চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

বিপর্যয় এড়াতে সচেতনতার বিকল্প নেই পাথরঘাটা ট্র্যাজেডি

১৯ নভেম্বর, ২০১৯ | ২:২৮ পূর্বাহ্ণ

দেশে প্রায়ই গ্যাসলাইন বা গ্যাস সিলিন্ডার ও সেফটিক ট্যাঙ্ক বিস্ফোরণজনিত হতাহতের খবর গণমাধ্যমে আসে। বলার অপেক্ষা রাখে না, গ্যাস বিস্ফোরণ ও দুঘর্টনা এখন অহরহই ঘটছে এবং এতে হতাহতের সংখ্যাও বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। কিন্তু জনসচেতনতার অভাব এবং সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতার কারণে এসব দুর্ঘটনা কাক্সিক্ষত পর্যায়ে কমিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও ঘটে চলেছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ও হতাহতের ঘটনা। গত রবিবার চট্টগ্রামের পাথরঘাটা ব্রিকফিল্ড রোডের এক আবাসিক ভবনের নিচতলায় মারাত্মক বিস্ফোরণে অন্তত সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়ে কয়েকজন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। এখনো এই ভয়াবহ বিস্ফোরণের কারণ জানা যায়নি। বিস্ফোরণের কারণ নিয়ে নানা মত আছে। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে আলাদা ৩টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারাই কারণ নির্ণয় করবে। তবে কারণ যাই থাকুক, বিস্ফোরণ ও প্রাণহানির ঘটনাটি নিঃসন্দেহে ভয়াবহ এবং দুঃখজনক।

দৈনিক পূর্বকোণে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, রবিবার সকালে পাথরঘাটার ব্রিকফিল্ড রোডের পাঁচতলা কুঞ্জমনি ভবনের (বড়–য়া ভবন) নিচতলা হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে ওই ভবনের নিচতলার দেয়াল ও সীমানা প্রাচীর ধসে রাস্তার ওপর পড়লে পথচারী ও যাত্রীরা হতাহত হন। ঘটনাস্থলেই মারা যান সাতজন। আহত হন অন্তত ২৪ জন। বিস্ফোরণের ভয়াবহতা এতোই শক্তিশালী ও ভয়াবহ ছিল যে বড়ুয়া ভবনে বিস্ফোরণের কারণে রাস্তার অপর পাশে অবস্থিত জসীম বিল্ডিংয়ের নিচতলার দোকানে গিয়ে পড়ে নিহত ও আহতদের অনেকে। এমনকি সেখানকার কলাপসিবল গেটসহ ভেঙে ওই ভবনের বেশ কিছু দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিটের ১০টি গাড়ি উদ্ধার কাজ শুরু করে। দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারীরা বলেছেন, পাঁচতলা বড়ূয়া ভবনের গ্যাসলাইন থেকেই বিস্ফোরণ ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক বলেছেন, যে বাড়িতে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেটির নিচতলার পাশে ছিল গ্যাসলাইন। প্রাথমিকভাবে তাদের মনে হয়েছে, লাইনটি অনেক পুরোনো। যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে গ্যাসলাইন টানা হয়নি। নিরাপত্তার বিষয়ে উদাসীন ছিলেন দায়িত্বশীলরা। তাদের ধারণা, গ্যাসলাইনের ব্যাসের তুলনায় চাপ বেশি ছিল। এ কারণে ঘটেছে এত বড় বিস্ফোরণ। সব পক্ষই দায়িত্বশীল থাকলে নিশ্চয়ই এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটতো না।

উল্লেখ্য, গ্যাসের জরাজীর্ণ লাইন, অরক্ষিত ও ঝুঁঁকিপূর্ণ সংযোগের কারণে ঘটছে একের পর এক গ্যাস দুর্ঘটনা। এতে প্রাণহানির পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান সম্পদ। একটি সহযোগী দৈনিকের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বলছে, দেশের ৭০ শতাংশ গ্যাস বিতরণ লাইনই ঝুঁকিপূর্ণ। স্থাপিত লাইনের অর্ধেকেরই মেয়াদ পেরিয়েছে বহু আগে। হয় না নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অবৈধ সংযোগ ও লাইন স্থাপন, যা গ্যাস নেটওয়ার্ককে করে তুলেছে অনিরাপদ। ফলে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। তবে বড়–য়া ভবনের দুর্ঘটনার পেছনে কোন কারণটি সক্রিয় ছিল তা এখনো স্পষ্ট নয়। সিডিএ বলছে নিয়ম মেনে ভবন তৈরি না করায় এমন দুর্ঘটনা ঘটছে। গ্যাস পাইপলাইনের লিকেজ থেকে এ বিস্ফোরণ ঘটতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হলেও কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তা নাকচ করে দিয়েছে। বিস্ফোরণের ভয়াবহতা বিশ্লেষণ ও রাইজার দেখে গ্যাসলাইন বিস্ফোরণে এই দুর্ঘটনা ঘটেনি বলে তারা দাবি করছে। উপরন্তু সেফটিক ট্যাংকে জমা গ্যাস থেকেই এমন ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে বলে দাবি তাদের। সিডিএর কর্মকর্তারাও বলছেন, ভবনের নিচে থাকা সেপটিক ট্যাংক বিস্ফোরণ থেকেই ভয়াবহ এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে। হয়তো তদন্ত কমিটিগুলো বিস্ফোরণের নেপথ্য কারণ নির্ণয় করবে। কিন্তু এ দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ক্ষতি পূরণ হবার নয়।
তবে এই দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে যেকোনো দুর্ঘটনা এড়ানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধকেই গুরুত্ব দিতে হবে। সব পক্ষই দায়িত্বশীল ও সতর্ক ভূমিকা পালন করলে এ ধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা অনেকটাই এড়ানো সম্ভব।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট