চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সিঙ্গাপুরে সানতোষার বিস্ময় পর্ব

আশ্ফা খানম

৮ নভেম্বর, ২০১৯ | ২:০৯ পূর্বাহ্ণ

তিনি আরো জানান তাদে র দেশে যত রাস্তা, বড় বড় দালান, ব্রীজ দেখা যাচ্ছে এর প্রায় অধিকাংশ শ্রমিক আমাদের বাংলাদেশের। এতো সুন্দর রাস্তা, ব্রীজ, দালান দেখে আমরা সত্যিই মুগ্ধ হই এবং বাংলাদেশী শ্রমিকদের অবদানের কথা জানতে পেরে গর্বে মনটা ভরে যায়। সাথে সাথে নিজের দেশের রাস্তা, ব্রীজ, দালানের দৈন্য দশার চিত্র চোখের সামনে ভেসে উঠে। আসলে শ্রমিকদেরকে যেভাবে বলা হবে তারা তো সেভাবেই কাজ করবে। আসল রাঘব বোয়ালরা তো শুধু নিজেদের পকেট পুরতেই ব্যস্ত। দেশের দৈন্য বা দুরাবস্থা তাদেরকে বিন্দুমাত্র বিচলিত করে না। শ্রমিকদের কাজের কারণে নয় বরং কতিপয় অসাধু ব্যক্তির কারণেই যে রাস্তা -ঘাট, পুল, ব্রীজ, দালানের এই দুরবস্থা তা রন্ধ্রে রন্ধ্রে উপলব্ধি করলাম। রাস্তার দু’পাশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে আমরা অবশেষে মাউন্ট ফেভারে এসে পৌছঁলাম। আমাদেরকে গাড়ী চালক টিকেট বুঝিয়ে দিয়ে রাত ১০টা বাজে যে স্পটে নিতে আসবে তা জানিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। আমরা মাউন্ট ফেভার এর অনলাইন এ করা টিকেট বের করার জন্য কাগজ নিয়ে ছুটলাম। আমার বড় ছেলে ফুয়াদ আহসানকে তার বাবা দায়িত্ব দিলেন টিকেট বের করে আনার জন্য। সে কাউন্টারে রাখা একটি কম্পিউটার থেকে কোড নং দিয়ে সবার জন্য টিকেট বের করে নেয়। অত:পর আমরা পাহাড়ের উপরে ছুটে চললাম। সেখানে সুন্দর পার্ক কাম রেস্টুরেন্ট দেখলাম। এছাড়া পাহাড়ের উপর থেকে দূরে সানতোষা দ্বীপ দেখা যায় এবং নয়নাভিরাম দৃশ্য অবলোকন করলাম। পার্কটিতে আমরা ছবি তুলে ক্যাবল কার করে সানতোষা দ্বীপে যাবার জন্য ছুটলাম। একটির পর একটি অসংখ্য ক্যাবল কারে এক দল আসছে তো আরেক দল যাচ্ছে। সবাই লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। প্রায় আধাঘণ্টা অপেক্ষার পর আমাদের পালা। উল্লেখ্য সেখানে ১৯৭২ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত যত মডেলের ক্যাবল কার ব্যবহার করা হয়েছে তার প্রতিটি মডেলের একটি করে নমুনা হিসেবে সাল ও নামসহ সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এ যেন ক্যাবল কারের মিউজিয়াম। মাউন্ট ফেভার থেকে আমরা ক্যাবল কারে শহরের ও সমুদ্রের দৃশ্য অবলোকন করতে করতে সানতোষা দ্বীপে পৌঁছলাম। আমার উচ্চতাভীতির জন্য আমি অনেকক্ষণ চোখ বন্ধ করে বসে রইলাম। মাঝে মাঝে সাহস সঞ্চয় করে একটুখানি চোখের পাতা ফাঁক করে চারপাশের দৃশ্য দেখার চেষ্টা করছিলাম। প্রায় ১৫ মিনিটের মধ্যে অবশেষে আমরা সানতোষায় পৌঁছলাম। চারদিকে কোলাহলপূর্ণ আনন্দঘন পরিবেশ। আমরা সেখান থেকে আইসক্রীম কিনে খেতে খেতে আমাদের থীম পার্ক ইউনিভার্সেল স্টুডিওতে শো দেখতে ছুটে চললাম। এখানেও লম্বা লাইন। আরো আধা ঘণ্টা পর শো শুরু হবে। তাই অপেক্ষা করতে লাগলাম। এবার আমাদের পালা। আমাদের টিকিট নিয়ে হাতে একটি বেল্ট পড়িয়ে দেয়া হলো এবং একটি সানগ্লাস ধরিয়ে দেয়া হলো। আমরা গ্যালারীতে ঢুকে শো দেখবার জন্য চশমা পরে যে যার মতো সিটে বসে পড়লাম। শুরু হলো থ্রি ডি ‘এ জার্নি টু মিস্টেরিয়াস আইল্যান্ড’ মুভির চরিত্রদের সাথে সাথে আমরাও রহস্যের দ্বীপে একটি ছোট প্লেনে চড়ে গেলাম। মাঝে মাঝে সিটের কাঁপুনি, ঝাঁকুনি, বিদ্যুৎ চমকানো, পানির ছলকায় মনে হচ্ছিল আমরাও চরিত্রগুলোর একজন। এভাবে মুভির চরিত্রদের সাথে সাথে আমরা এ দ্বীপ জয় করতে ছুটে চললাম। এ যাত্রায় মাঝে মাঝে ভয়ে বা আনন্দে সকলের চীৎকারে সবাই খুব আনন্দ উপভোগ করলাম। সকলেই খুবই চমৎকৃত হলো এবং আনন্দ হাসিমাখা মুখ নিয়ে হল থেকে বের হচ্ছিল।

বের হবার সময় চশমাগুলো হলের মুখে বাইরে বাক্সে রেখে দিই। এবার এ দিক সেদিক জিজ্ঞাসা করে আমরা ঘুরতে ঘুরতে বিশাল থীম পার্কের পরবর্তী শো উইংস অফ টাইম দেখতে ছুটে চললাম। ইনশা আল্লাহ্

তিন রাত চার দিনের সিঙ্গাপুর সফর স্মৃতির পর্দায় জ্বলজ্বল করে ভাসছে। ক্যাবল কার স্কাই নেটওয়ার্ক, নাইট সাফারী, গার্ডেন বাই দ্যা বে, এম বি এস স্যান্ডেস স্কাই পার্ক, সিঙ্গাপুর সিটি ট্যুর, চায়না টাউন, লিটল ইন্ডিয়া প্রভৃতি দেখার অভিজ্ঞতা পাঠকদের সামনে কিছু কিছু তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আজ ছিল সানতোষার অন্যতম বিস্ময় পর্ব উইংস অব টাইম। সানতোষায় সারাদিনের কর্মসূচি সেরে উইংস অব টাইম শো দেখার জন্য অপেক্ষমান। স্পটে গিয়ে টিকেট দেখিয়ে জানতে পারলাম রাত ৯টায় আমাদের শো শুরু হবে। এখন তা বন্ধ। বাজে মাত্র ৬টা। এই দীর্ঘ সময় কিভাবে কাটাবো।

আশ্ফা খানম শিক্ষাবিদ, নারীউন্নয়নকর্মী

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট