চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

মা দিবস : আনুষ্ঠানিকতা নয়, চাই দায়বদ্ধতা

১২ মে, ২০১৯ | ১:০৩ পূর্বাহ্ণ

আজ আন্তর্জাতিক মা দিবস। সন্তানের ওপর মায়ের অধিকারের কথাটি স্মরণ করিয়ে দিতেই মূলত দিনটি পালন করা হয়। মা দিবসের মূল উদ্দেশ্য, মাকে যথাযথ সম্মান ও অধিকার দেয়ার ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা। মাতৃভক্ত সন্তানরা এদিন মা’কে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। কিনে দেন সামর্থ্য অনুসারে মূল্যবান উপহারসামগ্রী। একই সঙ্গে পুরো দিনটি তারা মায়ের সঙ্গে কাটানোর চেষ্টা করেন। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের মাতৃভক্ত সন্তানরা মায়ের ন্যায্য অধিকার প্রদান ও যথার্থ সম্মান প্রদর্শনের শপথ নেন এদিন। যার কারণে এ দিনটির ভাবগাম্ভীর্য অন্য দশটি দিবসের চেয়ে স্বতন্ত্র-আলাদা। মা দিবসে সব মায়ের প্রতি রইল কৃতজ্ঞতা, গভীর শ্রদ্ধা ও নিরন্তর ভালোবাসা।
মায়ের জন্য বিশেষ দিন থাকার দরকার আছে কি-না তা নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। কারণ শুধু বিশেষ দিন নয়; মায়ের প্রতি সন্তানের ভালোবাসা প্রতিটি দিনের, প্রতিটি ক্ষণের। তবে, এ কর্মব্যস্ত সময়ে ‘মা দিবস’ নামের বিশেষ দিনে মায়ের জন্যে পুরো একটি দিন ব্যয় করার সুযোগ তৈরি হয়। একটি বিশেষ দিনে মা’কে একটু বেশি ভালোবাসার, সেবা করার সুযোগ তৈরি হয়। যারা কখনো বলেননি, ‘মা তোমাকে ভালোবাসি’, তারা মা’কে ভালোবাসার কথাটি মুখ ফুটে বলতে পারেন এ বিশেষ দিনে। সংগত কারণে আধুনিক সভ্যতার এই ব্যস্তসময়ে মা দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্যকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। দিবস পালন নিছক আনুষ্ঠানিকতা হলেও বলতে হবে ‘মা’ শব্দটির পুণ্য ছোঁয়ায় এ এক মহতী অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
একজন পাষাণ হৃদয়ের মানুষও নির্দ্বিধায় স্বীকার করবে যে, পৃথিবীর মধুরতম শব্দটি হচ্ছে ‘মা’। মায়ের কোন বিকল্প নেই। মায়ের তুলনা মা-ই। সন্তানের বিপদে, কষ্টে, হাজারও যন্ত্রণায় একমাত্র ভরসাস্থল। সন্তানের কাছে মা’র চেয়ে আপন আর কিছু নেই। ‘মা’ শব্দটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে মায়াবী সুন্দর মুখ। যে মুখে সারাক্ষণই থাকে আদর, ভালোবাসা, ¯েœহ। মা। ভালোবাসা আর নিরাপদ আশ্রয়ের শ্রেষ্ঠ জায়গা। মা শাশ্বত, চিরন্তন। এ পৃথিবীতে মায়ের সাথে সন্তানের সম্পর্কের চেয়ে মধুর সম্পর্ক আর নেই। একটি সদ্যজাত শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো থেকে শুরু করে তাকে তিল তিল করে বড় করে তোলার দায়িত্বটি পরম যত্ন ও নিষ্ঠার সাথে পালন করেন মা। যে মা সন্তানকে দশটি মাস গর্ভে ধারণ করেন, ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর অপরিসীম মায়া-মমতায় পৃথিবীর বুকে ধীরে ধীরে বড় করে তোলেন, মানুষের কোনো ভাষাতেই, কোনো কথাতেই সেই মায়ের অবদানের পূর্ণ পরিচয় তুলে ধরা যায় না।
মানুষ তো বটেই, পশু-পাখির মধ্যেও মাতৃ¯েœহ তুলনাহীন। অথচ কোথাও কোথাও এই মা-ই এক সময় হন উপেক্ষিত। যে সন্তানদের পরম মমতায় মা কোলে-পিঠে মানুষ করেছেন। শত কষ্টে আগলে রেখেছেন বুকের মাঝে, সে সন্তানের কাছে একসময় বোঝা হয়ে পড়েন কোনো কোনো মা। যাদের জীবনের শেষ ক’টি দিন কাটাতে হয় বৃদ্ধাশ্রমে। ইট কংক্রিটের এ শহরে আমাদের কানে পৌঁছাচ্ছে না এসব অসহায় বৃদ্ধ মায়ের নিভৃত কান্না। চুপ করে থাকা হাজারও কান্নার চেয়ে গভীর হলেও তা শোনার অবসর আমাদের কমে যাচ্ছে। ফলে অজানাই থেকে যায় উপেক্ষিত মায়েদের মনের গোপনে লুকিয়ে থাকা দুঃখগুলোর কথা। তবে, যারা মায়ের প্রতি তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য প্রদর্শন করে, বিধির অমোঘ নিয়মে তারাও একদিন নিজ সন্তানদের কাছে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের শিকার হবে, সন্দেহ নেই। আমাদের চারপাশে এ ধরনের উদাহরণ বেশুমার।
সাম্প্রতিক সময়গুলোতে মা দিবসে আনুষ্ঠানিকতার ঘাটতি দেখা না গেলেও যৌথ পরিবার প্রথা দুর্বল হয়ে যাবার কারণে মায়েদের দুর্ভোগ যে বাড়ছে সে বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। আজ বিশ্ব ‘মা’ দিবসকে কেন্দ্র করে এই অনাকাক্সিক্ষত চিত্রের অবসান দেখতে চাই আমরা। মা-বাবার অধিকার বিষয়ে সমাজবাসীকে সচেতন করতে নেয়া হোক সুচিন্তিত কর্মসূচি। প্রয়োজনে পদক্ষেপ নেয়া হোক পিতা-মাতার অধিকার রক্ষায় আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নেও। আমরা চাই, মা যেমন তাঁর সন্তানকে অকৃত্রিম ভালোবাসা দিয়ে বেঁধে রাখেন, সন্তানও তেমনি মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার ডানা প্রসারিত করুক।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট