চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

পরম সত্তার আশ্রয়

মুহাম্মদ আবু নাসের

১৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৫:১৬ পূর্বাহ্ণ

পোকা ধরার জন্য ওত পেতে থাকে পাখি। সুযোগ বুঝে বিড়ালও পেছন থেকে ছোবল মেরে পাখিটি ধরে চম্পট দেয়। প্রাকৃতিক জগতে এ ঘটনার নজির শতশত অহরহ। এখানে যে ভক্ষক, সে ভক্ষিতও। পাখি ছিল ভক্ষক। সে অন্যকে খাওয়ার অপেক্ষায় ছিল; কিন্তু মুহূর্তে সে ভক্ষিত ছিলো। যে শিকারি, সে অন্যের শিকার। বেঁচে থাকার এ সংগ্রাম সর্বত্র। চোর ওত পেতে থাকে অন্যের সম্পদ আত্মসাতের জন্য। ওদিকে দারোগা চোর ধরার তল্লাশিতে চক্কর দেয় পুলিশ নিয়ে। চোরের ধ্যানজ্ঞান মগ্ন আসবাবপত্র কোথায় বা দরজার তালা খোলার চিন্তায়। অথচ তার খবর থাকে না হাতকড়ার কিংবা গৃহস্তের শেষ রাতের কান্নার। প্রাণীজগতের এ অভিজ্ঞতায় ন্যায় উদ্ভিদ জগতেও একই নিয়মের ব্যত্যয় নেই। বিশ^বিশ্রুত দার্শনিক-তাপস মওলানা রুমির মতে, এ ভক্ষিত হওয়ার বা অন্যেল গ্রাসে পরিণত হওয়ার আশংকা থেকে মুক্ত থাকার একমাত্র পথ হল, কারো সঙ্গে যুক্ত হওয়া, এমন সত্তার আশ্রয় নেওয়া, যার ক্ষয় নেই, লয় নেই, পানাহারের প্রয়োজন যার নেই। সব চাহিদা থেকে যিনি সম্পূর্ণমুক্ত, চিরঞ্জীব। প্রাকৃতিক জগতের ন্যায় আমাদের অন্তর্জগতেও নিত্য বিরাজমান এ ভক্ষক ও ভক্ষিতের নিয়ম। আমাদের মাথায় একটি চিন্তা আসে আবার অন্য চিন্তা এসে সে চিন্তা তলিয়ে নিয়ে যায়। চিন্তার শিকল থেকে কারো রেহাই নেই। নিদ্রার কোলে আশ্রয় নিলে মনে হবে সব চিন্তা বেরিয়ে গেল মনের আকাশ ছেড়ে। ঘুম ভাঙলে আবার চিন্তা চড়াও হয় মনের আঙিনাজুড়ে। মানুষের ওপর চিন্তার এ আধিপত্য ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভক্ষকের উদাহরণ। এছাড়াও আরো কত ভক্ষক আছে, তার সংখ্যা কত অগণন একমাত্র তা ¯্রষ্টাই জানেন।

প্রবৃত্তির নানা প্রবঞ্চনার সঙ্গে ওঠাবসার ফলে মানুষের জ্ঞান বুদ্ধির ওপর অবহেলা, অজ্ঞতা ও কামনার পর্দা জেঁকে বসে। ফলে জ্ঞানবুদ্ধির অবস্থা হয় নাজুক ও ভঙ্গুর। সেই বুদ্ধিবিবেকের ওপর ভরসা করে পথচলা নিরাপদ নয়। তাই এসব ভক্ষক থেকে নিস্তার পেতে হলে আশ্রয় নিতে হবে পরম আশ্রয়দাতার কাছে। মহান আল্লাহপাকের গুণবাচক ৯৯ নামের একটি হাফিজ যার মানে সংরক্ষণকারী, আশ্রয়দাতা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট