চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিন বেসামাল নিত্যপণ্যের বাজার

৮ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৫:০৯ পূর্বাহ্ণ

মুনাফাশিকারিদের অপতৎপরতায় এখন বেসামাল হয়ে পড়েছে নিত্যপণ্যের বাজার। গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন এবং টিসিবির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বাজার দরের তালিকা অনুযায়ী চালসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। আর এসব পণ্যের দাম বাড়ছে কোনো কারণ ছাড়াই। চালের মূল্য বৃদ্ধির জন্যে পাইকারি ব্যবসায়ীরা দোষ চাপাচ্ছে মিল মালিকদের ঘাড়ে। তাদের অভিযোগ, মিল-মালিকরা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়াচ্ছে। সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অন্যসব নিত্যপণ্যের দামও।

কিন্তু কিছু হুংকার ছাড়া বাজার নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর তৎপরতা নেই বললেই চলে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মুনাফাশিকারিরা ‘আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ’ হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় স্বল্প আয়ের পরিবারগুলো বাড়তি চাপের শিকার হচ্ছে। এমন বাজারচিত্র দুঃখজনক। সন্দেহ নেই, এতে স্বল্প আয়ের মানুষদের দুর্ভোগের পরিধি আরো বাড়বে।
বাজার বিশ্লেসকদের ধারণা, নিয়ন্ত্রণে সঠিক পদক্ষেপ না থাকার কারণেই প্রতি দিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী অনেক পণ্য ইতোমধ্যে মধ্যবিত্তদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। গরীব মানুষের প্লেট থেকে ধীরে ধীরে সবজিও উধাও হয়ে যাচ্ছে। সবজি বাদ দিয়ে ডাল-ডিম খাবে, তারও জোঁ নেই। ডিমের বাজারও অস্থির। অথচ ডিমের এখন যথেষ্ট উৎপাদন। অস্থির মাছ-মাংসের বাজারও। পেঁয়াজের বাজার তো আড়াই মাস ধরেই অস্থির। বেড়েছে প্রায় সব ধরণের চালের দাম।

বাকি নিত্যপণ্যগুলোর কয়েকটি বাদে সবগুলোর দামও উর্ধমুখী। বাড়িভাড়া ও আনুষঙ্গিক খরচ তো আগেই বেড়েছে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবও এসে গেছে। ফলে ঊর্ধ্বমুখী খরচে পৃষ্ট হচ্ছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত লোকদের জীবন। সংবাদমাধ্যমের খবর বলছে, আয়ের সাথে ব্যয়ের বিস্তর ফারাকের কারণে শহরে বসবাসকারী অনেকেই পরিবারের সদস্যদের গ্রামে পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। সবচেয়ে বেশি চাপে আছেন সীমিত আয়ের এবং খেটে খাওয়া মানুষরা। নিত্যপণ্যের বেসামাল ঊর্ধ্বগতির কারণে নি¤œআয়ের মানুষদের অনেকেই এখন টিসিবির ট্রাকের দিকে ছুটছেন। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ট্রাক আসার আগেই লাইনে দাঁড়াচ্ছেন খেটে খাওয়া মানুষ। ট্রাক আসতেই শুরু হয় হুড়োহুড়ি। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় করে তারা টিসিবির ট্রাক থেকে কিনছেন পেঁয়াজ, চিনি, মসুর ডাল, সয়াবিন তেল ইত্যাদি। আবার তাও সীমিত পরিমাণে। অনেক সময় দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও মিলে না কাক্সিক্ষত পণ্য। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। দুর্ভোগের কারণে ব্যবসায়ীদের প্রতি সাধারণ মানুষের ঘৃণারও বহির্প্রকাশ ঘটছে নানাভাবে। দিনকয়েক আগে চট্টগ্রামে কারসাজি করে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের প্রতি জনঘৃণা প্রকাশ করতে ব্যতিক্রমী কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এতে অসাধু ব্যবসায়ীদের কুশপুত্তলিকা তৈরি করে তাতে ঝাড়ু ও জুতা নিক্ষেপ করা হয় এবং থুথু ছিটানো হয়। বস্তুত নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশের নাগরিক সমাজের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা কারসাজির মাধ্যমে একদিকে জনগণের পকেট কাটছে, অন্যদিকে টাকা পাচার করছে। এতে স্বল্প আয়ের মানুষদের কষ্টের পরিধি বাড়ছে, সরকার বিব্রত হচ্ছে, দেশের ক্ষতি হচ্ছে।

কনজিউমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলছে, আমাদের দেশের অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা সারাবছর কিছু না কিছু পণ্যের সংকট সৃষ্টি করে। ইচ্ছাকৃত এই সংকটের কারণে পণ্যের দাম দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এই পরিস্থিতির জন্যে বাজার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি সংস্থাগুলো দায় এড়াতে পারে না। ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামত দাম বৃদ্ধি বা মজুদ করলেও প্রশাসনের কোন নজরদারি নেই। ফলে অসাধু ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

আমরা মনে করি, নিত্যপণ্যের বাজার সহনীয় করতে কার্যকর কর্মপন্থা অবলম্বন জরুরি। অসৎ ব্যবসায়ীরা জনগণকে পুঁজি করে অবৈধ মুনাফার পাহাড় গড়বে, তা কিছুতেই হতে দেয়া যায় না। এ অবস্থায় বাজার তদারকিতে মাঠপর্যায়ে বাড়াতে হবে কঠোর নজরদারি। পাশাপাশি টিসিবির ডিলারদের কার্যক্রমও জোরদার করতে হবে। নিয়মিত করা দরকার খোলা বাজারে পণ্যবিক্রি, ওএমএস কার্যক্রম। একই সঙ্গে নিশ্চিত করা প্রয়োজন সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কর্মসূচিগুলোর মাঠপর্যায়ে কঠোর নজরদারি। অতি মুনাফালোভীচক্রের কারণে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জীবনে দুরবস্থা নেমে আসবে, তা কারো কাম্য হতে পারে না। যেভাবেই হোক, জনগণকে এই জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার করতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট