চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

মানবাধিকার নিশ্চিত করতে আইনের যথাযথ প্রয়োগ চাই

অ্যাডভোকেট মো. সাইফুদ্দীন খালেদ

১৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৫:১৬ পূর্বাহ্ণ

মানুষের কল্যাণের জন্যেই সমাজ, রাষ্ট্র, আইন ও বিচার ব্যবস্থার সৃষ্টি। আইন ও বিচার ব্যবস্থা এবং আইনের শাসনের পূর্বশর্তই হচ্ছে মানবাধিকার বাস্তবায়ন। মানবাধিকার বিশ্বজনীন। বাংলাদেশের সংবিধানের মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয়গুলোর মধ্যে আইনের দৃষ্টিতে সমতা, ধর্ম, বর্ণ, নারী, পুরুষ ক্ষেত্রে বৈষম্য করা যাবে না, চাকুরীর সমান সুযোগ, বিদেশী রাষ্ট্রের উপাধি গ্রহণ, আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার, জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার, গ্রেপ্তার ও আটক সম্পর্কে রক্ষাকবচ, জবরদস্তিমূলক শ্রম নিষিদ্ধকরণ, বিচার ও দন্ড সম্পর্কে বিধান, চলাফেরার স্বাধীনতা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

মানুষের জন্য স্বীকৃত অধিকার যখন লংঘিত হয়, তখনই আমরা বলে থাকি মানবাধিকার লংঘিত হয়েছে। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রের দায়িত্বরত ব্যক্তি বিশেষ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাজ হলো জনগণের নিরাপত্তা দেওয়া এবং আইন প্রয়োগের যতগুলো পদ্ধতি আছে তা সঠিকভাবে প্রয়োগ করা এবং মানবাধিকার লংঘিত হলে বিচার প্রার্থীর বিচার সুনিশ্চিত করা। যে সকল শিশু প্রতিকূল পরিবেশে জন্মে ও বড় হয় বিশেষত ঃ যারা পথশিশু, এতিম ও জেল খানায় কয়েদী/হাজতী মায়ের সঙ্গে আছে সে সকল শিশু এবং অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়া কিশোর-কিশোরী তাদের মৌলিক ও মানবাধিকার বলে কিছু আছে? দারিদ্র্যের নির্মম কষাঘাতে জর্জরিত পরিবার। জীবন সম্পর্কে কিছু বুঝে ওঠার আগেই অর্থ উপার্জনের জন্য পরিবার ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে।

খোলা আকাশের নীচে গাড়ীর ধোয়া ও ধুলোবালি উপেক্ষা করে গাড়ীর বিভিন্ন যন্ত্রপাতি খোলাসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করছে। কেউবা মাথায় ইট বা ভারি বস্তু নিয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। কেউ লোহা কাটার কাজে ব্যস্ত। আমাদের দেশে ভয়াবহ সমস্যা হলো
এই শিশুশ্রম। তারা অসহায় ও দুর্বল বিধায় সকল নির্যাতন মুখ বুঝে সহ্য করে এবং তাদের শ্রমের সঠিক মূল্য না দিয়ে ঠকানো যায়। এতিম, অসহায়, গৃহহীন, দুঃস্থ, দরিদ্র, সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের কারণে তাদের এসব ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
ঝুঁকিপূর্ণ পেশার মধ্যে রয়েছে- পরিবহন (শ্রমিক টেম্পু, রাইডার, বাস, ট্রাক ইত্যাদিতে), মোটর ওর্য়াকসপ ও গ্রীল ওয়ার্কসপ, লেইদ মেশিন ইত্যাদিতে, শীপ ইয়ার্ডে, ইঞ্জিন বোট ও মাছ ধরার ট্রলারে, নির্মাণশ্রমিক হিসাবে, ক্যামিকেল কারখানায়. রাজনৈতিক সহিংসতায় ও কর্মসূচীতে ব্যবহার, ধূমপান ও মাদকব্যবসায় নিয়োগ, ইট ভাটায় ইত্যাদিতে। আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সনদ, আমাদের সংবিধান, শিশু আইন-১৯৭৪, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আইনে শিশুদের প্রতি সকল প্রকার নিষ্টুরতা, জোর জবর দস্তি, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
অর্থনৈতিক শোষণ থেকে রক্ষা পাওয়ার এবং যেকোন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ, যেখানে দুঘর্টনার সম্ভাবনা রয়েছে এবং যার ফলে তার শিক্ষার ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এমন ধরনের কাজ থেকে শিশুর নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার আছে।

যেসব কাজ শিশুর স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর এবং যে কাজ তার শারীরিক, মানসিক, আর্থিক, নৈতিক বা সামাজিক বিকাশের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, যে সকল কাজ থেকে রক্ষা পাওয়ার অধিকারও শিশুর রয়েছে। আমাদের শ্রম আইনেও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশু নিয়োগ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। শিশুদের প্রতি সহিংসতা, অপব্যবহার ও শোষণের মতো প্রধান প্রধান যেসব হুমকি আছে সেগুলো সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকে তাদের কিশোর বয়সেই। এই বয়সের শিশুদের মধ্যে প্রধানত কিশোরেরা অনিচ্ছাসত্ত্বেও দ্বন্দ্ব সংগ্রামে জড়িয়ে পড়ে অথবা শিশুশ্রমিক হিসেবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় কাজ করতে বাধ্য হয়। এসব কারণে তাদের শিক্ষাজীবন শেষ করা বা দারিদ্র থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ কমে যায়।

এসব অবহেলিত শিশুদের মানবাধিকার রক্ষায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনসহ সর্বস্থরের নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে। তাদের লেখাপড়া, খাদ্য, স্বাস্থ্য ও মেধা বিকাশের জন্য অনুকূল পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।

অ্যাডভোকেট মো. সাইফুদ্দীন খালেদ আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট