চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

বজায় থাকুক ধারাবাহিকতা মানব উন্নয়ন সূচকে অগ্রগতি

১৫ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৩:৪২ পূর্বাহ্ণ

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মানব উন্নয়ন সূচকে এক ধাপ এগিয়ে ১৩৫তম অবস্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। শিক্ষা, আয়, সম্পদের উৎস, বৈষম্য, লৈঙ্গিক সমতা, দারিদ্র্য, কর্মসংস্থান, নিরাপত্তা, বাণিজ্য, প্রযুক্তিগত দক্ষতা, স্বাস্থ্য, শিক্ষাখাতসহ বিভিন্ন মাপকাঠির অগ্রগতি নিয়ে ইউএনডিপি প্রতি বছর এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ১৮৯টি দেশ নিয়ে তৈরিকৃত এ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানকে হয়তো শক্তিশালী বলা যাবে না, কিন্তু বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে এই সূচক সে সাক্ষ্য দিচ্ছে। গত বছর মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৩৬তম। এর আগের বছর ছিল ১৩৯তম। এবার বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৬১৪, যা গতবার শূন্য দশমিক ৬০৮ ছিল। প্রতিবেদন অনুযায়ী, যে দেশ ১ স্কোরের যত কাছাকাছি সে দেশ মানব উন্নয়নে তত উন্নত। বাংলাদেশ ধীরলয়ে হলেও এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নতির এ ধারা অব্যাহত রাখা গেলে মানব উন্নয়ন সূচকে আগামিতে আরো অগ্রগতি হবে, সন্দেহ নেই।

২০১৮ খ্রিস্টাব্দের তথ্যের ভিত্তিতে তৈরিকৃত ইউএনডিপির প্রতিবেদন অনুযায়ী এবার শ্রীলঙ্কা গত বছরের তুলনায় ৪ ধাপ, নেপাল ৩ ধাপ, মিয়ানমার ৩ ধাপ, অন্যদিকে বাংলাদেশ ও ভারত ১ ধাপ করে এগিয়েছে। এতে বলা হয়- গড় আয়ু, মাথাপিছু আয়সহ বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে অগ্রগতির ফলে বাংলাদেশ একধাপ এগিয়েছে। বিভিন্ন দেশের মানুষের জীবনযাত্রার অগ্রগতি তুলে ধরতে জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা ও আয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে ইউএনডিপির মানব উন্নয়ন সূচক তৈরি করা হয়। গতবারের মতো এবারও সূচকে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে নরওয়ে। ইউরোপের এ দেশটির স্কোর শূন্য দশমিক ৯৫৩ থেকে বেড়ে শূন্য দশমিক ৯৫৪ হয়েছে। এই সূচকে আসা ১৮৯টি দেশকে অতিউন্নত, উন্নত, মধ্যম ও নিম্ন মানব উন্নয়নের চারটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে। অতি উচ্চ মানব উন্নয়নে রয়েছে ৬২টি দেশ। এর মধ্যে প্রথম নরওয়ে, দ্বিতীয় সুইজারল্যান্ড, তৃতীয় আয়ারল্যান্ড, চতুর্থ জার্মানি ও পঞ্চম হংকং। উচ্চ মানব উন্নয়ন সূচকে রয়েছে ৫৪টি দেশ। মধ্যম মানব উন্নয়নের তালিকায় রয়েছে ৩৬টি দেশ। বাংলাদেশ রয়েছে মানব উন্নয়নের মধ্যম দেশের স্তরে। প্রতিবেশী ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের ওপরে অবস্থান করছে শ্রীলঙ্কা ৭১, মালদ্বীপ ১০৪, ভারত ১২৯ ও ভুটান ১৩৪তম। নিচু মানব উন্নয়নের সূচকে আছে আফগানিস্তানসহ ৩৫টি দেশ। বাংলাদেশের পেছনে অবস্থান করছে পাকিস্তান ১৫২, নেপাল ১৪৭ ও মিয়ানমার ১৪৫তম। যেসব দেশের নাগরিকের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল বেশি, শিক্ষাব্যবস্থা উন্নত এবং মাথাপিছু আয় বেশি, বৈষম্য কম, সেসব দেশ তালিকায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যকে (এসডিজি) ভিত্তি ধরেই মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। ফলে যেসব দেশের নাগরিকদের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল বেশি, শিক্ষাব্যবস্থা উন্নত এবং মাথাপিছু আয় বেশি, সেসব দেশই তালিকায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ দারিদ্র্য দূরীকরণকে সর্বাধিক প্রাধান্য দিচ্ছে। দরিদ্রদের মধ্যে, বিশেষ করে যারা সবচেয়ে বেশি দরিদ্র, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদেরকেই আগে সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে সরকার। ফলে গত দশ বছরে দেশে দারিদ্র্যের হার ৪২ শতাংশ থেকে প্রায় ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। বেড়েছে শিক্ষার হারও। সরকার মানসম্মত শিক্ষার বিস্তার এবং শিক্ষায় অংশগ্রহণের হার বাড়াতে নানামাত্রিক পদক্ষেপ নিয়েছে। এতে সুফলও আসছে। সরকার এখন প্রযুক্তিশিক্ষার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নেও সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। এখন এর ফল পেতে শুরু করেছি আমরা। ফলে মানব উন্নয়ন সূচকে এর প্রতিফলন ঘটছে। তবে দ্রুত এগিয়ে যেতে চাইলে ধনী-দরিদ্র বৈষম্য হ্রাস এবং দুর্নীতির মূলোৎপাটনে আরো বেশি মনোযোগ দিতে হবে। যেসব দেশ মানব উন্নয়নে সামনের কাতারে রয়েছে তাদের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের অবস্থান উন্নত করার সুচিন্তিত উদ্যোগ থাকলে কাক্সিক্ষত ফল আসবে। মনে রাখা দরকার মানবসম্পদ খাতে উন্নয়ন না হলে সকল উন্নয়ন অর্থহীন হয়ে যাবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট