চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

বিজয় দিবসে তারুণ্যের প্রত্যাশা

আজহার মাহমুদ

১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৩:৪৪ পূর্বাহ্ণ

বিজয় শব্দটাই আনন্দের। কে চায় না জিততে? সবাই চায়। কিন্তু জিতে তারাই, যাদের জেতার সামর্থ্য এবং মনোবল থাকে। আমরা কথায় কথায় বাঙালি জাতিকে অনেক সময় ছোট করি। যেমন, কোনো একটা ভুল করলে বলে উঠি, হায়রে বাঙালি! এরকম সব বিষয়ে আমরা আমাদের জাতিটাকেই নিচু করি। কিন্তু একবারের জন্যও ভাবি না আমরা সেই জাতি, যে জাতি বুকের রক্ত দিয়ে পাকিস্তানের পশুদের কাছ থেকে এই মানচিত্র রক্ষা করেছিলো। আমরা সেই জাতি, যে জাতি নিজের ইজ্জত দিয়ে দেশকে স্বাধীন করতে ভূমিকা রেখেছিলো। আমরা সে জাতি, যে জাতি নিজের সন্তানকে যুদ্ধে পাঠিয়েছিলো। শুধু জাতি হিসেবে আমরা লজ্জার ভাগ নিবো তা কেন।

আমরা এই গৌরবের ভাগও নিতে পারি। আমরা নিচু নয় আমরা বিশ্বের উচু জাতি। কারণ আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দেশের মানুষ। আমরা সেই জাতি যে জাতি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে নিজেরা কষ্ট পাচ্ছি। তবুও তাদের জোর করে বের করে দিচ্ছি না কিংবা হত্যা করছি না। আমরা দয়ালু এবং মানবিক জাতি। আমরা গর্ব এবং অহংকার করতেই পারি।
বিজয় দিবস বাংলার মানুষের কাছে গর্বের, আনন্দের এবং অহংকারের। তাই বিজয়ের মাসও বাংলার মানুষের কাছে গর্বের। বিজয়ের এ মাসে তরুণ প্রজন্মের প্রত্যাশা অনেক। মহান বিজয় দিবস ১৯৭১ থেকে ২০১৯। হাঁটি হাঁটি পা পা করে স্বাধীনতার ৪৮ বছর পার করে দিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এখন একটি উন্নয়নশীল দেশ। কিন্তু শত উন্নয়নের মধ্যেও এ দেশে চুরি, গুম, হত্যা, মারামারি, ধর্ষণ, লুটপাট আর দুর্নাীতি লেগইে আছে। যদিও বর্তমান সরকার সবকিছু কঠোর হাতে দমন করছে। তবুও এর শেষ দেখছে না বাংলার মানুষ। তারুণ্যের চাওয়া এসমস্ত অন্যায় এবং অপকর্মের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। এদের বাংলার বুকে থাকতে দেওয়া যাবে না। সেইসাথে সকল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করা। বঙ্গবন্ধু খুনীদের দেশে এনে ফাঁসি কার্যকর করা তারুণ্যের চাওয়া।বর্তমানে আমাদের দেশ উন্নয়নের মধ্যেই রয়েছে। এখন প্রতিটি স্কুল, মাদ্রাসায় পহেলা জানুয়ারি বই পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। গরিব শিক্ষার্থীদের দেয়া হচ্ছে উপবৃত্তি। এরকম উন্নয়ন শুধু শিক্ষা খাত নয় দেশের প্রতিটা খাতেই এখন লক্ষণীয়।
আজ আমাদের দেশে নির্মাণ হচ্ছে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এভাবে দেশের নানা স্থানে হাজারো উন্নয়নের দৃশ্য দেশের মানুষ দেখেছে। এখন আমাদের দেশের উন্নয়নে কেউ বাধা দিতে পারবে না। বিশ্বে বাংলাদেশ মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং এগিয়ে যাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে তারুণ্যের চাওয়া এই উন্নয়ন যেনো থমকে না যায়। এসব উন্নয়ন প্রকল্পে অনেক দুর্নীতি হয়। যা ইতোমধ্যে দেশের মানুষের কাছে ফাঁস হয়েছে। কিন্তু ফাঁস না হওয়া দুর্নীতি আরও অনেক রয়েছে। যা হয়তো জনগণ জানে না। এসব অপরাধের দৃষ্টান্ত বিচার হতে হবে। তবে তারুণ্যের আস্থা পাবে সরকার।

বিজয়ের এ মাসে তারুণ্যের প্রত্যাশা, পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি। আজ আমাদের দেশে শিক্ষিত বেকারের অভাব নেই। যার কারণে আজ আমাদের দেশে পড়া লেখা করেও হাজারো শিক্ষার্থীর শিক্ষা শেষে কোনো কর্মসংস্থানের সুযোগ মেলে না। তারা কর্মসংস্থানে সুযোগ না পেয়ে চলে যায় ধ্বংসের পথে। অনেক সময় তারাই দেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। তাদের মধ্যে অনেকে তখন জীবনের তাগিদে নোংরা এবং ঘৃণ্যতম কাজ বেছে নেয়, যা দেশ ও জাতির জন্য ক্ষতিকর। তারা মাদক সেবনে আসক্ত হয়ে পড়ে।তাদের বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে কতিপয় মহল তাদের হীনউদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে। তাই আর যেনো কোনো শিক্ষিত বেকার বাংলার বুকে না থাকে। কোনো শিক্ষিত ছেলে যেনো কর্মসংস্থানের অভাবে অনৈতিক কাজে জড়িয়ে না পড়ে। এ জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণে কর্মসংস্থান যোগান দেয়া। আর এটাই বর্তমান সরকারের প্রতি প্রত্যাশা তারুণ্যের। দেশে যখন বিজয়ের মাসে মারামারি, খুন, গুম, চুরি ছিনতায়, ডাকাতি, এমনকি ধর্ষণের মতো নিকৃষ্ট এবং নোংরা অপরাধ চলে তখন তরুণ প্রজন্মের কাছে বিজয়ের আনন্দ অনেকখানি মলিন হয়ে যায়। আমরা সকলে হয়তো জানি স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন। বিষয়টিও আমাদের কাছে তেমন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? আমাদের মানসিকতা পরিবর্তন ঘটাতে হবে।

বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলায় থাকবে না ধর্মের ভেদাভেদ। থাকবে না ধনী আর গরীবের মধ্যে পার্থক্য। দেশের মানুষ সকলেই সমান ও সুন্দর ভাবে জীবন যাপন করতে পারে এটাই বর্তমান তরুণ প্রজন্মের চাওয়া। তবে জানি এমন চাওয়া অনেকটাই “আকাশ-কুসুম” এর মতো। তবুও বিজয়ের এ মাসে আমাদের সকলের প্রতিজ্ঞা হওয়া চাই দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য নিজেকে তৈরী করা। নিজের জন্য না, অন্যের জন্য হতে হবে আমাদের। তবেই বিজয়ের মাসে আমাদের সত্যিকারের বিজয় হবে। ৭১ সালের যোদ্ধারা কি নিজেদের জন্য যুদ্ধ করেছে? না, তারা আমাদের জন্যই করেছে। নিজের জীবন দিয়েছে দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য। তবে আমরা কেন নয়? আমাদেরও দেশের জন্য ভাবতে হবে এবং করতে হবে। বিজয়ের এ মাসে আমাদের সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। আমাদের দেশকে এখন মুক্ত করতে হবে এসব হায়না থেকে। বের করতে হবে তারা কাদের ছত্রছায়ায় আছে। উচ্ছেদ করতে হবে এসকল দেশ বিরোধী শত্রুদের। তবেই দেশ এবং দেশের মানুষের মুক্তি মিলবে।

বর্তমান সরকার যেভাবে দুর্নীতির বিরোদ্ধে সোচ্চার হয়েছে এটা সত্যিই তরুণ সমাজের নিকট প্রশংসনীয়। এ অভিযান থামানো যাবে না। এ অভিযান হতে হবে সারা দেশব্যাপী। দেশের মানুষের কোটি কোটি টাকা তারা আত্মসাৎ করে নিচ্ছে। যা দেশের জন্য সত্যি হুমকি। তাই তরুণ প্রজন্ম চায় দুর্নীতিমুক্ত সোনার বাংলা।

আজহার মাহমুদ কলামিস্ট, প্রাবন্ধিক ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট