চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সিঙ্গাপুরে সানতোষার বিস্ময় পর্ব

আশ্ফা খানম

১৫ নভেম্বর, ২০১৯ | ১:২৯ পূর্বাহ্ণ

জিয়া উদ্দীন খালেদ ভাই এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি এবং জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলেন যে এখানে ফ্রি টিকেটে মনোরেল দিয়ে সানতোষা দ্বীপটি এবং থীম পার্কটি ঘুরে দেখা যায়। আমরা দু’টি পরিবারের ৯ সদস্য সময় নষ্ট না করে মনোরেল ধরার জন্য ছুটে চললাম। লাইনে দাঁড়ানোর কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা মনোরেলে উঠে পড়লাম। আমরা পুরো সানতোষা দ্বীপটির অপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করতে লাগলাম। আর জিয়াউদ্দিন খালেদ ভাইকে এর জন্য সবাই ধন্যবাদ জানালাম। মনোরেলের সর্বশেষ স্টেশনে আমরা নেমে পড়লাম। কিন্তু এবার আবার আমাদের পূর্বের জায়গায় আমরা ফিরবো কিভাবে? কাউন্টারে জিজ্ঞেস করতেই তারা জানালো এবার টিকেট কেটে যেতে হবে। অগত্যা সিঙ্গাপুরী ডলারে টিকেট কেটে আবার মনোরেলের চড়ে পূর্বের গন্তব্যে পৌঁছলাম। আর ঘণ্টাখানেকের মধ্যে উইংস অব টাইম শো শুরু হবে। আমরা সমুদ্রের ধারে বিশাল পার্কে অবস্থান করে অপেক্ষা করতে লাগলাম। প্রচুর পর্যটক বিশ্রাম নিচ্ছেন এবং শিশুরা প্রকৃতিতে খেলা করছে। অত:পর যথাসময়ে শো শুরু হবার স্থানে আমরা পৌঁছলাম। সমুদ্রের তীরে সৈকতে গ্যালারী বানিয়ে সমুদ্রের বুকে শো টি দেখানো হবে। গ্যালারী ভর্তি হাজার হাজার দর্শক। সকলে তাদের সানতোষার এওয়ার্ড প্রাপ্ত আউটডোর উন্মুক্ত সমুদ্রের বুকে যাদুর মন্ত্রে মুগ্ধ হবার মতো নাইট শো দেখবার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগলো। আমরাও সবার মতো অপেক্ষা করতে লাগলাম। সৈকতে বিশাল দুটি সাউন্ড বক্স রাখা। রাত নেমে আসার সাথে সাথে হঠাৎ একটি তরুণ ও তরুণীকে সৈকতে দৌঁড়াতে দেখলাম।

সাউন্ড বক্সে তাদের ছুটোছুটি ও আনন্দ করার কথা ভেসে আসছিল। বাস্তবে দেখা তরুণ-তরুণী দুটি সমুদ্রের বুকে লেজার এর প্রোজেক্টরের সাথে হঠাৎ একাকার হয়ে গেল। এটি যেন সাগরের বুকের গান। ৩০ মিনিটের এই শোটি অপূর্ব আলো, শব্দ, লেজার, পানি এবং আতশবাজির খেলা দিয়ে একটি গল্পের মাধ্যমে বিমোহিত করে রাখে। অত্যন্ত কাঠখোট্টা মানুষও এমন শো দেখে আনন্দিত ও বিমোহিত না হয়ে পারবে না। এই শো টি এওয়ার্ড প্রাপ্ত একটি বিখ্যাত ফ্রেঞ্চ কোম্পানীর সাথে পার্টনারশীপে তৈরী করা। এতে যাদুকরী বিশাল ওয়াটার স্ক্রীনে মাল্টিমিডিয়া প্রোজেক্টরের মাধ্যমে থ্রি ডি প্রোজেকশনের কাজ করা হয়। এছাড়া অপূর্ব লেজার, কৃত্রিম ঢেউ সৃষ্টি এবং অন্ধকার আকাশের বুকে নজরকাড়া আতশবাজির খেলা, সুরের মূর্ছনায় দৃষ্টিনন্দন ও উপভোগ্য শো দেখানো হয়। প্রাক ঐতিহাসিক যুগের শাহবাজ নামের একটি পাখি যে পৃথিবীর শুরুর সময় থেকে বর্তমানের রাচেল ও ফেলিক্সের সাথে বন্ধুত্ব করে তার সময়ে তাদেরকে সঙ্গী করে নিয়ে যায়। এতে সময়ের সাথে কিভাবে পাথর যুগ থেকে মানুষ শিল্প-বাণিজ্য ইন্ডাস্ট্রিলাইজেশনের যুগে উন্নীত হয় তারই চিত্র তুলে ধরা হয়। এতে ব্রিটিশদের শিল্প বিপ্লব, সিল্ক রোড যুগ, মায়ান পিরামিড, সাগর তলের ভুবন, আফ্রিকান সাভানা সুর, আলো, মাল্টিমিডিয়া প্রোজেক্টর, আতশবাজির খেলা, সমুদ্রের বুকে কৃত্রিম পানির খেলা দিয়ে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে চমৎকার গল্পটি জীবন্ত করে ফুটিয়ে তোলা হয়। তরুণ-তরুণী দুটির সাথে আমরাও শাহবাজ পাখির সাথে উড়ে এ পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকে ইতিহাস-ঐতিহ্যের জ্ঞান আহরণ করলাম। বর্ণাঢ্য আলোর ঝলকানি, আগুনের খেলা, সুরের সাথে পানির যাদুকরী মূর্ছনা সবই আমাদেরকে কিছুক্ষণের জন্য আবেগে মোহাবিষ্ট করে রেখেছিল। চোখের পলক যেন পড়ছিল না। একের পর এক বিস্ময়! রাতের আধাঁরে সাগরের বুকে এই অপূর্ব আলোর খেলা ও নাটকীয়তা শিশু-কিশোর জোয়ান-বুড়া সবাইকে ক্ষণিকের জন্য অন্য এক রাজ্যে নিয়ে যায়। যা চোখে না দেখলে বর্ণনা দিয়ে প্রকাশ করা অসম্ভব। আমার মেয়ে আইনের ছাত্রী রাইসা বললো, ২টি নারীশৃংখলাকর্মী পুরো অনুষ্ঠানটি নিয়ন্ত্রণ করলো। অথচ পুরো অনুষ্ঠানটি আমাদের দেশে হলে কয়েক ডজন পুলিশ ও শ’খানেক স্বেচ্ছাসেবক লাগতো। চমৎকার শৃংখলার দেশ। এখানে আসার আগে আমাদের ড্রাইভার এবং পরিচিতদের কাছে উইংস অফ টাইম শো’টির প্রশংসা শুনেছিলাম। তারা কিছু না বলে শুধু বলেছিলেন খুবই উপভোগ করবো। সত্যিই তাই হলো! শেষ শো’টা মনের মধ্যে একরাশ আনন্দ আর মনোমুগ্ধকর স্মৃতির রেশ নিয়ে সানতোষা থেকে ফিরে চললাম। সত্যি যেন সানতোষা একটি শান্তির জায়গা। নামটি যথার্থই হয়েছে। আমরা একবারে ডিনার সেরে হোটেলে ফিরে চললাম। আগামীকাল রাত ১১টায় আমরা এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে হোটেল ছাড়বো। এর আগে দুপুর থেকে রাত ৯ টা অবধি মেরিনা বে তে অবস্থিত স্কাই পার্ক ও গার্ডেন বাই দ্যা বে তে ফ্লাওয়্যার ডোম ও ক্লাউড ফরেস্ট দেখতে যাবো। আধুনিক সিঙ্গাপুরকে বিশ্ববাসীর সামনে যা আরো বেশী আকর্ষণীয় করে তুলেছে। সমাপ্ত

আশ্ফা খানম শিক্ষাবিদ, নারীউন্নয়নকর্মী

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট