চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আয়কর মেলা

১৮ নভেম্বর, ২০১৯ | ২:২৫ পূর্বাহ্ণ

জনগণের দেয়া করই হচ্ছে রাষ্ট্রের আয়ের প্রধান উৎস। আয়কর রাজস্ব আহরণে বড় ধরনের ভূমিকা রাখে। কর আদায়ে সরকারের নানামুখি পদক্ষেপের কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় রাজস্ব আহরণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। তবে মোট রাজস্বে আয়করের মতো প্রত্যক্ষ করের বৃদ্ধি এখনো সার্বিকভাবে সন্তোষজনক নয়। অথচ রাজস্বে আয়করের অবদান সফল অর্থনীতির জন্যে জরুরি। আর সে সেজন্যই হয়তো আয়কর আহরণে মৌলিক পরিবর্তন এনেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে আয়কর প্রদানে জটিলতা দূরীকরণেও। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে আয়কর প্রদানে উৎসাহিত ও উদ্বুদ্ধ করার জন্যে ব্যাপক প্রচারণার কর্মসূচিও আছে। এসব কর্মসূচির অন্যতম হচ্ছে আয়কর মেলা। দিন দিন আয়কর মেলা কর প্রদানকারীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ঝামেলামুক্ত পরিবেশে কর প্রদানের সুবিধা থাকায়। গত ১৪ নভেম্বর বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ সারা দেশে শুরু হয়েছে আয়কর মেলা। চট্টগ্রামের জিইসি কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত আয়কর মেলা এখন উৎসবে পরিণত হয়েছে। পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় বেড়েছে সেবা গ্রহণকারী, রিটার্ন দাখিলকারী ও আয়কর আদায়ের পরিমাণ। বেড়েছে নতুন ই-টিআইএনের সংখ্যাও। আয়কর প্রদানে জনউৎসাহ বৃদ্ধি ও আদায়ে অগ্রগতির এ চিত্র নিঃসন্দেহে একটি আশা জাগানিয়া সুসংবাদ। এতে দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির পথ আরো মসৃণ হবে।

২০০৮ খ্রিস্টাব্দে দেশে প্রথম আয়কর দিবস পালন শুরু হওয়ার পর বহু করদাতা কর বিষয়ে সচেতন এবং উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। আয়করের প্রতি দেশের মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে আয়করদাতাদের সংখ্যাও। তবে আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে তিনগুণ, জিডিপি বেড়েছে ৪ গুণ। সে তুলনায় করদাতার সংখ্যা বাড়েনি। এর পেছনে নানা কারণ আছে। অথচ বিভিন্ন জরিপ বলছে, দেশের অন্তত এক কোটি মানুষ কর দিতে সক্ষম। কর দেয়ার ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করা গেলে, একইসঙ্গে কর প্রদান প্রক্রিয়াকে নির্বিঘœ করা গেলে করদাতার সংখ্যা জ্যামিতিক হারেই বাড়বে, সন্দেহ নেই। পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, আয়কর মেলায় কোনো ধরনের হয়রানি ছাড়াই যে কোনো নতুন করদাতা তার করনথি খুলতে পারছেন। চাহিদা অনুযায়ী সব কাগজপত্র ঠিক থাকলে আয়কর মেলায় গিয়ে একজন নতুন করদাতা মাত্র ২০ মিনিটেই ইলেকট্রিক ট্যাক্স পেয়ার্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (ই-টিআইএন) সার্টিফিকেট পাচ্ছেন। পুরনো করদাতারাও পাচ্ছেন কর বিবরণীর প্রাপ্তিস্বীকারপত্র। এ জন্য দীর্ঘসূত্রতায়ও পড়তে হচ্ছে না কারও। আর এক ঘণ্টায় মিলছে করদাতার কর বিবরণীর প্রাপ্তিস্বীকারপত্র। আয়কর মেলার এই চিত্র খুবই সুখকর। কিন্তু তারপরও কেনো আয়কর প্রদানকারীর সংখ্যা কাক্সিক্ষত পরিমাণে বাড়ছে না, তা বোধগম্য নয়। এ অবস্থায় গলদ কোথায় তা খুঁজে বের করে সমাধান উদ্যোগ নেয়া জরুরি।

রাজস্ব হচ্ছে দেশ-উন্নয়নের অক্সিজেন। আর রাজস্ব আহরণের অন্যতম উৎস হচ্ছে আয়কর। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আয়করকে প্রধান কর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু জনউদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচির অভাব এবং হয়রানিসহ নানা কারণে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে চিত্রটি ভিন্ন। পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বলছে, অনেক যোগ্য করদাতাই নিয়মিতভাবে আয়কর দেন না। সিংহভাগ ব্যবসায়ী কর দেন না বলে বছরকয়েক আগে এফবিসিসিআই সভাপতি অভিযোগ করেছিলেন। এখনই সে চিত্র বদলাইনি। এটি পীড়াদায়ক। সামর্থ্য থাকার পরও কেনো সিংহভাগ ব্যবসায়ী আয়কর দেন না তা খতিয়ে দেখা দরকার। সরকারের করবিভাগ এ ব্যাপারে সক্রিয় হলে, একইসঙ্গে কর প্রদানে হয়রানির অবসান ও সব ধরনের ঝক্কিঝামেলা বন্ধ করা গেলে আয়কর প্রদানকারীর সংখ্যা জ্যামিতিক হারেই বাড়বে। এ বিষয়ে সরকারের যথোপযুক্ত পদক্ষেপই কাম্য। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে জিডিপিতে করের অবদান ১০ শতাংশ, যা নেপালের চেয়ে কম। এ চিত্রের পরিবর্তনে আয়কর মেলার আয়োজন, করদাতা সম্মাননা প্রদানসহ সরকারের নানা উদ্যোগ ইতিবাচক ফল দেবে নিশ্চয়ই। তবে এসব উদ্যোগ গ্রাম পর্যায়েও নিয়ে যেতে হবে, ছড়িয়ে দিতে হবে। যারা করের আওতার বাইরে তাদের কর দিতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সবাই কর দিলে ২০৪১ খ্রিস্টাব্দের আগেই আমাদের দেশ স্বপ্নের ঠিকানায় পৌঁছে যাবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট