চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নিশ্চিত করতে হবে কৃষিজমির সর্বোত্তম ব্যবহার

১৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৫:১৬ পূর্বাহ্ণ

যে কোনো দেশের ভবিষ্যৎ ও জাতীয় উন্নয়ন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে ভূমির বাস্তবমুখী ও বিজ্ঞানসম্মত ব্যবহার নীতিমালার সাথে। বাংলাদেশের সরকার এবং জনগণও তা বুঝে। সে জন্যে প্রাকৃতিক সম্পদের অনুসন্ধান, যুৎসই ব্যবহার এবং সর্বোচ্চ জনকল্যাণ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যে কৃষিজমির অপব্যবহার রোধের কথাও বলা হয়েছে নানা সময়ে। এ বিষয়ে কিছু নীতিমালাও তৈরি করা হয়েছে। তবে, বাস্তবতা হচ্ছে, এসবের প্রয়োগে মনোযোগ নেই সংশ্লিষ্টদের। জনসচেতনতা বৃদ্ধির কাজটিও হচ্ছে না যথাকায়দায়। ফলে কাক্সিক্ষত সুফল আসছে না। আবার প্রণীত নীতিমালাগুলোও যুগোপযোগী নয় বলে অভিযোগ অছে। অনেক উন্নয়ন-গবেষকের দাবি, বাংলাদেশে এখনো সময়ের চাহিদানুযায়ী প্রণীত হয়নি ভূমির ব্যবহার ও সংরক্ষণ নীতিমালা। ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কৃষিজমির সংকটও। এতে প্রাকৃতিক সম্পদের অনুসন্ধান ও ব্যবহারের কাজটি যেমন হচ্ছে না জন-আকাঙ্খা অনুযায়ী, তেমনি অপব্যবহারের ছোবল থেকে রক্ষা পাচ্ছে না কৃষিজমিও। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স’র (বিআইপি) রিপোর্ট বলছে, প্রতিবছর দেশের প্রায় ৭১ হাজার হেক্টর জমি অপরিকল্পিত অকৃষি খাতে বদলে যাচ্ছে। ফলে, খাদ্যনিরাপত্তা বিঘিœত হওয়ার পাশাপাশি দূষণজনিত কারণে জনস্বাস্থ্যও হুমকির মুখে পড়ছে দিন দিন। কৃষিজমির এই চিত্র উদ্বেগকর বলতে হবে।

একটি বেসরকারি সংস্থার গবেষণা রিপোর্ট অনুযায়ী, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও কৃষিজমি কমে যাওয়ার দ্বৈত ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ৮৩ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষিজমি শূন্য হয়ে পড়বে। এই তথ্য আমাদের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠাকে বাড়িয়ে দেয় বৈকি। কৃষিজমির ব্যবহার ও অপব্যবহার সংক্রান্ত অন্য এক গবেষণায় দেখা যায় আবাসন, শিল্প, বাণিজ্য, ধর্মীয় উপাসনালয়, কবরস্থান, শ্মশান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সড়ক নির্মাণের ফলে প্রতিদিন ৫২৮ একর কৃষিজমি অকেজো হয়ে পড়ছে। অথচ বাংলাদেশের জনগণের দুই তৃতীয়াংশের জীবন-জীবিকার প্রধান নির্ভরশীল ক্ষেত্র হচ্ছে কৃষি। প্রসঙ্গত, সরকারি গেজেটে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে মোট ভূমির পরিমাণ এক কোটি ৪৪ লাখ হেক্টর এবং বিপরীতে লোকসংখ্যা ১৬ কোটির বেশি। সে হিসেবে জনপ্রতি গড় ভূমির পরিমাণ প্রায় ২২ শতাংশ। আবার এই ২২ শতাংশর মধ্যে ১১ শতাংশই হচ্ছে অকৃষি জমি। খুব দ্রুত সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে না পারলে কৃষিজমি বলতে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। গত দুই দশকের কৃষিজমির পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, যতোই জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে ততোই কৃষিজমিগুলো পাল্লা দিয়ে চলে যাচ্ছে অকৃষি খাতে। এর মূল কারণ হচ্ছে কৃষিজমি রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের অসতর্ক অবস্থান। বিভিন্ন গবেষণা তথ্যে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে গড়ে প্রতি বছর ১ লাখ ৯২ হাজার ৮ শত ৫৭ একর এবং গড়ে প্রতিদিন ৫২৮ একর কৃষিজমি কমে যাচ্ছে। সরকারি গেজেটে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, বছরে গড়ে কৃষিজমি হ্রাস পাচ্ছে ১ লাখ ৯২ হাজার ৮শত ৫৭ এর। সে হিসেবে কৃষিজমির বর্তমান চিত্র কি রকম হতে পারে তা সহজে অনুমেয়।

আমরা মনে করি, কৃষিজমির বিজ্ঞানসম্মত ব্যবহার ও সংরক্ষণের ব্যাপারে সরকার এখনই তৎপর না হলে বাংলাদেশ অদূর ভবিষ্যতে চরম অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও কৃষিজমি ব্যবহারের ধারা সমান গতিতে অব্যাহত থাকলে এক সময় কৃষিভূমির পরিমাণ শূন্যে গিয়ে ঠেকবে। তাই সরকারের উচিত সময় থাকতে কৃষিজমি রক্ষায় সুচিন্তিত পদক্ষেপ নেয়া। এ বিষয়ে কাক্সিক্ষত সাফল্য পেতে হলে সাধারণ মানুষকে পরিকল্পিত পরিবার গড়তে উৎসাহিত করে জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতি কমিয়ে দেয়ার পাশাপাশি ফসলি জমিতে যাতে কোনো আবাসন বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান নির্মিত না হয় সে ব্যাপারে সরকারকে সতর্ক কর্মসূচি নিতে হবে। প্রয়োজনে গ্রামাঞ্চলে ব্যক্তি উদ্যোগে আবাসন ব্যবস্থার পরিবর্তে সরকারিভাবে বহুতল বিশিষ্ট আবাসন নির্মাণ করে জনগণের মধ্যে স্বল্পমূল্যে বিতরণের উদ্যোগ নিতে হবে। এতে বসতভিটা তৈরিতে ফসলিজমির উপর চাপ কমে আসবে। মনে রাখা দরকার দেশের আয়তনের তুলনায় অধিক জনসংখ্যা, অধিক জনঘনত্ব ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে দেশের প্রতিইঞ্চি ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার বিকল্প নেই।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট