চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা ও জনদুর্ভোগ

অধ্যাপক রতন কুমার তুরী

১ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ২:০৩ পূর্বাহ্ণ

কিছুতেই কমানো যাচ্ছেনা পেঁয়াজের দাম। সরকারের কড়া নজরদারিতেও পেঁয়াজের মূল্য বাড়তিই আছে। সাম্প্রতিক পেঁয়াজ আড়তদারদেরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় এনেছে। তাতেও কোনো লাভ হয়নি। প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশের শতকরা ৫০ভাগ পেঁয়াজই আমদানি করা হয় ভারত থেকে স্থল পথে। গত অক্টোবর মাসে ভারত সরকার তাদের পেঁয়াজ ঘাটতির কারণে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিলে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। এ বিষয়ে সরকার মিশর, পাকিস্তান, তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানি করলেও পেঁয়াজের দাম যেনো নিয়ন্ত্রণে আসছেই না। এ সুযোগে কিছু অসাধু পেঁয়াজ ব্যবসায়ী পেঁয়াজ গুদামজাত করে তা আবার নদীতে ফেলে দেয়ারও খবর আমরা দেখেছি। এখন প্রশ্ন হলো পেঁয়াজের আদৌ কি এতটুকু মূল্য হওয়া উচিত? যে পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হতো এক লাফে ২০০ টাকায় ওঠে যাওয়া তা কতটুকু যৌক্তিক?

এমনকি অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আসার পরও কেনো এ পেঁয়াজের দাম কমছে না? অনেকেই মনে করছেন ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেও বাংলাদেশের পেঁয়াজের মূল্য এতো বেশি হওয়ার কথা নয়। কারণ পেঁয়াজ মায়ানমার থেকে সহজেই আসছে। এক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক দুষ্টুচক্র কিংবা অসাধু সিন্ডিকেট কাজ করছে কিনা তা সরকারকে গভীরভাবে তলিয়ে দেখতে হবে। কারণ অনেক সময় রাজনীতির সাথে দুষ্টুচক্র যুক্ত হয়ে দেশের বাজার ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে এতে করে দ্রব্যমূল্য বাড়তে থাকে। অন্যদিকে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের সাথে সাথে সরকারের উচিত ছিল তৎক্ষণাৎ যে কোনো জায়গা থেকে পেঁয়াজ এনে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক করা। দেখা গেছে, প্রয়োজনের সময় বাজারে পেঁয়াজের যোগানের মধ্যে বিস্তর ফারাক ছিল ফলে অর্থনীতির নিয়মেই পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। এই সময় কিছু অসাধু পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সুযোগ নিয়েছে।

অর্থাৎ দাম বাড়ার আগে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো বাস্তব পরিকল্পনা ছিল না। একটি আগাম পরিকল্পনা থাকলে পেঁয়াজের এমন লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি হয়ত ঠেকানো যেতো। অন্যদিকে ভারত কোনো আগাম সতর্কবার্তা ছাড়া বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেও আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতা সেখানে কাজে আসেনি, অথচ ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক ভালো ছিল।

পেঁয়াজের এমন লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে আমাদের এখন থেকেই চিন্তাভাবনা করতে হবে।
পেঁয়াজ আমদানিতে বৈদেশিক নির্ভরতা কমিয়ে দেশে পেঁয়াজ চাষীদের অধিক চাষে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

প্রয়োজনে কৃষি অধিদপ্তর তাদের নিজস্ব অর্থায়নে পেঁয়াজ চাষ করে উন্নত বীজের সন্ধান দিতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের উচিৎ হবে ভর্তুকি দিয়ে হলেও খোলা বাজারে কমমূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করা এতে পেঁয়াজের দাম কিছুটা হলেও কমবে। আমরা সরকারের কাছে প্রত্যাশা করবো তারা যেনো নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে পেঁয়াজের বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে জনগণকে পেঁয়াজে লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধি থেকে বাঁচায়।

অধ্যাপক রতন কুমার তুরী
কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক, মানবাধিকারকর্মী।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট