চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ফেনী নদী, জলবন্টন চুক্তি এবং মুক্তিযুদ্ধের সাব্রুম

নাসিরুদ্দিন চৌধুরী

১৬ নভেম্বর, ২০১৯ | ২:২৫ পূর্বাহ্ণ

ফেনী নদীতে তখন পানি ছিলোনা, এমনকি হাঁটু পানিও ছিলো না। একাত্তরের মধ্য এপ্রিলে আমরা হেঁটেই পার হয়েছিলাম ফেনী নদী। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পঁচিশে মার্চ কালরাতে ট্যাংক, কামান, মেশিনগানসহ অত্যাধুনিক ভারি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে স্বাধীনতাকামী বাঙালি জাতির ওপর রক্তচোষা পিশাচ আর হায়েনার ন্যায় কিলিং মিশনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো এবং মানবেতিহাসের নিকৃষ্টতম, ভয়াবহতম, বর্বরতম গণহত্যায় মেতে উঠেছিলো। বুলডোজার দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস, পিলখানা ইপিআর ঘাঁটি ও রাজারবাগ পুলিশ লাইন গুঁড়িয়ে দিয়েছিলো। যখন তারা শহর-বন্দর, বস্তি, গ্রাম-জনপদ গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিয়েছিলো, জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছিলো, তখন প্রতিশোধের অগ্নিশপথ নিয়ে ওই হানাদার হায়েনা বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে অস্ত্র ও ট্রেনিংয়ের জন্য আমরা ফেনী নদীর শীর্ণ জলধারা হেঁটে পার হয়ে এপার থেকে ওপারে গেলাম। নদীও নয়, আমাদের দেশের বরকল খালও তার চেয়ে বড়, হালদা তো অনেক বড়; সে তুলনায় ফেনী নদী কোন নদীই নয়।

আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লিতে গিয়ে ভারতের সঙ্গে যে চুক্তি করেছেন, তাতে ফেনী নদীর জলবন্টনও আছে; আর এই চুক্তি নিয়ে ফেনী নদীর বিস্তর জল ঘোলা হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে যার জলই থাকে না, তার আবার জলবন্টন। অবশ্য বর্ষাকালে ফেনী নদীর ভরা রূপও আমরা দেখেছি। আমরা যখন অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে যুদ্ধক্ষেত্রে ফিরে আসছিলাম, তখন ফেনী নদী পার হতে গিয়ে দেখি নদী জলে টইটুম্বুর, আমাদেরকে এবার বৈষ্ণবপুর সীমান্ত দিয়ে নৌকায় পার হতে হলো।
সেই পাকিস্তানি জমানায় দেখেছি, বঙ্গবন্ধু কোন রাজনৈতিক কর্মসূচি দিলে আইয়ূব-মোনায়েমের সরকার ‘ইসলাম গেল’, ‘ইসলাম গেল’ বলে শোরগোল ফেলে দিতো। আর এখন হচ্ছে কথায় কথায় ‘দেশ গেল’, ‘দেশ গেল’ বলে চিৎকার। ফেনী নদীর জলবণ্টন চুক্তির পরও ‘দেশ গেল’, ‘ভারত সব পানি নিয়ে গেল’ বলে মায়াকান্না জুড়ে দিয়েছে দু-একটি মিডিয়া আর কতিপয় চিহ্নিত সমালোচক।
কী আছে সেই চুক্তিতে? একবার দেখে নেয়া যাক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরে ৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। ফেনী নদীর জলবন্টন চুক্তিতে বাংলাদেশ ফেনী নদী থেকে ১.৮২ কিউসেক পানি প্রত্যাহার করতে ভারতকে অনুমতি দিয়েছে। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাবরুম অঞ্চলে খাবার পানির সংকট দূর করতে এই পানি ব্যবহার করা হবে বলে এ সম্পর্কিত সমঝোতা স্মারকে উল্লেখ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিগত ভারত সফরের সময় দু’দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

নদীর পানি পরিমাপের দুটি একক রয়েছে। একটি কিউসেক এবং অপরটি কিউমেক। অর্থাৎ একটি হিসাব করা হয় প্রতি সেকেন্ডে কত ঘনফুট পানি যাচ্ছে কোন একটা জায়গায় সেটার উপর। আর অপরটি হচ্ছে প্রতি সেকেন্ডে কত ঘনমিটার পানি প্রবাহিত হয় সে অনুযায়ী। বাংলাদেশের সাথে ভারতের নতুন চুক্তি অনুযায়ী, ফেনী নদী থেকে ১.৮২ কিউসেক পানি ভারত তুলে নিতে পারবে।
নদীর দু’পাশে বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল এবং সমতলে ফেনী নদীর প্রবাহ পথের দুই পাড়ের মানুষদের জীবনের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে ফেনী নদীর। পার্বত্য এলাকা ও খাগড়াছড়ি থেকে বেশ কয়েকটি উপনদী এসে ফেনী নদীর উপর এসে পড়েছে। এরমধ্যে মুহুরি নদী উল্লেখযোগ্য।
পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক বলেন, “এটি আসলে অনেকগুলো নদীর একটি অববাহিকা। যেটা ফেনী জেলাকে এবং উজানে খাগড়াছড়ি জেলার মানুষ এর দ্বারা উপকৃত। ফেনী নদীর পানি কমে গেলে এই উপনদীগুলোতেও পানি প্রবাহ কমে যাবে। যার কারণে ফেনী নদীর সাথে সাথে হুমকির মুখে পড়বে এসব নদীর জীব-বৈচিত্র্য এবং এর স্থানীয় বাসিন্দারাও।
নদী বিষয়ক সংগঠন রিভাইরাইন পিপল এর মহাসচিব শেখ রোকন বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুমে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসে ভারত যদি ১.৮২ কিউসেক পানি তুলে নেয় তাহলে তা পরিবেশের উপর তেমন কোন প্রভাব ফেলবে না। কারণ ওই সময়ে ফেনী নদীতে এর চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ পানি থাকে।’ অর্থাৎ পানি তুলে নেয়ার পরও পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি থাকবে নদীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য।
পানি সম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বলেন, এ পরিমাণ পানি তুলে নিলে আসলে তা পরিবেশ এবং আশপাশের বসতির উপর কোন প্রভাব ফেলবে না। বাংলাদেশের ভাটিতে এই নদীর উপর মুহুরি সেচ প্রকল্প আছে। আমি মনে করি না এই প্রায় দুই কিউসেক পানি উত্তোলন করলে তা পরিবেশের উপর কোন ধরণের প্রভাব ফেলবে। দুই দেশের মধ্যে অভিন্ন নদীর সমন্বিত ব্যবস্থাপনা দরকার। যাতে খাবার পানি, নৌ-চলাচল, সেচ এবং নদীর স্বাস্থ্য বিবেচনা করে প্রতিবেশের জন্য পানি, মাছের জন্য পানি যাতে নিশ্চিত করা যায়, সে লক্ষ্যে দুই দেশ আরো ৬টি নদীকে একটা যৌথ ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে চাইছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে বহু প্রত্যাশিত তিস্তা নদীর জল ভাগাভাগির ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কোনও অগ্রগতি না হওয়ায় অভিন্ন ফেনী নদীর জল বন্টন চুক্তি বেশি সমালোচনার মুখে পড়েছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেছেন, সম্পূর্ণ মানবিক কারণেই প্রধানমন্ত্রী হাসিনা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তিস্তার জল ভাগাভাগি নিয়ে কোনও চুক্তি প্রধানমন্ত্রী হাসিনার এবারের দিল্লি সফরেও হল না, কিন্তু আরও সাতটি অভিন্ন নদীর পানিবন্টনের জন্য দুই দেশ যে একটি ফ্রেমওয়ার্ক প্রস্তুত করতে রাজি হয়েছে সেটাকে যথেষ্ট ইতিবাচক লক্ষণ বলে মনে করছে ঢাকা।
পররাষ্ট্রসচিব এম শহীদুল হক বলেন, যেহেতু দুদেশের যৌথ নদী কমিশন বা জেআরসি বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু করেছে, তাই তিস্তা নিয়েও আশাবাদী হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
এদিকে বাংলাদেশের সোশ্যাল মিডিয়াতে এর মধ্যেই অনেকে লেখালেখি শুরু করেছেন, ‘বাংলাদেশ যেখানে এবারেও তিস্তার পানি পেল না, সেখানে কেন আগ বাড়িয়ে ভারতকে ফেনী নদীর পানি দিয়ে আসা হল?’
বস্তুত ফেনী নদী থেকে ১.৮২ কিউসেক পানি দক্ষিণ ত্রিপুরার যে সাব্রুম শহরে বাংলাদেশ পাঠাবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেই অঞ্চলে পানীয় জলের সঙ্কট অতি তীব্র।

সীমান্ত দিয়ে বয়ে চলা ফেনীর পানি পেলে ওই অঞ্চলের মানুষের জলকষ্ট মেটে, ভারতের এই অনুরোধের পটভূমিতেই প্রধানমন্ত্রী হাসিনা সম্পূর্ণ মানবিক কারণে ওই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব।
বাংলাদেশ ও ভারতকে বিভক্তকারী ফেনী নদীর এপারে, মানে কোথাও পূর্ব, কোথাও পশ্চিম, অধিকাংশ স্থানে দক্ষিণ পাড়ে বাংলাদেশ; আর মোটামুটি উত্তর তীরবর্তী স্থান ভারত। রামগড়ে স্থানটা উত্তর-দক্ষিণ। দক্ষিণ পাড়ে বাংলাদেশের রামগড় থানা, ফেনী নদী পেরিয়ে উত্তর কুলে উঠলেই ভারতের সাব্রুম থানা। একাত্তরের মার্চে রামগড় থানার ওসি ছিলেন আমার নানা অর্থাৎ আমার মামা রাষ্ট্রদূত কে.এম শিহাবুদ্দিনের আপন মামা আনোয়ারা থানার বেলচূড়া নিবাসী আবদুল মান্নান চৌধুরী। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার সংবাদ তিনি ছাব্বিশে মার্চই পেয়ে গিয়েছিলেন। হয়তো ইপিআর এর কাছ থেকে, যাদের কাছে ততক্ষণে হালিশহর ইপিআর ঘাঁটি থেকে অ্যাডজুট্যান্ট ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলামের পাঠানো সাংকেতিক বার্তা ‘আমার জন্য কিছু কাঠ নিয়ে আস’ পৌঁছে গেছে। অর্থাৎ শত্রুপক্ষের সব সৈন্যকে বন্দী এবং প্রয়োজনে ধ্বংস করে চট্টগ্রাম শহরে এসে পূর্ব নির্ধারিত স্থান সমূহ যুদ্ধাবস্থান গ্রহণ করা। অথবা সীমান্তে যোগাযোগের পুলিশের নিজস্ব চ্যানেলে তিনি খবর পেয়ে থাকবেন এবং ছাব্বিশে মার্চ দিনের বেলা তিনি তাঁর প্রতিপক্ষ সাব্রুম থানার ওসির সঙ্গে করে জানালেন, “পাকিস্তানিদের সঙ্গে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। এখন হয়তো আপনাদের সাহায্য দরকার হবে আমাদের। প্রয়োজনে আপনাদের দেশে আমাদের আশ্রয় নিতে হতে পারে।”
তারপর তো শংণার্থীর ঢল নামে ভারতের মাটিতে; অস্ত্রশস্ত্রে ও সংখ্যায় অনেক ভারি পাকিস্তানি নিজ সৈন্যদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে সমস্ত প্রতিরক্ষা অবস্থান থেকে একে একে পিছু হঠতে হঠতে এক সময় মুক্তিযোদ্ধাদেরকেও ভারতের মাটিতে গিয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছিলো। প্রথমে সাব্রুম, তারপর সেখানে থেকে ‘হরিণা’ নামক সাত মাইল দূরবর্তী এক পার্বত্য অঞ্চলে সেনা ও যুব শিবির স্থাপন করতে হয়। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রের সহযোগী জিয়াউর রহমান, যিনি পনের আগস্টের ওই জাতিদ্রোহী ও দেশদ্রোহী ঘটনা থেকে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছিলো, তাঁর শাসনকালেই বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ভারতবিরোধী অপপ্রচার চালানো হয়েছিলো; অথচ সেই জিয়া মুক্তিযুদ্ধে ভারতেই আশ্রিত ছিলেন।
১নং সেক্টর অর্থাৎ আমাদের চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের যুদ্ধের হেডকোয়ার্টার ছিলো হরিণা। শুধু ১নং কেন, আরো অন্তত চারটি সেক্টরের কর্মকা- ত্রিপুরার মাটিতে অবস্থান করেই পরিচালিত হতো। প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারও গঠিত হয়েছিলো আগরতলাতে বসেই। এক কথায় গোটা মুক্তিযুদ্ধেরই কেন্দ্রস্থল ছিলো ত্রিপুরা। উদয়পুর, জগন্নাথদিঘি, পালাটানা, ক্রাফট হোস্টেল, কলেজ টিলা এবং ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা মুক্তিযোদ্ধাদের পদভারে গমগম করতো।

পাকিস্তানি সৈন্যদের তাড়া খেয়ে যেদিন তারা প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পার হয়েছিলো, সেদিন সাব্রুমের মানুষ যদি মুখ ফিরিয়ে নিতো, দরজায় খিল এঁটে দিতো, তাহলে কোথায় গিয়ে দাঁড়াতো বাঙালি ? পাকিস্তানি সৈন্যরা কুকুরের মতো গুলি করে মারতো মুক্তিযোদ্ধা আর শরণার্থীদের।
ত্রিপুরা একটি খধহফ-ষড়পশবফ ংঃধঃব. ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে এমনি আরো ছ’টি রাজ্য আছে, সাতটি স্থলবেষ্ঠিত রাজ্যকে একত্রে বলা হয় ‘সেভেন সিস্টার্স’। এই ত্রিপুররাই মহকুমা সাব্রুমে পানির বড় আকাল। ভূগর্ভ থেকে পানি তুলে তাদেরকে খুব কষ্ট করে জীবন ধারণ করতে হয়। এখন আর্সেনিক রোগ তাদের জীবনকে আরো দুর্বিসহ করে তুলেছে। আমাদের দুর্দিনের দরদী বন্ধু সাব্রুমের মানুষকে পানি জোগান দেওয়ার জন্য ফেনী নদীর চুক্তি। দুর্ভাগ্য ভারতের, দুর্ভাগ্য সাব্রুমবাসীর। যাদেরকে তারা একদিন রক্ত দিয়ে, খাদ্য দিয়ে, আশ্রয় দিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছিলো, তাদের দেশের মাটিতে ট্রেনিং সেন্টার খুলে সেখানে ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা করে; অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পাঠিয়েছিলো, তারা যদি আজ আমাদেরকে অকৃতজ্ঞ ভাবে তাহলে তাদেরকে কি দোষ দেওয়া যাবে? তারা নিশ্চয়ই ভাবতেও পারছে না, সাব্রুমবাসীর প্রয়োজনে সামান্য পানি দিতে বাংলাদেশের মানুষের এত অনীহা কেন?

বাঙালি কবে থেকে এত অনুদার, এত সংকীর্ণচিত্ত হলো? উদারতার জন্য, সহৃদয়তায় জন্য, সহমর্মিতার জন্য তো বাঙালির বিশ্বখ্যাতি ছিলো। কোথায় কখন, কিভাবে বাঙালির চরিত্র থেকে এসব গুণ উধাও হয়ে গেলো ?

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের এত সহযোগিতা, এত ত্যাগ কি করে আমরা বিস্মৃত হলাম? পৃথিবীতে এমন কোন দেশ কী খুঁজে পাওয়া যাবে, যে দেশ ভিন্ন একটি দেশকে স্বাধীন করে দেয়ার জন্য, অন্য একটা জাতিকে তার আকাক্সিক্ষত স্বাধীনতা পাইয়ে দেওয়ার জন্য নিজে সে দেশ ও জাতির স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে জলে স্থলে অন্তরীক্ষে সর্বাত্মক যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং হাজার হাজার জওয়ান ও সামরিক কর্মকর্তাকে বলি দেয়? একমাত্র ভারতেই সেই দেশ যে দেশ বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য কয়েক লক্ষ বাঙালি মুক্তিযোদ্ধা ও ১ কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছিলো, প্রবাসী সরকারকে দপ্তর স্থাপন করে কর্তা ব্যক্তিদের সমস্ত সরকারী কাজকর্ম পরিচালনা করার সুযোগ দিয়েছিলো, মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং ও অস্ত্র দিয়েছিলো এবং অন্তিমে নিজের সামরিক বাহিনীকে যুদ্ধে নামিয়ে দিয়েছিলো এবং মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে দাঁড়িয়ে জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছিলো। সেদেশের সামরিক বাহিনীর যুদ্ধ কৌশলের কারণে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়েছিলো, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিলো।

নাসিরুদ্দিন চৌধুরী মুক্তিযোদ্ধা, সিনিয়র সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক সংগঠক।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট