চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আরথ্রাইটিসের প্রকার ও প্রতিকার

অধ্যক্ষ ডা. রতন কুমার নাথ

২১ নভেম্বর, ২০১৯ | ২:১৪ পূর্বাহ্ণ

বর্তমানে পৃথিবীতে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে। ফলে বেড়ে চলেছে আরথ্রাইটিস রোগীর সংখ্যাও। দেখা গেছে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ২০ ভাগ মানুষ আজ ভোগেন আরথ্রাইটিস রোগে। কাজেই আজ বয়স্ক মানুষের অন্যতম মূল সমস্যা আরথ্রাইটিস। বয়েসকালে দু’ধরনের আরথ্রাইটিস দেখা দেয় (১)অসটিও আরথ্রাইটিস আর ২)রিউমেটয়েড় আরথ্রাইটিস। এই দু’ধরনের আরথ্রাইটিসেই পুরুষের তুলনায় মহিলারাই ভোগেন বেশি। অসটিও আরথ্রাইটিস বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দেয়। ৬৫ বছরের বেশি বয়স্ক মানুষের মধ্যে ১০% এরও বেশি এই অসুখের শিকার।

আরথ্রাইটিস শব্দটির দ্বারা সুনির্দিষ্ট কোনও অসুখকে বোঝানো হয় না। ব্যথা, গাঁটের যন্ত্রণা ও আড়ষ্ঠতা এইসব উপসর্গকে সাধারণত আরথ্রাইটিস বলা হয়। রিউম্যাটিজিমের ক্ষেত্রেও তাই। পেশিতে, গাঁটে বা দেহের অন্যান্য অঙ্গে যন্ত্রণা, আড়ষ্ঠতা ইত্যাদি বোঝানোর জন্য শব্দটি ব্যবহার করা হয়। অধিকাংশ সাধারণ মানুষ তো বটেই, অনেক ডাক্তারের মধ্যেও এই শব্দটি দুটিকে সুনির্দিষ্ট অর্থে প্রয়োগ না করার দিকে ঝোঁক থাকে।

অসটিও আরথ্রাইটিসের প্রকৃত কারণ আজ অস্পট। তবে এই অসুখটিকে বর্ণনা করা যেতে পারে গাঁটের সঞ্চালনের আড়ষ্ঠতা হিসেবে। অনেক জীব বৈজ্ঞানিক কারণের যে কোনও একটির জন্য এই অসুখ হতে পারে। পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের এই অসুখে পড়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ। এই রোগে সাধারণত ভোগেন ৫০ বছরের বেশি বয়স্ক মহিলারা। এই অসুখ বিশে^র সমস্ত দেশে দেখা গেলেও বিশেষ কিছু জাতের মানুষ বেশি ভোগেন এই অসুখে। আর স্থুলতা এবং উচ্চ রক্তচাপ থাকলেও এই অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এপিডেমিওলজিক স্টাডিতে বার্ধক্য ছাড়াও অন্যান্য বেশ কিছু কারণ ধরা পড়েছে যার ফলে এই অসুখ হতে পারে। যেমন মহিলা হলেই এই রোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এছাড়াও শিক্ষার নি¤œমান, গাঁটে ছোট আঘাত বার বার একই ধরনের চাপ সহ্য করা আর গাঁটের ওপর অত্যাধিক চাপ, অতিরিক্ত স্থুলতা, গাঁটের যন্ত্রণা এবং ফুলে যাবার পুরনো অসুখ, বিপাক, ক্ষরণ ইত্যাদির সমস্যা, জেনেটিক এবং জন্মগত কোনও সমস্যা এবং ডেভলাপ মেন্টাল ডিফেক্টস বা বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে নানান সমস্যা-এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

মহিলারা হাঁটুর ব্যথায় কষ্ট পান অনেক সময় তাদের হাইহিল জুতোর জন্য। গবেষণায় দেখা গেছে আড়াই বা তার চাইতে উঁচু হিলের জুতো পরলে মহিলারা বাধ্য হন তাদের শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখার স্বাভাবিক পদ্ধতি বদলে ফেলতে। এর ফলে অত্যধিক চাপ পড়ে তাদের মালাইচাফি এবং থাইয়ের হাঁড়ে আর হাঁটুর জোড়ের ভেতরে। উচ্চ রক্তচাপ থাকলে মহিলাদের অসটিও-আরথ্রাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায় মেনোপজ অতিক্রান্ত হওয়ার পরে। কেননা মেনোপজের সময় হরমোনের ভারসাম্যে যে পরিবর্তন আসে তা থেকে অসটিও আরথ্রাইটিস হতে পারে। স্কুল অব পাবলিক হেলথ এর এক গবেষণায় দেখা গেছে কম বা মাঝবয়েসি মহিলা যাদের অতিরিক্ত ওজন এবং হাঁড়ের ঘনত্ব খুব বেশি তাঁদের অনেক বেশি

সম্ভাবনা থাকে মাঝ বয়েসে অসটিও আরথ্রাইটিসে পড়ার।

অসটিও আরথ্রাইটিস একবার শুরু হওয়ার পর তা অনেক বেশি ভয়ঙ্কর করে তোলে দেহের অতিরিক্ত ওজন। দেহের অতিরিক্ত ওজনের এক অন্যতম জটিলতা হিসেবে দেখা দেয় অসটিও আরথ্রাইটিস। এবং বার্ধক্যের শুরুতেই পঙ্গু হয়ে যাওয়ার জন্য এই অসুখটিই দায়ী। প্রথম ন্যাশনাল হেলথ সার্ভের তথ্য অনুসারে অস্থুলকায় মহিলাদের তুলনায় স্থুল মহিলাদের হাঁটুর অসটিও আরথ্রাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে চারগুণ। আর স্থূল পুরুষদের ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা পাঁচগুণ। অনেকেই মনে করেন বার্ধক্যে অসটিও আরথ্রাইটিস অনিবার্য। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি অল্প বয়েসের নানা খারাপ অভ্যাসের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে এর ভ্রুণ। অসটিও আরথ্রাইটিস যদি প্রথম অবস্থায় ধরা পড়ে তা হলে সঠিক পদ্ধতিতে ব্যায়াম ও ওজন কমানোর মধ্য দিয়ে সহ্যের মধ্যে অনেকটা এনে দিতে সাহায্য করে। এ রোগে যে ওষুধগুলি বেশি ব্যবহৃত হয়। ১) মেড্রোহিনাম, ২)রডোডেন্ড্রন, ৩)রাসটস্ক, ৪)ব্রায়োনিয়া, ৫)থুজা, ৬)টিউবারকুলিনাম, ৭)ক্যালকেরিয়া ফ্লোর উল্লেখযোগ্য। তারপরেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। না হলে হিতে বিপরীত হয়।

অধ্যক্ষ ডা. রতন কুমার নাথ
সাবেক অধ্যক্ষ ডা. জাকির হোসেন হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট