চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পার্বত্য চট্টগ্রামের অমিত পর্যটন সম্ভাবনা কাজে লাগাতে উদ্যোগ নিন

৮ নভেম্বর, ২০১৯ | ২:০৯ পূর্বাহ্ণ

পার্বত্য চট্টগ্রামকে ঘিরে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা থাকার পরও তা কাজে না লাগাতে না পারা দুঃখজনক। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি এই পার্বত্য এলাকা সৌন্দর্যপিপাসু দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়। নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করে প্রচার-প্রচারণা, যাতায়াত ও থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থাসহ বহুমাত্রিক পদক্ষেপ নিলে এই পার্বত্য চট্টগ্রাম অন্যতম বিশ^সেরা পর্যটনকেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। এতে স্থানীয় জনগোষ্ঠী যেমন কর্মসংস্থান, তাদের উৎপাদিত সামগ্রী বিক্রয় করে উপার্জনসহ নানাভাবে লাভবান হতে পারে, তেমনি জাতীয় অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হবে। কিন্তু এ বিষয়ে বলিষ্ঠ উদ্যোগের অভাব খুবই পীড়াদায়ক।

পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতা এবং নানাভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার কারণেও পার্বত্য চট্টগ্রাম পর্যটকদের আকর্ষণে ব্যর্থ হচ্ছে। বছরকয়েক ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা তৎপর হয়ে উঠেছে। তারা নানা কৌশলে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকা-ে ইন্ধন যোগাচ্ছে। পাহাড়ি-বাঙালি জনগোষ্ঠীকে মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছে। নানামুখি দ্বন্দ্ব-সংঘাতে রক্তাক্ত করছে অপার সম্ভাবনার এই পার্বত্য জনপদ। শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘিœত হওয়ার ফলে পর্যটকরা প্রবল আকর্ষণ থাকার পরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে যেতে আগ্রহ বোধ করছেন না। পর্যটক নিরাপত্তাহীনতার পাশাপাশি প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যও বিনষ্ট হচ্ছে। তিন পার্বত্যজেলা রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির জেলাপ্রশাসন ও বনবিভাগীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নীরব ভূমিকার কারণে সেখানকার জীববৈচিত্র্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কয়েক প্রজাতির হরিণ, বাঘ, ভল্লুক, সোনালী বিড়াল, গুইসাপ, অজগর, বানর, হনুমান, বন্যশুকর, শৃগাল ইতোমধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমের অনুসন্ধানী রিপোর্টে শিকারীরা অব্যাহতভাবে এসব প্রাণী শিকার এবং জেলাসদরের হাট-বাজারসহ উপজেলার হাট-বাজারে এগুলোর অবাধে বিক্রির চিত্র উঠে এসেছে। কিন্তু কঠোর প্রতিরোধ উদ্যোগ দৃষ্টিগোচর হয়নি। ফলে পার্বত্যঅঞ্চলের অনেক প্রাণীই এখন আর চোখে পড়ে না। অথচ এক যুগ আগেও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িরা জুম চাষ করতে গিয়ে হরিণ, বাঘ, ভল্লুক, গুইসাপ, সাপ ও বন্যশুকরের উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠতো। আর এখন এসব বন্যপ্রাণীর খোঁজ মিলে না অনেক অনুসন্ধানের পরও। শিকারীদের জাল ও ফাঁদে আটকা পড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে এসব প্রাণী। পরিবেশবান্ধব এসব প্রাণীকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষার জন্যে সরকার পশু-শিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও তা লঙ্ঘিত হচ্ছে। শিকারীরা সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে এবং গোপনে পশুশিকারে প্রবৃত্ত হয়। ফলে, তাদের দৌরাত্ম্যে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে পরিবেশবান্ধব বন্যপ্রাণীরা। পরিবেশবিদদের মতে, পার্বত্য এলাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধি, পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতার অভাব, অপরিকল্পিত নগরায়ন, মানুষের লোভ, যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নের নামে অপরিকল্পিত ব্রিজ-কালভার্ট ও বাঁধ নির্মাণ করে জলাভূমি সংকুচিত করে ফেলা, নির্বিচারে বনভূমি উজাড় ও পশু-পাখি নিধন, জলাভূমি ভরাট ও দখল, দূষণের কবল থেকে নদী, ছড়া ও অন্যান্য জলাভূমি রক্ষার জন্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করা, অপরিকল্পিত শিল্প-কারখানা স্থাপন এবং পরিবেশ সম্পর্কিত আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবেই জীব-বৈচিত্র্য ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। প্রসঙ্গত, বন্যপ্রাণী ক্রমশঃ বিলুপ্ত হওয়ার ক্ষেত্রে আরো বেশ কয়েকটি কারণ সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। নির্বিচারে গাছপালা কেটে ফেলা এবং জুম চাষের নামে অগ্নিসংযোগ করে বনভূমি উজাড় এবং মাটি ক্ষয়ের ফলে অনেক দুর্লভ গাছপালা ও পশু-পাখি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। একইসঙ্গে চলছে বন-দস্যুদের দ্বারা বনভূমি উজাড়করণ। আন্তর্জাতিক চোরাচালানচক্রের দাপটেও এদেশের বন্যপ্রাণী এবং বনজ ও জলজসম্পদ ধ্বংস হচ্ছে।

আমরা মনে করি, অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পার্বত্য চট্টগ্রামকে পর্যটকবান্ধব করার সব ধরনের পদক্ষেপই নেওয়া উচিত জাতীয় স্বার্থে। সব ধরনের সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ যেমন নিতে হবে তেমনি নিতে হবে সেখানকার জীববৈচিত্র্য ও বনভূমি সংরক্ষণের সুচিন্তিত উদ্যোগও। পার্বত্য চট্টগ্রামকে পর্যটকবান্ধব করা গেলে আমাদের জাতীয় অর্থনীতি যেমন শক্তিশালী হবে, তেমনি কর্মসংস্থান, স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত বস্ত্র ও খাদ্যপণ্যসহ নানা দ্রব্য বিপণনের মাধ্যমে পার্বত্যাঞ্চলের জনগোষ্ঠীও উপকৃত হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট