১৩ মে, ২০১৯ | ১:২৩ পূর্বাহ্ণ
অভিজাত হোটেল-রেস্তোরাঁর খাদ্য-সামগ্রীতে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির আভিজাত্য থাকারই কথা। এই পত্রিকার এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, এসব হোটেলের খাদ্যসামগ্রীতে এমন আশাবাদের কোনো সত্যতা নেই। প্রসঙ্গত, এদেশের একটি প্রবাদ বচনে আছে ‘উপরে ঠাটবাট, ভেতরে সদরঘাট’। এই বচনটি শ্লেষাত্মক। সমালোচনার দৃষ্টি দিয়ে বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিবর্গ কিংবা প্রতিষ্ঠান বিশেষের সাজসজ্জার অন্তঃসারশূন্যতা ও প্রতারণার প্রবণতাকেই এই লোকউক্তির মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। গত শুক্রবার জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে উন্মুক্ত হয়েছে আমাদের উচ্চমানের মাহাত্ম্যে পরিচালিত কিছু অভিজাত হোটেল-রেস্তোরাঁর খাদ্যসামগ্রী রান্নাঘরের খ- চিত্র। গাঁটের পয়সা খরচ করে আমাদের রোজাদারবৃন্দ চোখ ধাঁধানো আয়োজনের মধ্য থেকে ইফতারের জন্য পরিবারের সদস্যদের সামনে কী ধরনের তথাকথিত সুস্বাদু ইফতারী তুলে দিচ্ছেন, তা তাঁরা চিন্তাও করতে পারেন না।
গত শুক্রবার জেলা প্রশাসনের বাজার মনিটরিং টিম নগরীর জিইসি মোড় সংশ্লিষ্ট এলাকায় অভিযান চালায়। নামীদামী কয়েকটি হোটেল-রেস্তেরাঁর ইফতারী পণ্যের গুণ, মান ও প্রস্তুত প্রণালী সম্পর্কে যে চিত্র এই অভিযানে অংশগ্রহণকারী জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পতেঙ্গা সার্কেলের সহকালি কমিশনার (ভূমি) তাহমিলুর রহমান এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তৌহিদুল ইসলাম খুঁজে বার করলেন, তা রীতিমতো হতবাক ও স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার মতোই সংবাদ। খ্যাতনামা রেস্টুরেন্টগুলোর একাধিক ফ্রিজে পাওয়া গেছে ফ্রিজ ভর্তি রান্না-করা বাসি মাছ-মাংস। অতএব, লোকসমাজে ওই সমস্ত অভিজাত হোটেল ও এ সমস্ত ইফতারি পণ্যের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। রোজাদারবৃন্দ সারাদিনের সিয়াম সাধনার পর ইফতার করার সময় পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ খাদ্যই আস্বাদনের আশা করে থাকেন। তাই, তাঁরা বিশ^াস করেই অভিজাত হোটেল-রেস্তোরাঁর বৈচিত্র্যময় ইফতারি পণ্য কেনার জন্য আগ্রহী হন। অভিজাত রেস্তোরাঁগুলো সেই বিশ^াসের মর্যাদা রক্ষা না করেই, পবিত্র এই রমজান মাসেই, ধর্ম-নির্দেশনার তোয়াক্কা না করেই, প্রতারণামূলক ব্যবসায় নিয়োজিত হয়ে পড়েছেন। এটি সত্যিই বেদনাদায়ক এবং পবিত্র এই মাসের উপযুক্ত কর্ম নয়।
আমরা মনে করি না যে, আমাদের দেশের সৎব্যবসায়ীই এমন অধর্ম ও নীতি-নৈতিকতা হীনতার মাধ্যমে ব্যবসায় নিয়োজিত। আমরা মনে করি, আমাদের সৎব্যবসায়ীবৃন্দ প্রতারণামূলক ব্যবসার বিরুদ্ধে অবস্থান ও প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ নিয়ে আমাদের ক্রেতাশ্রেণীর বিশ^াস অক্ষুণœ রাখার এবং আস্থা অটুট রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। নৈতিক অধঃপতনের যে দৃষ্টান্ত অসাধু ব্যবসায়ীরা স্থাপন করেছেন, তা প্রতিরোধে এগিয়ে এসে ক্রেতাবৃন্দকে স্বাস্থ্য-নিরাপত্তা বিষয়ে আশ^স্ত করার উদ্যোগ নেবেন। হোটেল-রেস্তোরাঁয় বাসী ও পচা খাবার বিক্রি করা দ-নীয় অপরাধ। ইসলামের বিকাশের স্বর্ণযুগে খোলাফায়ে রাশেদার আমলেও এ ধরনের অপরাধের জন্য কঠোর দ-ের বিধান ছিল। কেবল অর্থদ-ে দ-িত করে ব্যবসা চালিয়ে যেতে দেওয়া উচিত কিনা ভেবে দেখা দরকার।
পবিত্র কুরআন কারীমেও বলা হয়েছে, মানুষকে খারাপ ও ত্রুটিযুক্ত জিনিস দিও না, দুনিয়াতে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না (সুরা শুয়ারা-১৮৩)। অসাধু ব্যবসায়ীরা সেই মহতী নির্দেশ অমান্য করেই জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি করে চলেছেন।
মানুষের বিশ^াস নষ্ট করা বড়ই গুনাহ’র কাজ। এই পবিত্র মাসে ইফতারের সময় মুখরোচক খাদ্য আস্বাদ করার আগ্রহ সঙ্গতিপন্ন মানুষদের থাকে। রোজার মাসে প্রতিদিনের ইবাদত-বন্দেগীর শেষে উন্নত মানের খাদ্য তারা ইফতারের আয়োজনে রাখতে চান। তাই, সঙ্গতিপন্নরা বিখ্যাত রেস্তোরাঁগুলোর দ্বারস্থ হন। অথচ, ধর্মের নির্দেশনা ও প্রচলিত আইন অমান্য করেই ফ্রিজে ভর্তি করে রাখা বাসী মাছ-মাংস ও অন্যান্য মুখরোচক খাদ্যসামগ্রী গরম করে ও ভাজাভুজি করে ক্রেতাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে কিংবা পাতে পরিবেশন করা হচ্ছে। এভাবে নীতি-নৈতিকতাকে জলাঞ্জলি দিয়ে লোকঠকানোর ব্যবসা চলতে দেওয়া যায় না। কেবল সামান্য অর্থদ-ের মাধ্যমে এই অপরাধ ও অপব্যবস্থা নিমর্ূূল হবে না। আমরা আশা করবো, জনগণের স্বাস্থ্যহানি রোধ ও জনস্বাস্থ্যের নিরাপত্তার স্বার্থে নামীদামী হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোসহ সব ধরনের রেস্টুরেন্টে অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং দ-দানে পদক্ষেপ কঠোর ও উদাহরণ সৃষ্টিকারী হবে।