চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

প্রাথমিক শিক্ষা এবং শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য

কাজী আবু মো. খালেদ নিজাম

২৭ নভেম্বর, ২০১৯ | ২:৩৪ পূর্বাহ্ণ

আমরা সকলেই জানি, শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছতে সক্ষম হয় না। যে জাতি যত শিক্ষিত সে জাতি তত উন্নত। সব ধরনের শিক্ষার ভিত্তিমূল হলো প্রাথমিক শিক্ষা। মানুষ জীবনের শুরুতে এ শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে।

বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত যা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বাড়ানোর পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। এখন প্রাথমিক শিক্ষা এক যুগান্তকারী সময়ে প্রবেশ করেছে। নব্বই দশকের গোড়ার দিকে এদেশে প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করা হয়। বাড়ানো হয় নানা সুযোগ সুবিধা। বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে সরকার। দেয়া হচ্ছে পুরো সেট নতুন বই, উপবৃত্তি, মিড ডে মিল, নানা ধরনের শিক্ষাসামগ্রীসহ অনেক কিছু। পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষকদের নতুন ও আধুনিক প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হচ্ছে। দক্ষ ও চৌকস কর্মকর্তাও নিয়োগ পেয়েছেন, পাচ্ছেন প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ে।এতকিছুর পরও প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতনবৈষম্য কোনভাবেই দূর হচ্ছেনা। বেতন বৈষম্য জিঁইয়ে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতাহীনতাকেই দুষছেন শিক্ষকরা।

সবদেশেই প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাকে শিক্ষার ভিত্তিমূল ধরা হয় যা আমাদের দেশেও ব্যতিক্রম নয়। বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে সরকারিকরণের কারণে সারাদেশের প্রায় সব প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণের আওতায় এসেছে। এবং তাতে চাকরিরত রয়েছেন লক্ষ লক্ষ শিক্ষক। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে কর্মরত প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের বেতন ভাতা নতুন স্কেলে বাড়ানো হয়। প্রধান শিক্ষকদের দেওয়া হয়েছে দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা। সহকারি শিক্ষকদের তৃতীয়তেই রাখা হয়েছে। মূলত: নতুন বেতন স্কেলের মাধ্যমে অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে শিক্ষকদের মাঝে চরম বেতন বৈষম্যের সৃষ্টি করা হয়েছে বলে মনে করেন প্রাথমিক শিক্ষকগণ।

বেতন বৈষম্য কমানোর জন্য নানা চেষ্টা তদবির করেছেন সহকারী শিক্ষক সংগঠনগুলো। শহীদ মিনারে দেশের হাজার হাজার প্রাথমিক সহকারি শিক্ষক তাদের কর্মসূচি পালন করেছেন। করেছেন আমরণ অনশনও। মাননীয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রীর পর্যায়ক্রমে বেতন স্কেল নির্ধারণের আশ্বাসে অনশন ভঙ্গ করলেও কাক্সিক্ষত কোন অগ্রগতি হয়নি। অতি সম্প্রতি এই বেতন বৈষম্যের প্রতিবাদে আবারো প্রাথমিক শিক্ষকরা (প্রধান ও সহকারি যৌথভাবে) ধারাবাহিক কর্মসূচীর পর ঢাকায় শহীদ মিনারে মহাসমাবেশ করতে চাইলেও সেখানে তাদেরকে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি। উল্টো পুলিশ লাঠিচার্জ করে। আহত হন বেশকিছু শিক্ষক। কিন্তু কর্তৃপক্ষের বোধোদয়তো হয়ইনি তার উপর বেতন স্কেল আরো নীচে নামিয়ে প্রধান শিক্ষকদের ১১ তম ও সহকারি শিক্ষকদের ১৩ তম গ্রেড প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেখানে শিক্ষকদের দাবি ছিল প্রধান শিক্ষকদের ১০ম ও সহকারী শিক্ষকদের ১১ তম গ্রেড প্রদান করার। কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি শিক্ষকনেতা ও সংগঠনের অনৈক্য এবং দালালি-দলাদলিও বৈষম্যের ক্ষেত্রে কম দায়ী নয়!
বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে উচ্চতর শিক্ষায় শিক্ষিতরা আসছেন সেটা প্রধান শিক্ষক হোক আর সহকারী শিক্ষক হোক।
এ ধরনের বৈষম্য বজায় থাকলে প্রাথমিক শিক্ষকতা পেশায় তারা আগ্রহ হারাবে। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বেতন বৈষম্য একটি বড় বিষয়। এদিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পুরোনো পদ্ধতির ক্লাশ রুটিন (যাতে বিরতিহীনভাবে ক্লাশ নিতে হয় শিক্ষকদের), বার্ষিক ছুটির তালিকা (যেখানে জাতীয় দিবসগুলোও সংযুক্ত) সহ নানা বিষয়ে অসামাঞ্জস্য বিদ্যমান রয়ে গেছে। এসব সমস্যা নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে সাফল্য ধরে রাখতে হলে বিজ্ঞানসম্মত ক্লাশ রুটিন প্রণয়ন, শর্তহীন শতভাগ উপবৃত্তি প্রদানের পাশাপাশি শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য নিরসন করতে হবে।
প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য একটি স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রদান করা সময়ের দাবি। হতাশা আর মানসিক কষ্টে যেন শিক্ষকগণ আর না ভোগেন সেদিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন।

কাজী আবু মো. খালেদ নিজাম
শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট