চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

বিশ^শান্তির অগ্রদূত মুহাম্মদ (সা.)

সাইমুম চৌধুরী

৭ নভেম্বর, ২০১৯ | ২:৫৪ পূর্বাহ্ণ

মহা ন সৃষ্টি কর্তা আল্লা হ এ পৃথি বীতে প্রথম মানুষ হিসেবে সৃষ্টি করেছিলেন হযরত আদম (আ.) কে। এরপর তাঁকে সঙ্গ দেয়ার জন্য মা হাওয়াকে সৃষ্টি করেছিলেন।

একসময় আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে তাঁরা দুজনই গন্দম ফল ভক্ষণ করে। আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করায় আল্লাহ তাঁদের দুজনকে পৃথিবীতে নামিয়ে দেয়। তাঁদের দুজনের মিলনে বংশ বৃদ্ধি (মানুষ) হতে থাকে। এরপর সময়ে সময়ে মানুষের হেদায়েতের জন্য নবী রাসুল প্রেরণ করতে থাকেন আল্লাহ। সর্বশেষ ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল সর্বশেষ নবী ও রাসুল হিসেবে হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে পাঠিয়েছেন মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ। এই দিনটি পৃথিবীর তাবৎ মুসলমান ইবাদত বন্দেগী ও গরীবদের দান খয়রাতের মধ্য দিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে থাকে।
হযরত মুহাম্মদ (সা.) জন্মের বেশ আগে থেকেই আরবের সামাজিক অবস্থা ছিল চরম নৈরাজ্য।

অশিক্ষা, কুশিক্ষা, গোষ্ঠীগত বিবাদ-সংঘাত, নির্মম দাসপ্রথা, নারীদের প্রতি চরম বৈষম্য সহ নানা সামাজিক অনাচারে ডুবে ছিল আরব। ঠিক সে অবস্থায় হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর আবির্ভাব ঘটে আলোর দিশারি হয়ে। অন্যায়, অবিচারে ও অজ্ঞতায় ডুবে থাকা আরব জনগোষ্ঠীকে দেখান তিনি আলোর দিশা। সেই আলোর পথ ইসলামের হাত ধরে শান্তির আবহ সৃষ্টি হয় আরব থেকে পৃথিবীর কোণে কোণে। সার্বিক অর্থে মানুষে মানুষে বিভক্তি, হানাহানি, মারামারির সমাপ্তি ঘটিয়ে শান্তি ও কল্যাণে জীবনযাপনের জন্যই দিশারী হিসাবে আবির্ভাব ঘটেছিল এই মহামানবের।
হযরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন মুসলমানদের নবী রাসূল। কিন্তু অন্য সম্প্রদায় ও ধর্মের লোকেরাও তাঁকে ভালবাসতেন শ্রদ্ধা করতেন। কোমল হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন হযরত মুহাম্মদ (সা.)। প্রাক-ইসলামি যুগে আরব সমাজে অশান্তি লেগেই থাকত। কিশোর বয়সে হযরত মুহাম্মদ (সা.) এসব দেখে তাঁর কোমল হৃদয়ে কেঁদে উঠে। তখন তাঁর কিশোর বয়স। এই বয়সেই তিনি শান্তি রক্ষায় ‘হিলফুল ফুজুল’ নামক শান্তি সংঘ গঠন করে অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। অর্থ-প্রতিপত্তির প্রতি তিনি নির্লোভ ছিলেন। তিনি বিত্তশালী ছিলেন না। মক্কার এক ধনাঢ্য ও বিদুষী মহিলা হযরত বিবি খাদিজা (রা.) এর সঙ্গে তিনি বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া রাসুল (সা.) অঘাত ধন সম্পদের মালিক হন। এ সম্পদ রাসুল (সা.) ভোগ বিলাস বা নিজের স্বার্থে ব্যবহার না করে আর্ত মানবতার সেবায় বিলিয়ে দেন।

পবিত্র কাবা গৃহে ‘হাজরে আসওয়াদ’ বা কালো পাথর স্থাপন নিয়ে একবার গোত্রে গোত্রে বিবাদ বেঁধে যায়। যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার অবস্থা। একসময় তর্ক এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে মারামারি লাগার অবস্থা। তখন একজন প্রস্তাব করলেন, আবদুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদকে দেয়া হউক মিমাংসার দায়িত্ব। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর বয়স তখন অল্প। তারপরও সত্যবাদিতা ও বিশ^স্ততার জন্য ইতিমধ্যে তিনি আল আমিন উপাধিতে ভূষিত হয়ে গিয়েছেন। ধৈর্য্য সহকারে বালক হযরত মুহাম্মদ (সা.) সমস্যাটি শুনে তিনি তাঁর (রাসুল সা.) সিদ্ধান্তে বললেন, একটি চাদর আনা হোক। চাদরের মাঝখানে পাথরটি রেখে মক্কার চার গোত্রের চার নেতা চাদরের চার কোণায় ধরে পাথরটি উঠাবেন এবং যথাস্থানে নিয়ে রাখবেন।
মহানবী (সা.) প্রথম বিশ^নেতা যিনি সমাজ থেকে দাসপ্রথা বিলোপ করেন। সে সময় কন্যা শিশুদের জীবন্ত মাটিতে পুতে ফেলা হতো। রাসুল (সা.) এই প্রথা নিষেধ করেন। এক সময় রাসুল (সা.) মদিনায় হিজরত করেন। মদিনায় এসে তিনি ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, শান্তি সম্প্রীতি রক্ষায় মদিনা সনদ তৈরী করেন। তাতে মদিনায় বসবাসরত সকল ধর্মাবলম্বীদের স্বাধীনতা ও সম অধিকারের স্বীকৃত ছিল। রাসুল (সা.) জীবনচরিতের গভীর দর্শন সমাজ, দেশ ও বিশ^শান্তির দিশা দেয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট