চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

হলি আর্টিজান জঙ্গিহামলা মামলার ঐতিহাসিক রায়

২৮ নভেম্বর, ২০১৯ | ৩:৪৬ পূর্বাহ্ণ

বহুল আলোচিত হলি আর্টিজান হামলা মামলার ঐতিহাসিক রায় ঘোষিত হয়েছে গতকাল। রায়ে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার সাথে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত থাকার সাক্ষ্য-প্রমাণ সাপেক্ষে সাত জঙ্গিকে মৃত্যুদ- দিয়েছেন। এছাড়াও প্রত্যেক আসামিকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়। তবে আট আসামির মধ্যে এক আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে। রায়ে জনপ্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেছে। সন্দেহ নেই, এই রায় জঙ্গিদের কাছে একটি কঠোর বার্তা দেবে; একইসঙ্গে সন্ত্রাস প্রতিরোধ ও জঙ্গিবাদের প্রসার রোধে ভূমিকা রাখবে। জঙ্গিহামলার বিচারের ক্ষেত্রেও এ রায় একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

উল্লেখ্য, ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের ১ জুলাই রাত পৌনে ৯টায় হলি আর্টিজান বেকারিতে অতর্কিতে আক্রমণ করেছিলো জঙ্গিরা। তারা ভেতরে থাকা সবাইকে জিম্মি করে ফেলে। একে একে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে ১৭ বিদেশি ও তিন বাংলাদেশিকে হত্যা করেছিলো তারা। সেখানে তাৎক্ষণিক অভিযান চালাতে গিয়ে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা। আহত হন র‌্যাব-১-এর তৎকালীন অধিনায়ক লে. কর্নেল তুহিন মাসুদ, পুলিশের গুলশান অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার আবদুল আহাদসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য। পরে অভিযানে পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়। ভয়াবহ এই হামলার ঘটনা স্তম্ভিত করেছিল পুরো বাংলাদেশকে। হলি আর্টিজানে হামলা বৈশ্বিক মানচিত্রে বাংলাদেশকে স্থান করে দিয়েছিল পুরোপুরি আকস্মিকভাবে। ওই হামলার পরপরই পশ্চিমা দূতাবাসগুলো এ দেশে ভ্রমণের ব্যাপারে সতর্কতা জারি করেছিল। তবে সন্ত্রাসের ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকারের জোরালো উদ্যোগে পরিস্থিতি বদল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদেশিদের সেই সতর্কতার মাত্রাও বদলে যায়। ঐ ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গুলশান থানায় মামলা দায়ের করে পুলিশ। দুই বছরের বেশি সময় ধরে তদন্তের পর ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের ২৬ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। একই বছরের ২৩ জুলাই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম বিভাগের পরিদর্শক হুমায়ূন কবির মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতের জিআর শাখায় মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে ২৬ জুলাই সিএমএম আদালত মামলাটি ট্রাইব্যুনালে বদলির আদেশ দেয়।

অভিযোগপত্রে নাম থাকা ২১ আসামির মধ্যে ১৩ জন মারা যাওয়ায় তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। নিহত ১৩ জনের মধ্যে আট জন বিভিন্ন অভিযানে এবং পাঁচ জন ঘটনাস্থলে নিহত হয়। ওই জঙ্গি হামলার ঘটনায় করা মামলায় ২১১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১১৩ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। গত বছরের ২৬ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ওই জঙ্গি হামলা মামলার বিচার শুরু হয়। গত ১৭ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে বিচারক রায় ঘোষণার জন্য ২৭ নভেম্বর দিন নির্ধারণ করেন। সে অনুযায়ী রায় ঘোষিত হয়েছে। আদালত বলেছেন, হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গিরা নিষ্ঠুর, নারকীয় ও দানবীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। তথাকথিত জিহাদের নামে নৃশংসতার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটায় তারা। রায়ে জনপ্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেছে। আশা করা যায়, এ রায় বাংলাদেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী তৎপরতা রোধে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে।

হোলি আর্টিজান হামলাকে ‘জঘন্য ঘটনা’ উল্লেখ করে আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছেন, কলঙ্কজনক এ হামলার মধ্য দিয়ে জঙ্গিরা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চরিত্রহননের চেষ্টা করেছিল। জঙ্গিদের লক্ষ্য ছিল, এই হামলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্ব জানান দেয়া। আদালতের এই পর্যবেক্ষণ তাৎপর্যপূর্ণ। যারা এ ধরনের হামলা চালিয়ে বর্বরতার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে তাদের প্রতি অনুকম্পা জানানোর সুযোগ নেই। আমরা দ্রুত রায় কার্যকরের উদ্যোগ দেখতে চাই। একইসঙ্গে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে সরকারের আরো কঠোর পদক্ষেপ প্রত্যাশিত। রায় ঘোষণার পর আইএসের প্রতীক সম্বলিত টুপি পরে আদালত কক্ষ থেকে বের হতে দেখা গেছে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত এক আসামিকে। কীভাবে এমন ঘটনা ঘটলো? ব্যাপারটির গুরুত্ব বিবেচনায় তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। রায় ঘোষণার পর কোনোভাবেই যেন দেশের কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সজাগ থাকতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট