চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

দেশ গঠনে ছাত্র সমাজের ভূমিকা

অধ্যক্ষ এম সোলাইমান কাসেমী

১৬ নভেম্বর, ২০১৯ | ২:২৫ পূর্বাহ্ণ

এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। আজ বিশ্বের মানচিত্রে সার্বভৌম বাংলাদেশ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। তার মূলে কাজ করেছে জাগ্রত ছাত্র সমাজের গৌরবদীপ্ত সংগ্রাম। তাই দেশ গঠনে ছাত্র সমাজের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তারাই দেশ গঠনের সুকঠিন পবিত্র দায়িত্ব পালন করতে পারে। ছাত্র জীবন মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সময়। কারণ, ছাত্রজীবনই ভবিষ্যৎ জীবনের ভিত রচনা করে। ইমারতের ভিত্তি সুগঠিত না হলে যেমন ইমারত শক্ত হয় না। তেমনি বাল্যকালে উপযুক্ত শিক্ষা লাভ না করলে মানুষের ভবিষ্যৎ জীবনও সুগঠিত হয় না। এ দিকটার প্রতি বিশেষভাবে খেয়াল রেখেই ছাত্রদের অগ্রসর হতে হবে। তবে লেখা-পড়ার সাথে সাথে ছাত্রদের দেশ গঠনেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করা বাঞ্ছনীয়।

ছাত্ররা নানাভাবে এ দায়িত্ব পালন করতে পারে। তবে লেখাপড়ার সাথে সাথে ছাত্রদের দেশ গঠনেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করা বাঞ্ছনীয়। ছাত্ররা নানাভাবে এ দায়িত্ব পালন করতে পারে। তবে তাদেরকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। দেশ সেবা করতে গিয়ে যাতে পড়াশুনার ক্ষতি না হয়। দেশের সামগ্রিক উন্নতির জন্য মৃত্যুঞ্জয়ী সৈনিক, হিসেবে ছাত্র সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। তাদেরকে আত্মত্যাগের সুমহান দায়িত্ব নিয়ে প্রবল কর্মোদ্যমে কাজ করতে হবে। দেশের নর-নারীর নৈতিকতার উন্নতি বিধান, যাবতীয় কুসংস্কার, কু-আইন, অত্যাচার, অবিচার, প্রভৃতি নির্মূল করার দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে ছাত্র সমাজকে। সকল প্রকার দুর্নীতি দমনের বজ্র কঠিন শপথ তাদেরকেই নিতে হবে। দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতিকে সুদৃঢ় করার সংগ্রামেও ছাত্র সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। জনসেবামূলক কাজের মধ্য দিয়ে ছাত্র সমাজ দেশ গঠনে অংশ নিতে পারে। তাদেরকে দাঁড়াতে হবে দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষের দ্বারে, সেবার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে- অনাহারক্লিষ্ট এবং বৃদ্ধদের মাঝে। ক্ষুধার্তের মুখে তারা তুলে দিতে পারে অন্ন, অসহায় রোগীকে দিতে পারে সেবা, মৃতপ্রায়কে নিতে পারে হাসপাতালে, পরিত্যক্ত, শিশুকে পৌছে দিতে পারে শিশু সদনে, গৃহহারাকে দিতে পারে গৃহ। তাই বলা যায়, ছাত্ররাই দুর্বলের বল, অসহায়ের সহায় এবং রোগীর সেবক। পল্লীই বাংলাদেশের প্রাণ। তাই পল্লী উন্নয়েন ছাত্র সমাজ এগিয়ে আসতে পারে। গ্রামে আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নয়নে ছাত্র সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কৃষি উন্নয়নে আধুনিক প্রযুক্তির সুফল সম্পর্কে নানা উপদেশ দিয়ে ছাত্র সমাজ প্রভূত সাহায্য করতে পারে। অবসর সময়ে ছাত্র সমাজ গ্রামে গিয়ে রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, খাল-পুকুর খনন ইত্যাদি স্বেচ্ছাশ্রমের কাজ করতে পারে। পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন অভিযান চালিয়ে ম্যালেরিয়া এবং অন্যান্য রোগ থেকে গ্রামবাসীকে রক্ষা করতে পারে। ছোট খাট রোগের হাত থেকে রক্ষা এবং রোগের প্রতিকার সম্পর্কে গ্রামবাসীকে সচেতন করে তুলতে পারে। পল্লী উন্নয়ন মানেই জাতির উন্নয়ন। নিরক্ষরতা আমাদের জাতীয় জীবনে বিরাট অভিশাপ। দেশের ৪২ ভাগ লোক নিরক্ষর। নিরক্ষরকে অক্ষর জ্ঞান দান করার ক্ষেত্রে ছাত্র সমাজের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। দেশের মানুষ যদি অজ্ঞানতার অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে তাহলে দেশে উন্নতি সম্ভব নয়। তাই গ্রামে-গ্রামে, মহল্লায় মহল্লায় নৈশ বিদ্যালয় স্থাপন করে নিরক্ষর লোকদেরকে অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন করে তোলার অভিযানে ছাত্র সমাজ অংশ নিতে পারে। নিরক্ষরতা দূর হলে মানুষ শিক্ষার আলো পাবে, সাধারণ মানুষ আধুনিক চেতনার সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে।

সাধারণ মানুষকে এই বোধে উদ্দীপিত করার দায়িত্ব ছাত্র সমাজের। দেশ ও জাতির উন্নয়নে নানা কর্মকা-ে জনমত গঠনে ছাত্র সমাজ বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। সভা সমিতি ও নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ছাত্র সমাজ দেশের শিল্প ও সংস্কৃতিকে জাগিয়ে তুলতে পারে। জনগণের মধ্যে প্রীতি ও ঐক্য স্থাপন করে জাতি গঠন কাজে দেশবাসীকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে জাতির মানস গঠনে সাহায্য করতে পারে। বিদেশী দ্রব্য বর্জন এবং স্বদেশী দ্রব্য ব্যবহার সম্পর্কে জনমত গঠনের প্রচারভিযানে ছাত্র সমাজ অংশ নিতে পারে। দেশ গঠনে ছাত্র সমাজের ভূমিকা অনেক। তাই বিপথগামিতা এবং ধ্বংসাত্মক ক্রিয়াকলাপ থেকে ছাত্র সমাজকে মুক্ত থেকে দেশ জাতি গঠনের কাজে এগিয়ে আসতে হবে। এতে দেশের প্রগতি আসবে-সমৃদ্বির সূচনা হবে। তাদের কর্ম প্রেরণার দ্বারাই নির্মিত হবে দেশের প্রগতির ধারা।

অধ্যক্ষ এম সোলাইমান কাসেমী এম.ফিল গবেষক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট