চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

নবী পাক (স.)’র জন্মের রাত্রিতে অলৌকিকত্ব

আহমদুল ইসলাম চৌধুরী

১৮ নভেম্বর, ২০১৯ | ২:২৫ পূর্বাহ্ণ

এখন মহান রবিউল আউয়াল মাস। নবী পাক (স.)’র জন্ম ও ওফাতের মাস। নবী পাক (স.)’র জন্মের রাত্রির অলৌকিকত্বগুলো থেকে কয়েকটি অংশ বিশেষ সুপ্রিয় মহলের কাছে উপস্থাপন করা হল।

পবিত্র মক্কার পবিত্র খানায়ে কাবার চারপাশে গোলাকৃতির বিশাল আয়তন নিয়ে রয়েছে চারতলা বিশিষ্ট মসজিদুল হারম। এ মসজিদুল হারমের মাত্র ১০০/১৫০ মিটার পূর্ব দিকে খোলা জায়গায় একটি একতলা বিশিষ্ট পুরানো আমলের দালান দেখতে পাওয়া যায়। ঐ দালানটি হল নবী পাক (স.)’র পবিত্র জন্মস্থান। সৌদি সরকার চর্তুদিকে সাবেক ঘরবাড়ি সমূহ ভেঙ্গে ফেললেও লাইব্রেরী হিসেবে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে নির্মিত নবী পাক (স.)’র জন্মস্থানের একতলা বিশিষ্ট দালানটি আজ অবধি ভেঙ্গে ফেলেনি। পবিত্র মক্কার লোকে মুখে জানা গেছে, সৌদি সরকার একাধিকবার ঐ দালানটি ভেঙ্গে ফেলতে উদ্যোগ নিয়েছিল, কিন্তু অলৌকিকত্বের কারণে বার বার ব্যর্থ হয়।

নবী পাক (স.)’র জন্ম প্রসঙ্গে হযরত মা আমেনা বলেন:“ আমার পুত্রের জন্মের সময় আমি গৃহে নিঃসঙ্গ ছিলাম। আবদুল মুত্তালিব (হযরতের দাদা) কাবার তাওয়াফে ব্যস্ত ছিলেন। আমার স্বামী আবদুল্লাহ চার মাস পূর্বে (পবিত্র) মদিনায় ইন্তেকাল করেন। তিনি সেখানেই সমাহিত হন। এখানে উল্লেখ্য, ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে হজ্বের সময় যেয়ারতের উদ্দেশ্য পবিত্র মদিনায় অবস্থানকালে নবী পাক (স.)’র পিতা হযরত আবদুল্লাহর কবর যেয়ারত করার সৌভাগ্য লাভ করি। রওজা পাকের কয়েকশত মিটার পশ্চিমে অবস্থিত হযরত আবদুল্লাহর কবরের অবকাঠামো পরবর্তী সৌদি সরকার সরিয়ে ময়দান করে ফেলে। বর্তমানে ঐ স্থান সম্প্রসারিত মসজিদে নববীর দক্ষিণ চত্ত্বরে তথা বাবুস্ সালামের পশ্চিম দিকে। মা আমেনা বলেন:“আমি উপরের দিকে দৃষ্টিপাত করতেই দেখলাম বিরাট একটা কিছু ছাদ বিদীর্ণ করে গৃহে প্রবেশ করছে। এতে আমি ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লাম। এরপর আমার মনে হল যেন একটি সাদা পাখি আকৃতির বস্তু আমার উপর তার পাখা বুলিয়ে দিল। ফলে আমার ভয় ও আতংক দূর হয়ে গেল। এরপর সে আমাকে কোন সাদা রংয়ের পানীয় দিল, সম্ভবত তা দুধ ছিল। আমি পিপাসার্থ ছিলাম। তাই এই শরবত কয়েক ঢোকে পান করলাম। এরপর আমি দীর্ঘদেহী সুন্দরী নারীগণকে দেখলাম, যাদের সাদৃশ্য ছিল আবদুল মানাফের কন্যাদের সাথে। তারা আমার চারপাশে জমায়েত হয়ে গেল এবং আমার অবস্থা জিজ্ঞেস করতে লাগল। এরপর আমি একটি রেশমী বস্ত্র আকাশ থেকে মাটি পর্যন্ত ঝুলন্ত দেখলাম। আমি কাউকে বলতে শুনলাম, এটি ধারণ কর। যেই আমার দৃষ্টি থেকে পর্দা সরে গেল অমনি আমি পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্ত দেখে নিলাম। এরপর আমি তিনটি কান্ড দেখলাম। একটি পূর্বে একটি পশ্চিমে এবং তৃতীয়টি কাবা গৃহে উড্ডীয়মান ছিল। এরপর অনেক মহিলা আমার চারপাশে একত্রিত হয়ে গেল। যখন আমার পুত্র ভূমিষ্ট হল তখন সে সেজদাবসত ছিল। সে তাঁর একটি আঙ্গুলি আকাশের দিকে উত্তোলন করল। এরপর একখ- মেঘ দৃষ্টিগোচর হল,যার কারণে আমার পুত্র রত্ন দৃষ্টি থেকে উধাও হয়ে গেল। আমি একজনকে বলতে শুনলাম, হুজুর (স.) কে সমগ্র বিশ্ব ভ্রমণ করা হয়েছে। যাতে সমগ্র সৃষ্টি তাঁর গুণাবলী, আকার আকৃতি ও নামের সাথে পরিচিতি হয়ে যায়। এই মেঘখ- কেবল এক মুহূর্তের জন্য আলোকিত থাকে। আমি আমার পুত্রকে এমন বস্ত্র জড়ানো অবস্থায় দেখলাম যা দুধের চেয়ে অধিক শুভ্র এবং রেশমের চেয়ে অধিক কোমল ছিল। অতঃপর পূর্বের চেয়ে বড় একটি মেঘ খ- আগমন করল। এতে আমি মানুষ ও অর্শ্বের পদধ্বনি শুনতে পেলাম। আমি কাউকে বলতে শুনছিলাম! সকল মানব ও জ্বীন, পশু-পক্ষীকে আমার শিশুর সাক্ষাৎ করানো হয়েছে। অতঃপর তাঁকে হযরত আদম (আ.)’র মহত্ব, হযরত নূহ (আ.)’র ন¤্রতা, হযরত ইব্রাহীম (আ.)’র দৃঢ়তা,হযরত ইসমাইল (আ.)’র ভাষা, হযরত ইউসুফ (আ.)’র রূপ, হযরত ইয়াকুব (আ.)’র ত্বক, হযরত দাউদ (আ.)’র আকৃতি, হযরত আইয়ুব (আ.)’র ছবর, হযরত ইয়াহিয়া (আ.)’র বৈরাগ্য এবং হযরত ঈসা (আ.)’র দানশীলতা প্রদান করা হয়েছে। এ মেঘ খন্ডও কেবল এক মুহূর্তের জন্য উজ্জল ছিল। হযরত সুফিয়া বিনতে আবদুল মুত্তালিব বলেন: নবী পাক (স.)’র জন্মের সময় আমেনার সাহায্যকারী আমি ছিলাম। দেখলাম যে, তাঁর নূর প্রদীপের আলোকে পর্যন্ত হার মানাচ্ছিল। সে রাতে আমি নি¤œ নিদর্শন প্রত্যক্ষ করেছি।

(এক) নবী পাক (স.) ভূমিষ্ট হয়ে সর্বপ্রথম সেজদারত হলেন, (দুই) সেজদা থেকে মাথা তুলে বিশুদ্ধ ও স্পষ্ট ভাষায় “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ইন্নী রাসূলুল্লাহ” বললেন, (তিন) আমি সমস্ত গৃহ হতে তাঁর মুখম-লের নূরে উজ্জল দেখলাম, (চার) আমি তাঁকে গোসল দিতে চাইলাম, কিন্তু গায়েবী আওয়াজ হল: হে সুফিয়া! নিজেকে কষ্ট দিওনা। কেননা, আমি আমার মাহবুবকে পাকসাফ সৃষ্টি করেছি, (পাঁচ) আমি যখন ছেলে না মেয়ে জানতে চাইলাম,তখন দেখলাম যে,তিনি খতনা করা অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেছেন, (ছয়) আমি যখন কাপড় জড়াতে চাইলাম তখন তাঁর পৃষ্টদেশে নবুয়তের মোহর দেখতে পেলাম, (সাত) আমি যখন তাঁর স্কন্ধের মধ্যস্থলে দেখলাম, তখন সেখানে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ” লিখিত ছিল।

আবদুল মুত্তালিব বর্ণনা করেন: নবী পাক (স.)’র জন্মের সময় কাবাগৃহে তাওয়াফরত ছিলাম। অর্ধরাত্রি অতিবাহিত হলে পর কাবাগৃহে মকামে ইব্রাহীমের দিকে (অর্থাৎ পূর্ব দিকে) সেজদা করতে এবং আল্লাহ আকরব ধ্বনি দিতে দেখলাম এবং বলতে শুনলাম: এখন আমাকে মুশরিকের নাপাকী এবং মূর্খ্যতা যুগের অপবিত্র থেকে পাক ও সাফ করে দেয়া হয়েছে। এরপর সকল প্রতিমা মাথানত করেছিল। আমি সর্ববৃহৎ প্রতিমা হুবলের দিকে থাকালাম। কেউ যেন আওয়াজ দিল, আমেনা গর্ভে মুহাম্মদ ভূমিষ্ট হয়ে গেছেন। তখন আমি সাফা পাহাড়ে চলে গেলাম। সাফা পাহাড়কে কোলাহলপূর্ণ দেখলাম। দেখতে পাচ্ছিলাম যেন সমস্ত পশু পক্ষী ও মেঘ পবিত্র মক্কার উপর ছায়া দিতে এসেছে। এরপর আমি আমেনার গৃহের দিকে গেলাম। দরজা বন্ধ ছিল, আমি বললাম : দরজা খুল, আমেনা বলল:আব্বাজান মুহাম্মদ পয়দা হয়ে গেছেন। আমি বললাম: আনত দেখি। আমেনা বলল:অনুমতি নেই। আমি বললাম: আমেনা এ শিশুকে তিনদিন পর্যন্ত কাউকে দেখিওনা। আমি বাইরে চলে এসে জনৈক মুখোশধারী ব্যক্তিকে তরবারীমুক্ত অবস্থায় দেখলাম, সে বলল: আবদুল মুত্তালিব ফিরে যাও যাতে ফেরেশতাগণ, নৈকট্যশীলগণ এবং ঊর্ধ্বজগতের অধিবাসীগণ তোমার গৃহে সদ্য জন্মগ্রহণকারী এ পবিত্র শিশুকে এক নজর দেখে নেয়। এ কথা শুনে আমার সর্বাঙ্গে কম্পন এসে গেল। আমি তৎঅবস্থায়ই কুরাইশদেরকে মুহাম্মদ এর জন্মের খবর দেয়ার জন্য বাইরে এসে গেলাম। কিন্তু এক সপ্তাহ পর্যন্ত আমার জিহ্বা বন্ধ হয়ে গেল এবং আমি কারও সাথে কথা বলতে পারলাম না।
নবী পাক (স.)’র জন্ম ও পরবর্তী বহু অলৌকিকত্বের আলোচনা থেকে সামান্য পাঠক মহলে উপস্থাপন করলাম। মহান আল্লাহ পাক আমাদেরকে তাঁর হাবিবের উছিলা দান করুন। আমিন॥

ক্যাশপান : পবিত্র কাবার রাতের দৃশ্য

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট