চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

তাইপে সিটি : মন-ভোলানো এক শহর

ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক

১৫ মে, ২০১৯ | ১:৪৬ পূর্বাহ্ণ

লাঞ্চ শেষে রাজধানী তাইপের উদ্দেশ্যে আমাদের গাড়ি ছুটল দুর্বার গতিতে। পথিমধ্যে আবার বিরতি দিয়ে সন্ধ্যে পৌণে ৬’টায় তাইপে সিটিতে ঢুকলাম। সন্ধ্যের আকাশে তাইপে শহরটাকে ঝলমল আলোময় দেখাচ্ছিল। অসম্ভব এক গভীর নিরবতায় যেন মগ্ন তাইপে সিটি। তাইপেবাসীরা যেন এ ক’জন আগন্তÍুককে স্বাগত জানাতে ভুল করেনি। সু-পরিসর রাস্তা, বিশাল হাইওয়ে। উল্কার গতিতে ছুটছে যেনো বাহনগুলো।
আমাদের বাহনটাও মিশে যায় শত গাড়ির মিছিলে। সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার, জীবনে একটি বারের জন্য এ জনবহুল শহরে আসার সুযোগটা পেয়েছি। নতুন তাইপে সিটি একটি বিশেষ পৌরসভা এবং তাইওয়ানের সবচে’ জনবহুল শহর।
এই শহরটি দ্বীপের উত্তরাঞ্চলীয় উপকূলে একটি উল্লেখযোগ্য প্রসারিত অংশ এবং তাইওয়ান দ্বীপের উত্তর দিকে অবস্থিত। এটি পর্বত, পাহাড়, সমভূমি এবং অববাহিকাসহ একটি বৈচিত্র্যপূর্ণ বিস্তৃত এলাকা জুড়ে। ২০ কিলোমিটার উপকূলে অবস্থিত। তামসুই নদীর মূল অংশ নিউ তাইপে শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়।
এ শহরে রয়েছে বৃহৎ উপনদী। যেমন- জিন্দিয়ান, কিলুং এবং দাহান নদী। শহরের সবচেয়ে লম্বা শিখর মাউন্ট ঝুজি, উচ্চতা ১০৯৪ মিটার। এটি সান্জি জেলায় অবস্থিত। নিউ তাইপে শহরটির উত্তর পূর্বে কিলুং, দক্ষিণ পূর্ব দিকে ইয়িলান কাউন্টি এবং দক্ষিণ পশ্চিমে তাইওয়ান শহর। এটি সম্পূর্ণ তাইপে ঘিরে।
২০১০ সালে নিউ তাইপে সিটি তাইপে কাউন্টি নামে পরিচিত ছিল। তাইপে সিটির মেয়র এরিচ চু-এর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে নতুন তাইপে শহর হিসাবে ইংরেজিতে নাম লেখার জন্য অনুমতি পান। ১৬২০ সালের প্রথম দিকে চীনের মূল ভূখ-ের মানুষদের দ্বারা রেকর্ডকৃত অভিবাসনটি স্থানীয় উপজাতিদের কর্তৃক পরিচালিত হয়েছিল। অনেক বছর ধরে বেশিরভাগ অধিবাসী সাধারণ জনসংখ্যার সাথে মিলে মিশে বাস করেছিল।
তাইওয়ানের কিং রাজবংশের শাসন আমলে চীনা জনগণ ১৬৯৪ সালে নতুন তাইপে শহর হিসাবে চিহ্নিত এলাকাটিতে বসতি স্থাপন শুরু করে এবং মূল ভূখ- চীন থেকে অধিবাসীদের সংখ্যা আরো বাড়িয়ে দেয়। ১৮৫০ সালে এ সিটি একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক বন্দর হিসাবে আবির্ভূত হয়। ব্রিটিশ কন্স্যুলেট অফিসগুলো এ অঞ্চলে বেশ ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর ফলে চা ব্যবসার বেশ উন্নতি সাধিত হয়। ইউরোপে বিশাল পরিমাণ চা পাতা রপ্তানি হয়েছিল।
১৮৭৫ সালে ংযবহ াধড়ুযবহ ঃধরঢ়বয প্রিফেকচার প্রতিষ্ঠার আহবান জানান। ১৮৮৭ সালে ফুজিয়ান- তাইওয়ান প্রদেশ ঘোষণা করা হয় এবং বর্তমানে তাইপে শহর এলাকাটি তাইপে প্রিফেকচারের আওতায় পড়ে। ১৮৯৫ সালে তাইওয়ানকে জাপানের সা¤্রাজ্য কিং-এর রাজবংশ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত করা হয়। জাপানী শাসনামলে নতুন তাইপে শহর এলাকাটি তেহকু প্রিফেকচারের অধীনে আধুনিক দিনের তাইপে, কিলুং এবং ইয়িলান কাউন্টি কর্তৃক পরিচালিত হয়েছিল।
১৮৯৬ সালের অক্টোবরে জাপানী সরকার কিলুং মাউন্টেন-কে চারটি জায়গায় বিভক্ত করেছে। ১৯৪৫ সালের অক্টোবরে জাপান থেকে চীন প্রজাতন্ত্রের চীনা অংশ হস্তান্তর করার পর একই বছর ২৫ ডিসেম্বর থেকে বর্তমান নতুন তাইপে শহর তাইপে কাউন্টি হিসাবে পরিচালিত হয়। ১৯৪২ সালের জুলাই মাসে বেইতু এবং শিলিন শহরে নতুন তৈরি প্রশাসনিক ব্যুরোর আঞ্চলিক অধিক্ষেত্রের আওতায় যখন তাইপে কাউন্টির আকার হ্রাস করা হয় তখন তার নামকরণ করা হয় ইয়াংমিংহান প্রশাসনিক ব্যুরো।
১৯৪৮ সালের জুলাই মাসে তাইপে কাউন্টির আকার ২০৫.১৬ কিলোমিটারে বিস্তৃত হয়। বর্তমানে তাইপে সিটির অধীনে ১০টি কাউন্টি রয়েছে। যেমন: বনকিয়াও, লুজহু, সানচং, শুলিন, তুচেন, জিজি, জিন্দিয়ান ইত্যাদি। শহরটি আর্দ্র উষ্ণ আবহাওয়ার শহর হিসাবে বিবেচিত এবং সারা বছর জুড়ে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়। তাপমাত্রা সাধারণত বছরের পর বছর ধরে উষ্ণ থেকে গরম থাকে। শীতকালে তাপমাত্রা কখনো কখনো ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়। এ শহরে জানুয়ারী মাস শীতলতম মাস আর জুলাই মাস সাধারণত উষ্ণতম মাস হিসেবে বিবেচিত।
তাইওয়ানের সবচেয়ে উঁচু ভবন তাইপে ১০১ এর ৮৯ তম তলায় উঠলাম ৩৭ সেকেন্ডে। আমরা ডেলিগেটরা সবাই চারদিকে ঘুরাঘুরি করলাম। এত উঁচু ভবনে উঠলাম আর স্মৃতির বাতিঘর হিসাবে একটি ছবি তুলবো না, তা কি হয়?
অগত্যা পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে থাকা নির্ধারিত ফটোগ্রাফারদের কব্জায় পড়ে গেলাম। কিছু টুকটাক স্যুভেনিয়র নিলাম।

লেখক: সভাপতি, রাউজান ক্লাব জুনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), জেনারেল হাসপাতাল, রাঙ্গামাটি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট