চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পেঁয়াজের ঝাঁজ

সাইমুম চৌধুরী

৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৪:১০ পূর্বাহ্ণ

রান্না বান্নায় মুখ রোচক ও স্বাদ বাড়া নোর জন্য বাসা বাড়িতে গিন্নীরা এবং রেস্তোরায় পাচকরা মাছ মাংসে পেঁয়াজ ব্যবহার করে থাকেন। পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে এই পেঁয়াজ এখন জাতে উঠেছে। পত্র-পত্রিকার হেড লাইনে স্থান করে নিয়েছে।

অফিস আদালতে অলস মুহূর্তের চাকরিজীবীদের আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। তাই সরকার জনরোষ নিয়ন্ত্রণের জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণে একেবারে বিমানে করে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেছে। এই সুবাদে পেঁয়াজের বিমানে চড়ার ভাগ্য খুলে গেল। বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানী করা পেঁয়াজ এলেও পেঁয়াজের দাম কমেনি বরং পূর্বের দামেই পেঁয়াজ অদ্যাবধি বিক্রি হচ্ছে। গত ২৬ নভেম্বর পত্রিকান্তে জানা যায় ভাল মানের দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৪০-২৫০ টাকায়। মিয়ানমারের পেঁয়াজ ২২০-২৩০ টাকা, চীন ও মিশর থেকে আসা বড় পেঁয়াজ ১৬০-১৮০ টা। টিসিবি’র হিসেবে গেল বছর এ সময়ের চেয়ে বর্তমানে বাজারে ৪২৩ শতাংশ বেশি মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। সমাজে এক শ্রেণীর অতি উৎসাহী লোক আছেন যাঁরা বাছবিচার না করেই বলে ফেললেন পেঁয়াজের পর এবার লবণের দামও বেড়ে যেতে পারে।

কথায় বলে হুজগে বাঙালি। আর তাই হলো, পেঁয়াজের পর লবণের দামও বেড়ে গেল। কোন প্রকার চিন্তা ভাবনা না করে কেউ কেউ ১০০ টাকা কেজিতে ২/৪ কেজি লবণ কিনে নিলেন। প্রকৃতপক্ষে লবণের বাজারমূল্য বাড়েনি। বর্তমানে খোলা লবণ ৩৫ টাকা এবং প্যাকেটজাত লবণ এক কেজি ৪০ টাকা। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের তড়িৎ ব্যবস্থাগ্রহণের ফলে লবণ ব্যবসায়িরা সুবিধা করতে পারেনি। আবার ফিরে আসি পেঁয়াজ বিষয়ে। আকাশ পথে উড়িয়ে আনার পরও পেঁয়াজের বাজার পূর্ববৎ রয়ে গেল। পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে মাঠে নামে জাতীয় রাজস্ববোর্ড শুল্ক গোয়েন্দারা চাঁপাই নবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, বগুড়া ও সাতক্ষীরার ১৪ জন পেঁয়াজ আমদানিকারককে বিভিন্ন তথ্য জানতে ডাকা হয়। ওই সব পেঁয়াজ আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে এন, বি. আরের অভিযোগ হলো আমদানি করা পেঁয়াজ অবৈধভাবে মজুদ করে রেখেছে। তাঁরা গত সাড়ে তিন মাসে কমপক্ষে এক হাজার টনের বেশি পেঁয়াজ আমদানি করেছে। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, শুল্ক ফাঁকি নয়, পেঁয়াজের মজুত অনুসন্ধানের জন্য গোয়েন্দারা এসেছেন। পত্রিকান্তে জানা যায়, কাস্টমস আইনে মজুতকারীর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান নেই। শুল্ক বিভাগের মূল কাজ হলো শুল্ক ফাঁকি ধরা। এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনিস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন ‘আমদানিকারকদের এভাবে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা খারাপ দৃষ্টান্ত। ব্যবসায়ীদের হয়রানি করে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে খুব একটা কাজ হবে না। যেটুকু মজুত আছে তাও আত্মগোপনে চলে যাবে। এটা সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। তাঁর মতে, কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ না করে বাজারের উপর ছেড়ে দেয়া উচিত।

এই সমস্যা ভাসমান মেঘের মতো চলে যাবে। এক মাস পরেই দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসবে।’ কৃষি প্রধান দেশ বাংলাদেশের কৃষক শ্রমিক প্রতিদিন সকালে এক থালা পান্তা লবণ, মরিচ, পেঁয়াজ দিয়ে মেখে খেয়ে নিয়ে কাজে লেগে যায়। সেই মানুষগুলো এখন লবণ মরিচ মেখেই পান্তা খেতে হবে। দেশে টিসিবি ছাড়াও ২/৩টি সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যাদের কাজ হলো বাজার মনিটরিং করা। তাদের কাজের গাফিলতির জন্য পেঁয়াজের মজুদ বিষয়ক খবরটি সরকার সঠিক সময়ে পায়নি। আর তাই মজুদদার পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা লাভবান হয়েছে। অন্যদিকে ক্রেতাসাধারণ ভোগান্তিতে পড়েছে। ভবিষ্যতে ক্রেতাসাধারণ যাতে এরূপ ভোগান্তিতে না পড়ে এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে আরো তৎপর হবার অনুরোধ রইল।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট