চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

বুলবুলের তা-ব

ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে

১৪ নভেম্বর, ২০১৯ | ১:০৭ পূর্বাহ্ণ

শেষ পর্যন্ত দুর্বল হয়ে আঘাত হানার পরও ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ বাংলাদেশের ব্যাপক ক্ষতি করেছে। পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন লাগোয়া বকখালী, বসিরহাট ও সন্দেশখালীতে তা-ব চালিয়ে বুলবুল যখন বাংলাদেশের খুলনা-সাতক্ষীরা সুন্দরবন অংশে প্রবেশ করে, তখন ঝড়টি ছিল অনেকটাই দুর্বল। কিন্তু দুর্বল হওয়ার পরও বুলবুল দেশের উপকূল অতিক্রম করার চার ঘণ্টা সময় তা-ব চালিয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় ১৫টি জেলায়। বুলবুলের তা-বে এসব জেলায় প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ২৬ জন। আহত হয়েছে অনেক। বুলবুলের তা-বে ল-ভ- হয়েছে মানববসতি, গাছপালা, ফসলি জমি। শত শত গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে গাছপালা-ঘরবাড়ি। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির হয়েছে ফসলেরও। নৌকাডুবিতেও কয়েকজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। যদিও এখনো ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র নিরূপণ সম্ভব হয়নি, তবে প্রাথমিকভাবে ক্ষতির যে চিত্র প্রকাশ পেয়েছে, তাও উদ্বেগকর। এ অবস্থায় দুর্যোগকবলিত মানুষদের পুনর্বাসনে বলিষ্ঠ পদক্ষেপের বিকল্প নেই।

উল্লেখ্য, ঘূর্ণিঝড়টির ব্যাস ছিল ২০০ থেকে ২৫০ কিলোমিটার। স্থলভাগে উঠার সময় ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার। তবে উপকূলের ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে প্রবেশের পথে ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি কিছুটা কমে যায়। বারবার গতিপথ বদল করে বুলবুল বেকায়দায় ফেলে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের। প্রথমে বলা হয়েছিল ওডিশায় যাবে ‘বুলবুল’। পরে পথ বদলে বাংলাদেশের দিকে আসে। তবে ঠিক কোথায় গিয়ে আঘাত হানবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছিলেন না আবহাওয়াবিদরা। বিকেলে পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপের দিকে বাঁক নেয়। সেখানে আঘাত হানার পর সুন্দরবন হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এতে বুলবুল আরো দুর্বল হয়ে পড়ে। তবে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ মোকাবিলায় সরকারের ব্যাপক প্রস্তুতি ছিল। উপকূলের ২১ লাখ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয় নিরাপদ আশ্রয়ে। ফলে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। যারা হতাহত হয়েছে তারা আশ্রয় শিবিরে যায়নি। তবে হাজার হাজার বসতবাড়ি, মৎস্য খামার ও পাকা ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

বুলবুলের প্রভাবে ভারি বর্ষণের পাশাপাশি তীব্র বাতাসে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে আমন ধানের। ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে শীতকালীন সবজি। দেশের বিভিন্ন জেলায় উপড়ে গেছে অসংখ্য গাছ। এতে সড়ক, রাস্তাঘাটে যানবাহন চলাচলে বিঘœ ঘটছে। বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ায় অনেক জেলা এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। মাছের ঘের তলিয়ে যাওয়ায় উপকূল অঞ্চলের মাছ চাষিরা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন। বুলবুলের প্রভাবে কোথাও কোথাও স্বাভাবিকের চেয়ে চার থেকে পাঁচ ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হওয়ায় ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তবে জোয়ারের সময় ঘূর্ণিঝড়টি না আসায় বড় ধরনের জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা মিলেছে।

ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ সুপ্রাচীনকাল থেকেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ কবলিত দেশ। প্রায় সারাবছরই বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানে এখানকার উপকূলীয় জেলাগুলোতে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেনো এ জনপদের মানুষের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে প্রাণসংহারী, ভয়াবহ এসব দুর্যোগ মোকাবিলায় এদেশের মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে সবসময়। এসব দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারও যথেষ্ট তৎপর। বুলবুল মোকাবিলায়ও সরকারের যথেষ্ট পূর্বপ্রস্তুতি ছিল। প্রধানমন্ত্রী বুলবুলের আঘাত মোকাবেলায় যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার এবং সমন্বিতভাবে কাজ করার নির্দেশ আগেই দিয়েছিলেন। ত্রাণ ও দুর্যোগসংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দফতরগুলো ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে ক্ষয়ক্ষতি কমানোর ক্ষেত্রে। এখন বুলবুলে ক্ষতিগ্রস্ত, বিশেষ করে ফসল ও ঘরবাড়ি হারানো মানুষের পাশে পর্যাপ্ত ত্রাণ নিয়ে দাঁড়াতে হবে। তাদের পুনর্বাসনে সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে। বঙ্গোপসাগর বা তৎসংলগ্ন আন্দামান সাগর থেকে সাধারণত নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়ে আঘাত হানে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে। প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এসব সাগর থেকে নিম্নচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে। তাই বুলবুল বিদায় নিলেও আরও ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়ে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে যে আঘাত হানবে না, সে শঙ্কা মোটেই উড়িয়ে দিচ্ছেন না আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। আর এই শঙ্কা না কাটা পর্যন্ত বাংলাদেশে শীতও জেঁকে বসতে পারবে না। সুতরাং এ ব্যাপারেও যথেষ্ট পূর্বপ্রস্তুতি থাকতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট