চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)

১০ নভেম্বর, ২০১৯ | ২:৩৭ পূর্বাহ্ণ

আজ উৎসবের রোশনাই ঘেরা বারোই রবিউল আউয়াল। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশারী রহমাতুল্লিল আ’লামিন সাইয়্যেদুল মুরসালিন খাতামুন্নাবিয়ীন তাজেদারে মদীনা জগৎকুল শিরোমণি সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ আহমদ মুজতাবা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম ও ওফাত দিবস। ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের এই দিনে বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত হযরত মুহাম্মদ (সা.) শান্তির পয়গাম নিয়ে এই ধরাধামে আবির্ভূত হন। আবার ৬৩ বছর বয়সে এই দিনেই তিনি মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যান। তিনি সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ। মহান রাব্বুল আ’লামীন তাঁর জন্ম-আবির্ভাব সম্পর্কে বলেছেন, ওয়ামা আরসালনাকা ইল্লা রাহমাতুল্লিল আলামিন। অর্থাৎ হে নবী আমি আপনাকে সমগ্র সৃষ্টির জন্যে রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছি। যার কারণে আজকের এই মহাপবিত্র দিনটি ইসলাম ধর্মাবলম্বীসহ সমগ্র মানবজাতির জন্যে পরম তাৎপর্যবহ ও মর্যাদাপূর্ণ।

সাধক শেখসাদী লিখেছেন, ‘বালাগাল উলা বিকামালিহি। কাশাফাদ্দোজা বিজামালিহি। হাসুনাত জামিউ খিসালিহি। ছাল্লু আলাইহি অ-আলিহি’। অর্থাৎ তিনি (মুহাম্মদ স.) চরিত্রের পরিপূর্ণতায় সম্মানের উচ্চাসনে আসীন হয়েছেন। তাঁর সৌন্দর্য্যরে আলো চারিদিকে বিকশিত হয়ে পড়েছে। তাই তাঁর সমস্ত কর্মকা-ই প্রশংসনীয়। অতএব সবাই তাঁর উপর দরূদ পাঠ করুন এবং তাঁর পরিবারবর্গের জন্য মহামহিম আল্লাহ পাকের দরবারে মাগফেরাত কামনা করুন। প্রতিদিন প্রতিক্ষণে বিশ্বের প্রতি প্রান্তে অযুত কণ্ঠে ধ্বনিত ও প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরছে তাঁর মহিমাগাথা। হজরত মুহাম্মদ (সা.) যেই দিন যেই মুহূর্তে পৃথিবীতে তাশরিফ এনেছিলেন, সেই দিন ও সেই মুহূর্তটি বিশ্বজগতের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ আনন্দের দিন। এ জন্য বলা হয় ঈদে মিলাদুন্নবী বা নবী (সা.) এর জন্মোৎসব বা জন্মদিবসের আনন্দ। তিনি বিশ্বমানবতার প্রতীক ও সত্য-সুন্দরের বাণীবাহক। তাঁর আদর্শ ও চারিত্রিক মাধুর্যের কারণে নানা গোত্রে বিভক্ত, কলহ-বিবাদপ্রিয়, সামাজিক ও নৈতিকভাবে অধঃপতিত, যাযাবর ও বর্বর আরব জাতি একটি সুমহান জাতিতে পরিণত হয়। তিনি উৎপীড়িত ও অত্যাচারিত মানুষের প্রকৃত বন্ধু ছিলেন। অনাথ, দাস, কন্যাশিশু, বিধবা নারী ও গরিব-দুঃখীর কষ্ট মোচনে সদা তৎপর ছিলেন।

পবিত্র ঈদ মিলাদুন্নবী (সা.) মুসলমান জাতির কাছে অতি গুরুত্ববহ ও তাৎপর্যপূর্ণ আনন্দোৎসবই নয় শুধু, এই দিনটি আত্মোপলব্ধী ও আত্ম-জিজ্ঞাসার দিনও। এই মহামানবের মাধ্যমেই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রদান করেছেন মানবজাতির শ্রেষ্ঠতম ও সুন্দরতম পথনির্দেশনা। তাঁর মাধ্যমেই দয়াময় প্রতিপালক অবতীর্ণ করেন পূর্ণাঙ্গ ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবনবিধান পবিত্র আল-কোরান। তাঁর মাধ্যমেই মহান আল্লাহ ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিয়েছেন। ৬৩২ খ্রিস্টাব্দের ৯ জিলহজ্ব আরাফাত ময়দানে দুপুর বেলায় বিদায় হজ্বের ভাষণ শেষে যখন তিনি আসমানের দিকে শাহাদাত আঙ্গুলি উঠিয়ে বলেছিলেন, ‘হে আল্লাহ, তুমি সাক্ষী থাকো’ তখন যে ওহী নাযিল হয় তাতে ঘোষিত হয়েছে ইসলামের পরিপূর্ণতার কথা। ইরশাদ হয়েছে, ‘আজ তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম, আমার নিয়ামত তোমাদের উপর সম্পূর্ণভাবে প্রদান করলাম এবং তোমাদের দ্বীন ইসলামকে সানন্দ অনুমোদন দান করলাম।’ (সুরা মায়িদা ; আয়াত- ৩)

হযরত রাসুল করিম (সা.) তাঁর জীবন ও কর্ম-সাধনার মধ্য দিয়ে বিশ্বমানবের জন্যে রেখে গেছেন অনুপম আদর্শ। যে কোনো বিচারে তা সর্বোত্তম ও সুন্দরতম। আল্লাহ জাল্লা শানুহু তাঁকে সম্বোধন করে ইরশাদ করেন, ‘ওয়ারাফা আনা লাকা যিকরাক’। অর্থাৎ, আর আপনার খ্যাতিকে সুমহান মর্যাদায় উন্নীত করেছি। (সুরা ইনশিরা : আয়াত- ৪)। মহানবীর জীবনের প্রতিটি দিক সঠিকভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তাঁর আদর্শই সর্বোৎকৃষ্ট আদর্শ। মহান আল্লাহ কালামেপাকে বলেছেন, অবশ্যই তোমাদের জন্যে রয়েছে আল্লাহর রাসুলের (সা.) মধ্যে সর্বোত্তম আদর্শ। আর এজন্যেই কুরআনুল করিমে বারবার নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাঁর আদর্শকে আঁকড়ে ধরার জন্য। বিশ্বের বিভিন্ন গবেষকও একবাক্যে স্বীকার করেছেন যে, মানুষের কর্ম-সাধনার প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশ্বনবীর আদর্শ অনুসরণযোগ্য। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন সর্বগুণে গুণান্বিত। যাবতীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ উত্তম চরিত্র, মানবতা, সত্যবাদিতা, দানশীলতা মহানুভবতা, আমানত রক্ষাকারী পরোপকারী, নেতৃত্ব, অধ্যবসায়, বীরত্ব, মহত্ত্ব- এক কথায় মানবীয় যতোসব সুন্দর গুণ রয়েছে, তাঁর সবই বিকশিত হয়েছে হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর পবিত্র জীবনে। তাঁর আদর্শ সকল মানুষের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক মুক্তির মহাসনদ। আমাদের সৌভাগ্য যে, এরকম একজন নবীর উম্মত হওয়ার সুযোগ লাভ করেছি।
আমাদের সকলের উচিত এই ধরাধামে বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত, প্রিয় নবীর (সা.) আগমন উপলক্ষে খুশী উদযাপনের পাশাপাশি তাঁর পরিপূর্ণ আদর্শ অনুসরণ তথা শান্তি, সম্প্রীতি ও সৌভ্রাতৃত্বের ধর্ম ইসলামের মহান শিক্ষাকে সমাজ, রাষ্ট্র ও জীবনের সকল ক্ষেত্রে বাস্তবায়নের শপথ নেয়া। শান্তিপূর্ণ, প্রীতিময়, সমৃদ্ধ ও মানবতাবাদী সমাজ বিনির্মাণে এর বিকল্প নেই। নবী (সা.)-এর শিক্ষা ও আদর্শই আমাদের সঠিক পথ দেখাতে পারে। মিলাদুন্নবীর (সা.) পবিত্র দিনে এই মহামানবের প্রতি জানাই সালাম ও দরূদ। কামনা করি বিশ্বমানবের শান্তি ও কল্যাণ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট