চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান জোরদার করতে হবে

৭ নভেম্বর, ২০১৯ | ২:৫৪ পূর্বাহ্ণ

দীর্ঘদিন ধরেই প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে ‘চট্টগ্রামের দুঃখ’ খ্যাত চাক্তাই খালসহ ৩৬টি খালের একটি বড়ো অংশ। কোনো কোনো দখলদার খালের পাড় দখল করেই ক্ষান্ত হয়নি শুধু, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) সহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে খালের অর্ধেক, এমনকি পুরো খাল জুড়েই নির্মাণ করেছে অবৈধ স্থাপনা। কিন্তু এসব অবৈধ স্থাপনা থেকে অবৈধ আয় করে তারা ‘আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ’ হয়ে গেলেও রহস্যজনক কারণে নজর দেয়ার ফুরসত পায়নি চসিক এবং সিডিএসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। দৈনিক পূর্বকোণসহ বিভিন্ন পত্রিকায় অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও সম্পাদকীয় প্রকাশের পর খালের পাড় ও খালজুড়ে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনাগুলো চিহ্নিত করে বিভিন্ন সময়ে উচ্ছেদ অভিযানের ঘোষণা, এমনকি কালেভদ্রে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হলেও শেষ পর্যন্ত প্রভাবশালীদের চাপে উচ্ছেদ অভিযান চলমান থাকেনি। পরিণামে জলাবদ্ধতাসহ নানা দুর্ভোগ এবং দুর্যোগ-দুর্বিপাক জেঁকে বসেছে নগরবাসীর জীবনে। তবে আশার কথা হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় সিডিএ খাল ও খালপাড়ের অবৈধভাবে স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান শুরু করেছে। নগরবাসীর জন্যে এটি একটি আশা জাগানিয়া সুসংবাদ নিশ্চয়ই।

দৈনিক পূর্বকোণে গতকাল প্রকাশিত খবরে দেখা যাচ্ছে, জলাবদ্ধতা নিরসনে ‘মেগা প্রকল্প’ বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন বিগ্রেড এর সহায়তায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে সিডিএ মঙ্গলবার ১০টি বহুতল ভবনের অবৈধ অংশ গুড়িয়ে দিয়েছে। অভিযানে ১.৮ কিলোমিটার জায়গা দখলমুক্ত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় খালের পাড়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গিয়ে এবারই প্রথম খালজুড়ে অবৈধভাবে গড়ে উঠা একটি ১২ তলা ভবনে হাত দিল সিডিএ। অভিযানকালে কয়েকটি বহুতল ভবনের অংশবিশেষও উচ্ছেদ করা হয়। তবে নগরীর ১৭ নং পশ্চিম বাকলিয়ার সৈয়দ শাহ রোডে চাক্তাই খালের উপরে আজিজ ম্যানশন নামে নির্মিত একটি ঝুঁকিপূর্ণ বহুতল ভবনসহ আরো অনেক স্থাপনা এখনো বহাল তবিয়তে আছে। আশা করা হচ্ছে, এসব অবৈধ স্থাপনা গুড়িয়ে দিতে কার্পণ্য করবে না সিডিএ।
গণম্যধ্যমের খবর অনুযায়ী, নগরীর সিরাজুদ্দৌলা রোড, জামালখান, লাভলেইন মোড়, লাভলেইন আবেদিন কলোনি ও মেথরপট্টি এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে খালের পাড়ে অভিযান পরিচালনা করে প্রায় ১০০টি স্থাপনার অবৈধ অংশ ভেঙে দেয়া হয়েছে। অবৈধ স্থাপনাগুলোর একাংশ ভেঙে দিয়ে বাকি অবৈধ অংশ ভাঙার জন্য নির্ধারিত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নের স্বার্থে দেরীতে হলেও সিডিএ সেনাবাহিনীর সহায়তায় বিভিন্ন খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনার এ সিদ্ধান্ত সাধুবাদযোগ্য বলতে হবে। তবে সিডিএ’র অনুমোদন ছাড়া কীভাবে এতোগুলো অবৈধ বহুতল স্থাপনা নির্মিত হলো, এসব অবৈধ ভবন নির্মাণে কারা সহায়তা করেছে, কেনো এতো দিন এসব স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান পরিচালিত হয়নি? সেসব প্রশ্নেরও উত্তর খোঁজা দরকার। যারা খালের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে অর্থ কামিয়েছে এবং যারা সহায়তা করেছে, তাদের শণাক্ত করে আইনের আওতায় আনা দরকার। কারণ উচ্ছেদ অভিযানের পাশাপাশি অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে ভবিষ্যতে এমন অপকা-ের দুঃসাহস কেউ দেখাবে না।

উল্লেখ্য, খালসহ পানি নিষ্কাশনের পথগুলো দখল হয়ে যাওয়ার কারণে বর্ষায় জলাবদ্ধতা এখন চট্টগ্রামের জনগণের ললাটলিখনে পরিণত হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই স্থবির হয়ে পড়ছে দেশের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ মহানগর বন্দরনগরী চট্টগ্রামের কর্মব্যস্ত মানুষদের জীবন। এর চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে জাতীয় অর্থনীতিতেও। সরকার এসব বিবেচনায় নিয়ে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার একটি মেগাপ্রকল্প গ্রহণ করেছে। প্রকল্পে প্রাথমিক পর্যায়ে নগরীর খালগুলো দখলমুক্তকরণ, ৩৬টি খালের মাটি অপসারণসহ ৩০০ কিলোমিটার নতুন ড্রেন নির্মাণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় নতুন করে ১০০ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ, খালের পাশে ১৭৬ কিলোমিটার প্রতিরোধক দেয়াল, ৮৫ কিলোমিটার সড়ক, ৪২টি সিল্ট ট্র্যাপসহ নানা অবকাঠামো নির্মাণের কথা রয়েছে। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রধান বাধা হয়ে আছে অবৈধ স্থাপনাসমূহ। বিদ্যমান অবৈধ স্থাপনা ও দখল হয়ে যাওয়া জায়গাগুলো পুনরুদ্ধার না করতে পারলে মেগাপ্রকল্পটির বাস্তবায়ন হবে অনেকটাই লোকদেখানো। এ অবস্থায় দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণের বিকল্প নেই। উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। নিজ দল থেকেই শুদ্ধি অভিযান শুরু করে তিনি ইতোমধ্যে সবার কাছে সুশাসনের কঠোরবার্তা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে দেশবাসী। সিডিএ’র উচিত এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে নগরীর খালগুলোর অবৈধ দখলের শেষ চিহ্নটিও নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। সিডিএ’র অভিযানে জনগণের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটবে- এমন প্রত্যাশাই করতে চাই আমরা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট