চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

দৃশ্যদূষণে মহানগরীর মুক্ত আকাশ রুদ্ধ হয়ে যাবে কি?

১৫ মে, ২০১৯ | ১:৪৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মহানগরীর নীলাকাশের মুক্ত উদারতা আবারো দৃশ্যদূষণের সন্ত্রাসের শিকার হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দৈনিক পূর্বকোণ পত্রিকা দীর্ঘদিন ধরে সহযোগীদের চতুর্দিক ঢেকে যাওয়া নিয়ে দৃশ্যসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি এবং আন্দোলনের মাধ্যমে প্রাচ্যের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নগরী চট্টগ্রামকে তার প্রকৃতির সৌন্দর্য ফিরিয়ে দিয়েছিলো। নিকট অতীতের দিনগুলোতে চট্টগ্রাম মহানগরীকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিলো অসংখ্য আকাশচুম্বী বিলবোর্ডের আগ্রাসনকে অপসারিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অর্থাৎ সিটি করপোরেশনকে সাহস, সমর্থন ও শক্তি যুগিয়ে ।
চট্টগ্রাম শহরের সুনীল আকাশের দিকে চোখ রাখতে নগরীর অধিবাসীদের এখন আর বিশেষ কোনো অসুবিধা আগের মতো নেই। এখন অবলীলায় দৃষ্টিকে প্রসারিত করা যায়। মানুষের দৃষ্টি যখন কোনো প্রতিবন্ধকতায় হোঁচট খেয়ে থমকে যায় না, তখন তার মনের প্রশান্তি যেমন ডানা মেলে দিতে পারে তেমনই মানুষের মনের উদারতাও উপচে পড়ে। তাতে, আমাদের সমাজ ও সংসারেরই শ্রীবৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হয়। পারস্পরিক সম্পর্কের মাঝে বিবাদ-বিসম্বাদের কারণও হ্রাসপ্রাপ্ত হয়। এভাবেই সুস্থ নগরী ও নাগরিক সুস্থতা প্রসার লাভ করে। কিন্তু, মানুষের চারদিকের পরিবেশে যদি কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতায় প্রসারিত চেতনার দুয়ার রুদ্ধ হয়ে যেতে থাকে, সীমাবদ্ধতার ভেতরে যদি দূর অবলোকনের দৃষ্টি প্রতিহত হতে থাকে তখন চেতনে-অবচেতনে মানুষের মাঝে অন্তর্গত ভাবেই নানা ধরনের অসহিষ্ণুতার বিষ সঞ্চারিত হতে শুরু করে। আমাদের সৌভাগ্য যে, কিছুকাল আগে অব্যাহতভাবে সামাজিক প্রতিবাদ জাগিয়ে তুলে চট্টগ্রামবাসী বিলবোর্ডের বিজ্ঞাপনী চাদরে ঢাকাপড়া চট্টগ্রামের হারানো আকাশকে পুনরুদ্ধার করতে সমর্থ হয়েছিলো। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে অতীতের মতো নীলাকাশ দখলের থাবা আবারও যেনো তাদের নখর মেলতে শুরু করেছে। এখনই এর বিরুদ্ধে প্রবল ভাবে নগরবাসী সোচ্চার হয়ে না উঠলে অতীতের ভালো অর্জনটি তাদের হাত থেকে ছিনতাই হয়ে যেতে পারে।
গত সোমবার এই পত্রিকারই একটি প্রতিবেদনে তারই আলামতের কথা প্রকাশ পেয়েছে। এই মহানগরীর অতি ব্যস্ত সড়কের জিইসি’র মোড় এলাকায় এরই মাঝে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সংস্থার দেয়ালের অংশে ফুটপাত সংলগ্ন সড়কের উপর লোহার খুঁটি স্থাপন করে বসানো হয়েছে বিলবোর্ডের ফ্রেম। এই অবকাঠামো স্থাপনের কোনো অনুমোদন সম্ভবত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন থেকে নেওয়াই হয় নি। আগ্রাসী অপশক্তিরা কখনও কখনও এভাবেই আইন-কানুনকে উপেক্ষা করেই নিজেদের জোর প্রতিষ্ঠায় সূঁচ হয়ে ঢুকে অবশেষে ফাল হয়ে সকল সুস্থতাকে তছনছ ও ওলট-পালট করে দিতে সচেষ্ট হয়। আমরা আশা করবো, সিটি করপোরেশনের মেয়র মহোদয় তাঁর কিছুকাল আগের সাফল্যকে স্বার্থান্ধ ধান্ধাবাজদের অপকর্মের চক্রান্তের দ্বারা নষ্ট হতে দেবেন না। এই ধরনের স্থাপনা নির্মাণের সুযোগ যেহেতু সিটি করপোরেশন-এর আইনে নেই, অতএব শুরুতেই একে কঠোর হাতে দমন করে উচ্ছেদের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মনে রাখা সঙ্গত হবে, সময়ের এক ফোঁড় দিলেই যে কাজ হয়, তা অসময়ে করতে গেলে দশ ফোঁড় দিয়েও সহজ সমাধান পাওয়া যায় না। এই বিলবোর্ড পুনঃস্থাপনের অপকর্মটি ধীরে ধীরে অন্যান্য এলাকায়ও মাথা তুলতে শুরু করেছে। আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের নীচে লাগানো হয়েছে অসংখ্য বেল সাইন, যাতে রয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপনের জঞ্জাল এভাবে ক্রমশ তাদের শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে চলেছে। বিভিন্ন এলাকার মোড়ে এবং ভবনের উঁচু দেওয়ালে প্রায় বিলবোর্ডের মতোই করে রকমারী পণ্যের বিজ্ঞাপনী প্রচার বড় বড় ব্যানারের ডানা ছড়িয়ে যেতে চলেছে। মুরাদপুরের মোড়ে নির্মাণাধীন ফুটওভার ব্রিজের পাশে বিশাল বিজ্ঞাপনী সাইনবোর্ড নিশ্চয় সিটি করপোরেশনের দৃষ্টি এড়িয়ে যায় নি। সুতরাং বুঝতে হবে কালো হাতগুলো ধীরে ধীরে তৎপর হয়ে উঠছে। সঙ্কট গভীর হওয়ার আগেই সিটি করপোরেশন এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে প্রথম রাতেই বিড়াল মারার পদক্ষেপ নিতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট