চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

নিরাপদ রেলপথ চাই

অ্যাডভোকেট মো. সাইফুদ্দীন খালেদ

২০ নভেম্বর, ২০১৯ | ২:১৫ পূর্বাহ্ণ

সারা বিশ্বে নিরাপদ, সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব ও টেকসই পরিবহন ব্যবস্থা হিসাবে রেলের গুরুত্ব অপরিহার্য। পরিবেশগত, অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানব সম্পদ উন্নয়ন তথা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম। সড়ক পথের চেয়ে রেলপথ নিরাপদ হিসাবে মানুষ রেলপথে যাত্রা করতে চায়। কিন্তু উদ্বেগজনক ব্যাপার হচ্ছে, আমাদের দেশে রেলযাত্রা ক্রমেই হয়ে উঠছে ঝুঁকিপূর্ণ। রেলপথে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। অরক্ষিত লেভেলক্রসিংয়ে ট্রেনের সঙ্গে বাস বা অন্য যানবাহনের সংঘর্ষ হচ্ছে, প্রায়ই লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটছে। দুই ট্রেনের সংঘর্ষের ঘটনাও কম নয়। সেই সঙ্গে বাড়ছে ট্রেনের ছাদে ভ্রমণকারীদের মৃত্যুর ঘটনা। ক্রসিংয়ে কিছু নামমাত্র প্রতিবন্ধক থাকলেও সেগুলো দেখার গেটম্যান নেই। নেই প্রয়োজনীয় অবকাঠামো।

রেল দুর্ঘটনার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। মুখোমুখি সংঘর্ষ, ট্রেন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া, লেভেল ক্রসিং, সিগনালিং ত্রুটি, লাইনচ্যুতিসহ নানা কারণে রেলপথে ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে লাইনচ্যুতির ৭৫ শতাংশই ঘটছে রেললাইনের কারণে। এর অন্যতম কারণ যন্ত্রাংশের সংকট ও রেলপথের যন্ত্রপাতি চুরি। পাশাপাশি রেলওয়ের সংশ্লিষ্টদের অবহেলা, লোকবল ঘাটতি, নিয়মিত তদারকি ও মেরামতের অভাব, রেলপথে মানসম্মত পর্যাপ্ত পাথরের স্বল্পতা ও ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর কারণেও ঘটছে দুর্ঘটনা। যাত্রী কল্যাণে নিয়োজিত বেসরকারী সংগঠন নৌ সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির পর্যবেক্ষণে এসব দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির পেছনে ছয়টি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। মোবাইল ফোনে আলাপরত অবস্থায় রেলপথ পারাপার, রেলপথ সংলগ্ন এলাকায় চলাচলের ক্ষেত্রে পথচারীদের সচেতনতার অভাব, রেলওয়ের অনুমতি ছাড়াই অপরিকল্পিত ও অবৈধ লেবেল ক্রসিং নির্মাণ, রেলপথ ক্রসিংগুলোর কর্মচারিদের দায়িত্ব পালনে গাফিলতি, কিছুসংখ্যক রেলসেতুসহ অনেক স্থানে রেলপথ দীর্ঘদিন সংস্কার না করা, দূরপাল্লার ট্রেনগুলোর চালকদের অসতর্কতা। তাছাড়া রেলে এখনও অভিজ্ঞ চালকের অভাব রয়েছে। এই ঘাটতির কারণে নতুন যারা আছে তাদের পর্যাপ্ত ট্রেনিং না দিয়ে চালকের আসনে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অভিজ্ঞ চালক সংকটের কারণে অনেকক্ষেত্রে তাদের অতিরিক্ত ডিউটি করতে হচ্ছে। যে কারণে ক্লান্ত চালকদের মাধ্যমে দুর্ঘটনা ঘটে।

সর্বশেষ ১৪ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বেলা তিনটার দিকে ঢাকা থেকে রংপুরগামী রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া স্টেশনে দুর্ঘটনায় পড়ে। এতে ট্রেনের ইঞ্জিন ও নয়টি বগি লাইনচ্যুত হয়। ইঞ্জিনসহ সামনের তিনটি বগিতে আগুন ধরে যায়। অনেকে আহত হয়।

প্রতিবছর দুর্ঘটনার এ হার বেড়েই চলেছে। এভাবে চলতে থাকলে যাত্রী সংকটে পড়বে রেল। সড়কপথে অহরহ দুর্ঘটনার কারণে অনেকেই এখন রেলপথের দিকে ঝুঁকছেন। ট্রেনকে তুলনামূলক নিরাপদ বাহন হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু ঘন ঘন দুর্ঘটনা ঘটতে থাকলে ট্রেন ভ্রমণে মানুষের সেই নিরাপত্তাবোধে যে চির ধরবে, তা বলাই বাহুল্য। নির্ধারিত গতির চেয়ে বেশি গতিতে ট্রেন পরিচালনা না করে সাবধানতার সাথে ট্রেন পরিচালনা করতে হবে যাতে হঠাৎ ব্রেক করতে না হয়। লেভেলক্রসিংয়ে সাময়িকভাবে স্থানীয়দের দৈনিকভিত্তিক প্রহরী নিয়োগ দেয়া যেতে পারে। দুর্ঘটনায় দায়ী সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনা দরকার। তদন্ত কমিটি কর্তৃক প্রদত্ত সুপারিশমালা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সকলকে তদন্তের কপি প্রেরণ করা দরকার। রেল লাইন নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। রেলওয়ের লোকবল বৃদ্ধি করতে হবে। প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে ট্রেন চলাচলের ক্ষেত্রে নানারকম প্রতিবন্ধকতা, অনেক ইঞ্জিনের আয়ুষ্কাল ফুরিয়ে যাওয়া, অদূরদর্শী পরিকল্পনা ইত্যাদি বহুবিধ কারণে রেলওয়ের দুরবস্থার কথা নতুন করে বলার কিছু নেই।
ঝুঁকিপূর্ণ রেল সেতু দ্রুত সংস্কার বা পুনঃনির্মাণ করা সহ দ্রুত আমাদের রেলপথ সম্প্রসারণ করতে হবে। ট্রেনের সংখ্যা বাড়াতে হবে। রেল এর শত বছরের সুনাম ধরে রাখতে অতি দ্রুত রেল দুর্ঘটনার চলমান হার কমাতে বা বন্ধ করতে রেল কর্তৃপক্ষকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।

অ্যাডভোকেট মো. সাইফুদ্দীন খালেদ আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট