চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিন কসবায় প্রাণঘাতী রেলদুর্ঘটনা

১৩ নভেম্বর, ২০১৯ | ৫:২০ পূর্বাহ্ণ

সরকারের নানা পদক্ষেপ সত্ত্বেও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা ঝুঁঁকিমুক্ত হতে পারেনি এখনও। প্রায়ই ঘটে চলেছে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা। অধিকাংশ সময়ে দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে চালক, গার্ড, স্টেশন মাস্টারসহ সংশ্লিষ্টদের ভুলের কারণে। সর্বশেষ গতকাল ভোররাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার মন্দবাগ নামক স্থানে দুটি ট্রেনে সংঘর্ষে অন্তত ১৮ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক। উপজেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনের ক্রসিংয়ে আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ও তূর্ণা নিশীথা ট্রেনের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আভিযোগ উঠেছে, এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে তূর্ণার চালক সিগনাল অমান্য করায়। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে মোট পাঁচটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের দুটি, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের একটি, সরকারি রেল পরিদর্শকের একটি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের একটি। তদন্তরিপোর্ট পেলেই জানা যাবে মূল কারণ। তবে ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলো দুর্ঘটনার পেছনে চালকের ভুলকেই দায়ী করেছে। তূর্ণা নিশীথার চালক, সহকারী চালক ও পরিচালককে সাময়িকভাবে বরখাস্তও করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পেছনে চালকের ভুল থাকলে, কেনো এমন মারাত্মক ভুল হলো তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে নিশ্চয়ই।

গণমাধ্যমের খবর বলছে, ট্রেনের লাইন পরিবর্তনের সময়টাতেই ওই দুর্ঘটনা ঘটে। তূর্ণার চালক তথা লোকো মাস্টারকে ট্রেন থামানোর জন্য আউটার ও হোম দুই স্থানেই লাল বাতি সংকেত দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু চালক ট্রেন দাঁড় করাননি। তিনি সিগন্যাল অমান্য করে ভুল লাইনে চলে যান। পরিণামে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ও চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেস ট্রেনের মধ্যে চলন্ত অবস্থায় সংঘর্ষ ঘটে। কারণ উদয়নকে লুপ বা সাইড লাইনে যখন পাঠানো হচ্ছিল তখন এর পেছনের তিনটি বগি মূল লাইনে থাকতেই ঢাকাগামী তূর্ণা চলে আসে। বিকট শব্দে মুখোমুখি সংঘর্ষের ফলে লাইনচ্যুত ও দুমড়ে-মুচড়ে যায় দুই ট্রেনের বহু বগি। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী ও রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা দুর্ঘটনার পেছনে দু’টি কারণ থাকতে পারে বলে মনে করছেন। তাদের মতে, তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেস ট্রেনের চালক ঘুমিয়ে সিগন্যাল দেখেননি। অথবা তাকে সিগনাল দেওয়া হয়নি বা পরে দেওয়া হয়েছে। এই দু’টি সামান্য ভুলের কোনো একটির কারণেই এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে মন্দবাগ রেলস্টেশনের মাস্টারের দাবি, আউটার ও হোম সিগন্যালে লাল বাতি (সর্তক সংকেত) দেওয়া ছিল। তার দাবি তূর্ণা নিশীথার চালক সিগন্যাল অমান্য করে ঢুকে পড়াতেই এ দুর্ঘটনা ঘটে।

তুলনামূলক নিরাপদ বাহন হিসেবে বিবেচনা করে মানুষ ট্রেনে ভ্রমণ করতে আগ্রহী হয়। কিন্তু সেই ট্রেনে যদি এভাবে চালকের খামখেয়ালি বা অন্য কারণে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটতে থাকে, তার চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কী হতে পারে? সর্বশেষ কসবার মন্দবাগ রেলদুর্ঘটনা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, রেলপথের নিরাপত্তা বিধানে আর খামখেয়ালির সুযোগ নেই। আমরা মনে করি, জনস্বার্থে দুর্ঘটনার কারণ সঠিকভাবে চিহ্নিত করে অবিলম্বে প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। একইসঙ্গে নিহতদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। নিহতদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে। দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখে চালকসহ কারও কোনো অবহেলা থাকলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। রেল যোগাযোগ নিরাপদ করার জন্য দরকারি সব পদক্ষেপই নিতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট