে ঈদের আগে কেনাকাটার চাপ বাড়লে পরিস্থিতি আরো ভয়ঙ্কর রূপ নেবে।
দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত বন্দরনগরী চট্টগ্রাম কয়েক বছর ধরে যানজটের শহরে পরিণত হয়েছে। নগরীর কর্মমুখী মানুষদের একটি উল্লেখযোগ্য সময় ব্যয় হয় যানজটে। যতোই দিন যাচ্ছে ততোই এই যানজটচিত্র অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। যানজটের কারণে একদিকে নষ্ট হচ্ছে নগরবাসীর মূল্যবান কর্মঘণ্টা, অন্যদিকে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। সময় ও আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি স্বাস্থ্যগত ক্ষতিরও শিকার হচ্ছে এই মহানগরীর জনগণ। এ প্রেক্ষাপটে নগরীর সচেতনব্যক্তিবর্গসহ বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন যানজট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। দৈনিক পূর্বকোণের পাঠকের কলামেও এ বিষয়ে নাগরিকমত সম্বলিত কয়েকটি চিঠিপত্র ছাপা হয়েছে। কিন্তু জনকাক্সিক্ষত কোনো পদক্ষেপ দৃষ্টিগোচর হয়নি। এ অবস্থায় পবিত্র মাহে রমজানকে কেন্দ্র করে নগরীর যানজটচিত্র আরো ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। দিনদিন এই সংকট যে আরো ঘনীভূত হবে তা বলাই বাহুল্য। উল্লেখ্য, গত রমজানে যানজট নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ৭ দফা সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছিল। এবার কিন্তু সেরকম কোনো তৎপরতা দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। ফলে নগরবাসীর মনে ঈদপূর্ব যানজট নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়েই চলেছে।
চট্টগ্রাম মহানগরীতে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর ৯৯ শতাংশেরই যাতায়াতের মাধ্যম মূলত গণপরিবহন। ১ শতাংশেরও কম মানুষ ব্যবহার করে ব্যক্তিগত গাড়ি। কিন্তু গণপরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা না থাকায় এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় যানজটচিত্র দিনদিন দুর্বিসহ রূপ ধারন করছে। নগরীর গণপরিবহনব্যবস্থার আধুনিকায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বিভিন্ন সময়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এবং সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। মেট্রোরেল ও বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু সব কথার কথা হিসেবে থেকে গেছে। উপরন্তু যান চলাচলে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সহজ পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টিও উপেক্ষিত হচ্ছে। ফুটপাত দখলমুক্ত করতে মাঝেমধ্যে পুলিশী অভিযানও পরিচালিত হতে দেখা যায়। অভিযানকালে সাধারণ মানুষ কিছুটা আশান্বিত হয় এই ভেবে যে, এবার বুঝি ফুটপাতে পথচারীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু যখন দেখে অভিযানের পরপরই ফুটপাত আগের চেহারায় ফিরে গেছে, দখলদাররা ফের দখলে নিয়েছে ফুটপাত। তখন জনগণের এই আশা হতাশয় রূপ নেয়।
অভিযোগ আছে ফুটপাত দখলকারীদের কাছ থেকে একশ্রেণির পুলিশ এবং রাজনীতিকরা মাসোহারা নেয় নিয়মিত। রমজানে তা ভয়ঙ্কর রূপেই বিস্তার লাভ করে। আর ফুটপাত পথচারীদের অধিকারে না থাকায় পথচারীরা বাধ্য হয়ে মূল সড়ক দিয়ে চলাফেরা করে। এতে রাস্তায় যান চলাচলে বিঘœ ঘটে, সৃষ্টি হয় যানজটের। আবার মূল সড়কের একটি অংশও নির্মাণসামগ্রী রেখে কিংবা দোকান বসিয়ে দখলে রাখার দৃশ্য দেখা যায় নগরজুড়ে। সড়কে পার্কিং আইনত নিষিদ্ধ হলেও মূল সড়কের অর্ধেক জুড়ে বিভিন্ন গাড়ি পার্ক করে রাখা হয়। এতে যান চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হলেও আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় না। আবার ওভারটেকিং, নিয়ম না মেনে গাড়ি চালানো, যাত্রীর জন্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকা, রাস্তার মধ্যখানে থেমে যাত্রী উঠানামা করা, ফিটনেসহীন গাড়ি চালানো, ট্রাফিক আইন না মানা কিংবা ট্রাফিক আইন না জানা, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালককে দিয়ে গাড়ি চালানো প্রভৃতি কারণেও যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এসব দেখার দায়িত্বে নিয়োজিতরা নির্লিপ্ত থাকার কারণে বিশৃঙ্খলা চরম আকার ধারন করেছে এখন।
সামনে ঈদের বাজার। মানুষের ঢল থাকবে। ভিড়ভাট্টা থাকবেই। কিন্তু যানজটের ভোগান্তি যেনো সহনীয় পর্যায়ে থাকে, তীব্র না হয়, সে উদ্যোগ নিতে হবে। কর্তৃপক্ষের সচেতন তৎপরতা অব্যাহত থাকলে, একইসঙ্গে সবাই নিয়ম মেনে চললে, আশা করা যায় যানজটের সীমাহীন দুর্ভোগ থেকে নগরবাসী মুক্তি পাবেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট