চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ছাত্ররাজনীতি ও ছাত্রকল্যাণ

রুপম চক্রবর্ত্তী

১২ নভেম্বর, ২০১৯ | ২:০৩ পূর্বাহ্ণ

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আধিপত্য বিস্তারের জেরে বহুকাল ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের হাতে অসংখ্য মেধাবী ছাত্রের মৃত্যু ঘটেছে। যে ছাত্ররাজনীতির গৌরবময় ইতিহাস আছে সে রাজনীতি কুলষিত হোক এটা সুন্দর মন-মানসিকতার কোনো মানুষ চান না। ভাষা আন্দোলন থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধ- ছাত্রসমাজের ভূমিকার কথা লিখে শেষ করা যাবে না। ১৯৭৫ সালে জাতির জনকের হত্যার পর থেকে দেশের ছাত্ররাজনীতিতে আমূল পরিবর্তন হয়। ক্ষেত্র বিশেষে আধিপত্য আর দখলদারিত্ব মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যাওয়া ছাত্ররাজনীতি ভুলে যায় সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের চাওয়া পাওয়ার কথা।

আমরা দেশের নাগরিক হিসেবে রাজনীতির বাইরে থাকতে পারি না। আমাদেরও প্রত্যকের একটা নিজস্ব ধারা থাকে, নিজস্ব পছন্দ থাকে। একজন ছাত্র অথবা একজন ছাত্রী যখন রাজনীতি করতে যান তখন তার একটা দায়বদ্ধতা থাকে। প্রথমে তাকে করতে হবে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার মান উন্নত করা যায় কিনা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ আছে কিনা। ছাত্ররাজনীতির সাথে যদি দেশপ্রেম, মানবপ্রেম যুক্ত করা না যায় তাহলে অসংখ্য মেধাবী ছাত্রছাত্রী অকালে হারিয়ে যাবে।
গত কিছুদিন আগে আবরার নামের একজন মেধাবী ছাত্র চিরতরে হারিয়ে গেছে। আবার তাকে যারা হত্যা করেছে তারাও মেধাবী। এই মেধাবী ছাত্রগুলোকে তৈরি করতে মা-বাবার অমানুষিক পরিশ্রম হয়েছে। যখন সেই মেধাবী ছেলের লাশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বাড়িতে এসে পৌঁছে তখন মনকে আর কি সান্ত¡না দেয়া যেতে পারে?

বড়দের দেখে ছোটরা অনেক কিছু শিখে। বড়দের রাজনীতি যখন পরিশুদ্ধ হবে তখন দেখা যাবে ছোট যারা আছে তারাও পরিশুদ্ধ হয়ে উঠবে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টায় দেশের বিভিন্ন সেক্টরে ও অনেক উন্নতি হয়েছে। এই উন্নতির সময়ে ছাত্র রাজনীতিবিদদের কাছে প্রত্যাশা থাকবে সকল ছাত্রছাত্রী সুন্দর পরিবেশে যেন শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন। সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এমন হবে যেখানে ছাত্রনির্যাতন থাকবে না। সিনিয়র জুনিয়র ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক থাকবে। লেখাপড়ার পাশাপাশি আমাদের ছেলেমেয়েরা যেন আদর্শ শিক্ষা লাভ করতে পারে তার দিকে ছাত্র নেতাদের খেয়াল রাখা উচিত। একটি সময় ছিল ছেলেমেয়েরা নিজের পরিবারে বড়জনদের কথা শুনত। বড়জনদের শ্রদ্ধাও করত। কিন্তু এখন কিছু কিছু ক্ষেত্রে শ্রদ্ধাবোধের অভাব দেখা যাচ্ছে। শ্রদ্ধার চর্চা পরিবার থেকেই শিক্ষা পাবে এটা যেমন সত্য তেমনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরও কিছু দায় থেকে যায়। আমাদেরও মনে রাখতে হবে বিদ্যা বিনয় দান করে। বিনয় যুক্ত বিদ্যা লাভের মাধ্যমে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুন্দর একটি পরিবেশ গড়ার উদ্দেশ্য নিয়ে আমাদের ছাত্ররাজনীতিবিদরা কাজ করবে। আমরা চেষ্টা করব সবার মধ্যে যেন নৈতিক বিবেকবোধ কাজ করে। ছাত্রসমাজের কাছে যে শক্তি আছে সেই শক্তিকে যদি মানবকল্যাণে অথবা দেশ সেবায় নিয়োজিত করতে পারেন তাহলে সমাজের অনেক উন্নয়ন হবে। একজন ছাত্র লেখাপড়ার সাথে সাথে তিনি ছাত্রসংগঠনের সাথে যুক্ত হতে পারেন। যেসব ছাত্রছাত্রী রাজনীতি করেন তাদেরও উচিত হবে মানবিকতার রাজনীতি করা। কেউ যেন সুশিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয় তার জন্য রাজনীতি করা উচিত। উত্তম চরিত্র গঠনের আন্দোলন করার মানসিকতা আমাদের ছাত্রছাত্রীদের থাকতে হবে। যদি আমরা চরিত্রকে সাজাতে না পারি তাহলে আদর্শ ছাত্রছাত্রী হতে পারবনা। আমাদের ছাত্রছাত্রীরা আরো কিছু কাজ করতে পারেন। নতুন একজন শিক্ষার্থী যখন কোনো বিদ্যাপীঠে যান তখন পুরাতন ছাত্রছাত্রীর উচিত তাকে ভাল ব্যবহার দিয়ে বিদ্যা অর্জনে সহায়তা করা।

আরো একটু গভীরে গেলে দেখা যায় শুভ আর অশুভ শক্তির সংঘাত অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। শুভ শক্তির মানুষগুলো বারবার পরাজিত হয়েছে। বঞ্চিত হয়েছে তাদের অধিকার থেকে। বারবার শোষিত হয়েছে। জায়গা জমি হারিয়ে অনেকে পথের ভিখারি হয়েছে। অশুভ চেতনার মানুষগুলো সুবিধা পেলেও তারা যে বেশ সুখে থাকে এই রকম ভাবা আমাদের উচিত হবে না। হয়তো বাহুবল অথবা আর্থিক বলের কারণে তাদেরকে সম্মান জানাতে হয়, তাদের কাছে মাথা নত করে থাকতে হয়। একটা সময় আসে যখন প্রকৃতি তাদের বিচার করে। পৌরাণিক কাহিনীগুলোতে দেখা যাবে পরাজিত শুভ শক্তির মানুষগুলোর পক্ষে ইতিহাস রচিত হয়েছে। শুভ ও সুন্দর মনসিকতার চর্চার মাধ্যমে একটা সময় অশুভ শক্তি পরাজিত হবে। কিন্তু আমাদের কাজ চালিয়ে যেতে হবে যাতে সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট