চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

বিশ্ব মানবাধিকার দিবস

১০ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৪:০৩ পূর্বাহ্ণ

আজ বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের এই দিনে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে এই দিনটিকে জাতিসংঘ বিশ্ব মানবাধিকার দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়। সেই থেকে বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার দিবস পালিত হচ্ছে বহুমাত্রিক কর্মসূচির মাধ্যমে। মানবাধিকার দিবসের এ বছরের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘স্ট্যান্ড আপ ফর হিউম্যান রাইটস’। বিশ্বের অন্য দেশের মতো যথাযোগ্য মর্যাদায় বাংলাদেশেও নানামাত্রিক কর্মসূচিতে এ দিবস পালিত হচ্ছে। আলোচনা সভা, শোভাযাত্রাসহ নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। দুর্নীতি, অনিয়ম, সন্ত্রাস, যুদ্ধ, সংঘাত, হানাহানিসহ নানাভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে জনমত গঠন এবং মানবাধিকার রক্ষায় সাধারণ মানুষকে সচেতন করাই দিবসটি পালনের মূল লক্ষ্য। যদিও নানা কারণে ব্যাপকভিত্তিক লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়, তবে সাধারণ মানুষকে নিজের ও অন্যের মানবাধিকারের ব্যপারে সচেতন করা গেলে, একইসঙ্গে মানবাধিকার রক্ষার ব্যাপারে জনঐক্য তৈরি হলে কিছুটা হলেও মানবাধিকার পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব।
সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা ছিলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধপরবর্তী নবরূপে সৃষ্ট জাতিসংঘের অন্যতম বড় অর্জন। মানবাধিকার প্রতিটি মানুষের এমন এক ধরনের অধিকার যেটা তার জন্মগত ও অবিচ্ছেদ্য। মানুষ এ অধিকার কোনো ধরনের বাধাহীনভাবে ভোগ করবে এবং চর্চা করবে। মানবাধিকার সব জায়গায় এবং সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। এ অধিকার একই সাথে সহজাত ও আইনগত অধিকার। স্থানীয়, জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক আইনের অন্যতম দায়িত্ব হলো এসব অধিকার রক্ষণাবেক্ষণ করা। কিন্তু বাস্তবে কী তা হচ্ছে? আজ দেশে দেশে জাতিগত, বর্ণগত নিপীড়ন চলছে। আমাদের পাশর্^বর্তী দেশ মিয়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গারা জেনোসাইডের শিকার হয়ে পাড়ি জমিয়েছে বাংলাদেশে। স্বয়ং রাষ্ট্রই সেনাবাহিনী এবং উগ্রবাদীদের দিয়ে রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পাশবিক গণহত্যা চালিয়েছে। সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে রোহিঙ্গাদের বাড়ি-ঘরে আগুন দিয়েছে, সহায়-সম্পত্তি কেড়ে নিয়েছে, পৈশাচিক কায়দায় নারীদের ধর্ষন করেছে। একটা পর্যায়ে বারো লক্ষাধিক রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে এসেছে বাংলাদেশে। মানবতার বিরুদ্ধে পরিচালিত এসব অপকর্মের প্রমাণ মিলেছে জাতিসংঘের অনুসন্ধানেও। কিন্তু দুঃখজনকভাবে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার রক্ষায় বলিষ্ঠ কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল তো অর্ধশতাধিক বছর ধরেই খুন, গুমসহ ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালাচ্ছে। জায়নবাদী এই দেশটি শিশুদেরকেই হত্যার প্রধান টার্গেট করলেও জাতিসংঘ মাঝেমধ্যে নিন্দা জ্ঞাপন ছাড়া কোনো প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। এভাবে পৃথিবীর দেশে দেশেই চলছে জাতিগত ও বর্ণগত নিধনযজ্ঞ। ভূলুন্ঠিত হচ্ছে সাধারণ মানুষের মানবাধিকার। কিন্তু জাতিসংঘ কিছুই করতে পারছে না। এতে নির্যাতনকারীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
আমাদের দেশেও নানাভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। জঙ্গি-সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের অপতৎপরতা, দুর্নীতি, অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম, নারীনির্যাতন, ধর্ষণ, ভেজাল-দূষণসহ নানাভাবেই সাধারণ মানুষ ক্ষতি ও হয়রানির শিকার হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার চেষ্টা করছে সব দুর্বৃত্তায়ন রুখতে। মাস কয়েক আগে শুরু করা হয়েছে দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান। এতে সাফল্যও এসেছে। তবে এখনো কাক্সিক্ষত সাফল্য আসেনি। আশার কথা হচ্ছে, সরকার শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত রেখেছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো চিহ্নিত করে প্রতিবিধানের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তবে কাক্সিক্ষত ফল পেতে সাধারণ মানুষের সচেতনতা এবং ঐক্যও দরকার। আমরা মনে করি, রাষ্ট্রের পাশাপাশি মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখা সকলের দায়িত্ব। মানবাধিকার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় ভুক্তভোগীদের প্রতিকার পাওয়ার পথ সুগম করতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনসহ মানবাধিকার সুরক্ষর কাজে নিয়োজিত বেসরকারি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, সিভিল সোসাইটি, গণমাধ্যম, মালিক ও শ্রমিক ংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট সবাই আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলে একইসঙ্গে সাধারণ মানুষ সচেতন, দায়িত্বশীল ও ঐক্যবদ্ধ হলে মানকাধিকারচিত্রের আশানুরূপ উন্নতি হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট