চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

স্মৃতির রেখাচিত্রে অধ্যক্ষ মোহাম্মদ হোসেন খান

সরোজ আহমেদ

১৪ নভেম্বর, ২০১৯ | ১:০৭ পূর্বাহ্ণ

কিছু মানুষের প্রয়াণ সমাজ তথা দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। যে ক্ষতি সহজে পূরণ হবার নয়। তবে এসব ক্ষণজন্মা মহাপুরুষরা কখনো হারায় না, হারাতে পারেন না। তাঁরা বেঁচে থাকেন প্রজন্ম্ থেকে প্রজন্মে তাঁদের কীর্তির আলোয় আলোকিত হয় দেশ-সমাজ-জাতি।

অধ্যক্ষ মোহাম্মদ হোসেন খান এমনই এক ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ। যিনি ছিলেন একাধারে শিক্ষাবিদ, রাজনীতিক, সংগঠক, দেশপ্রেমিক, সমাজসংস্কারক, লেখক, বিশ্লেষক এবং পরিশুদ্ধ জ্ঞানের বাতিঘর। যারঁ দেখানো পথ ধরেই অনেকে পৌঁছেছে অভিষ্ট লক্ষে, খুঁজে পেয়েছে জীবনের দিশা। এমন বিদগ্ধ ব্যক্তির ¯েœহ , ভালোবাসা, সান্নিধ্য সবার ভাগ্যে জুটে না। যারা যৎসামান্যও পেয়েছে তাদের জনম ভাগ্য বলতে হবে।

সেই অর্থে আমি নিজেকে অনেক বড় ভাগ্যমান মনে করি। অধ্যক্ষ মোহাম্মদ হোসেন খান প্রকাশ প্রিন্সিপাল স্যার উঁচুমাপের একজন ব্যক্তি হয়েও আমার মতো অতি নগণ্য একজনকে খুব আপন করে নিয়েছিলেন। ঠাঁই দিয়েছিলেন মনের মণিকোঠায়। যেখানে বয়সের পার্থক্য কখনো বাধা হয়ে দাড়ায়নি। আস্থা, বিশ্বাস, ভালোবাসা আর মূল্যবোধ সব সীমারেখাকে অতিক্রম করে আমাদের সম্পর্ককে উচ্চাসনে আসীন করিয়েছিল। ফলে প্রয়োজনে যখন যেখানে ডেকেছি, সাড়া পেয়েছি। শত ব্যস্ততার মাঝেও কখনো বিমুখ করেননি আমাকে। স্যারও যখন যেখানে আমাকে পেয়েছেন মনের অভিব্যক্তি শেয়ার করেছেন অকপটে। গল্পের ছলে তুলে ধরেছেন সমাজের নানা সমস্যা এবং অসঙ্গতি। আবার সহজ ভাষায় বাতলেও দিয়েছেন সমাধানের পথ।

কেন জানি, যেকোন সৃজনশীল কর্মে আমার প্রতি স্যারের আস্থা ছিল খুব বেশি। তাই তিনি জোর দিয়েই বলতেন, ‘এই কাজটা তোমাকেই করতে হবে। তুমি ছাড়া আর কেউ পারবে না’। আর আমিও চেষ্টা করতাম, স্যারের আস্থার মূল্য দিতে। ফলে অনেক কঠিন কাজও আমার জন্য সহজ হয়ে যেত। আর এভাবেই স্যারের দেখানো পথে হেঁটে অর্জন করেছি জীবনের অনেক কিছু। শুধু আমি নই, স্যারের অগণিত ছাত্র, ভক্ত অনুরাগী জাতির এই সূর্য সন্তানের পাদপ্রদীপের নিচে এসে হয়েছেন আলোকিত, পেয়েছেন জীবনের সঠিক গতিপথ। ক্ষণজন্মা এই মহাপুরুষের ঋণ কোন কিছুতেই শোধ হবার নয়।

আমাদের গর্ব, প্রিয় অভিভাবক, অতি আপন মানুষটি ২০১৩ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ সবাইকে শোক সাগরে ভাসিয়ে চলে গেলেন আর না ফেরার দেশে। সেদিনের বিয়োগ ব্যথা আজও ভুলতে পারিনি। ভাবতে খুব কষ্ট হয়। কারণ তিনি আমার প্রতিটি কাজে-কর্মে ছিলেন প্রকৃত অভিভাবকের মতো।
কোন কাজ শুরুর আগে যখনই ছুটে গেছি, সবিস্তারে শোনার পর সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়ে কঠিন কাজটি সহজ করে দিয়েছেন স্যার অধ্যক্ষ মোহাম্মদ হোসেন খান। ফলে যে কোন কাজে সাহস নিয়ে এগিয়ে গেছি। স্যারের এত অবদান এত স্মৃতি কখনো ভোলা যাবেনা।
আজ তিনি নেই কিন্তু তার নীতি-আদর্শ বেঁচে আছে হাজারো ছাত্র ছাত্রী ভক্ত অনুরোক্তদের অন্তরে। স্যারের আদর্শকে ধারণ করে আমরা আগামির পথ চলব, এগিয়ে যাবো, কাজ করবো দেশমাতৃকার কল্যাণে। যেখানেই থাকুন, ভালো থাকবেন স্যার আপনাকে আমরা ভুলিনি ভুলবো না।
ষষ্ঠ মৃত্যু বার্ষিকীতে স্যারের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।

সরোজ আহমেদ সাংবাদিক ও সংগঠক।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট