চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

ছাত্রসমাজ হোক মেধাবী ও মানবিক

এড. মোঃ সাইফুদ্দীন খালেদ

৬ নভেম্বর, ২০১৯ | ২:০৬ পূর্বাহ্ণ

আমাদের ছাত্রসমাজ ত্যাগ তিতিক্ষার অফুরন্ত প্রাণশক্তি ও সজীবতার প্রতীক। সততা, আদর্শবাদিতা, ন্যায়নিষ্ঠা, দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ, মানবিক ইত্যাদি বহুবিধ গুনাবলি একজন প্রকৃত ছাত্রের চরিত্রে লক্ষণীয় হয়ে ওঠে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে জ্ঞান আহরণের মাধ্যমে এসব গুণাবলী অর্জন করে থাকে।

ছাত্রসমাজ যেকোন জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ। সুতরাং দেশের ভবিষ্যৎ বলতে ছাত্রসমাজকেই বুঝায়। তারাই পারে জাতির সঠিক কল্যাণ বয়ে আনতে। জাতি গঠনে ছাত্রদের এ ভূমিকাকে দু’দিক থেকে বিবেচনা করা যেতে পারে। প্রথমত, ছাত্ররা নিজেদেরকে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে, যোগ্যতা অর্জন ছাড়া কোন ছাত্র জাতি গঠনে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে না। দ্বিতীয়ত, নিজেদের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। যেমন মেরুদন্ডের উপর ভর করে মানুষ সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে তেমনি শিক্ষাও দেয় জাতিকে সোজা হয়ে দাঁড়াবার শক্তি। অশিক্ষিত জাতি মেরুদন্ডবিহীন। কিন্তু প্রাণীর মতো শরীর গুঠিয়ে অন্ধকার পঙ্কিল গহ্বরে স্থবির হয়ে পড়ে থাকে। শিক্ষা জগতই যাবতীয় জ্ঞানের সোপান। জ্ঞানই শক্তি। শিক্ষা জাতির অস্তিত্বে এই জ্ঞান সঞ্চার করে তাকে সক্ষম করে তোলে। এ শিক্ষাঙ্গন থেকে ছাত্রছাত্রী জ্ঞান লাভ করে নিজেকে যোগ্য ও জ্ঞানী মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। দেশের প্রতিটি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে শিক্ষাঙ্গনের অন্তর্ভূক্ত। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখা প্রতিটি শিক্ষার্থীর কর্তব্য। অন্যথায় শিক্ষার্থীর আসল উদ্দেশ্য হবে ব্যর্থ এবং ছাত্রসমাজও হবে বিপদগামী। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ’৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল ছাত্রসমাজ, ’৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ৭১-এ তরুন সমাজের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশকে পরাধীনাতার হাত থেকে মুক্ত করেছে।

আজ শিক্ষাঙ্গনের পবিত্র মাটিতে কলঙ্ক লেপন হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায়ই অশান্ত পরিবেশ বিরাজ করে। সাধারণ শিক্ষার্থীর জীবনের নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। একজন সচেতন ছাত্র কখনো নিজেকে নোংরা সন্ত্রাসে নিমগ্ন করতে পারে না। গুনার্জন, আত্মশুদ্ধি হয়ে চরিত্রগঠন ও সমাজজীবনের বাস্তবতার মুখপিষ্ট হবার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতিই ছাত্রজীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। অথচ সন্ত্রাস একজন ছাত্রকে এই কার‌্যাবলী থেকে বিরত রাখে।

পবিত্র এই শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষা গ্রহণে যাওয়া একজন ছাত্র লাশ হয়ে ফিরে আসছে। এ ছাত্রটির কাজে তার পরিবার এমন কি জাতিও অনেক কিছু আশা করেছিল। অথচ সে স্বপ্নকে চিরতরে ধ্বংস করে দিচ্ছে। যেসব অভিভাবকের অর্থ আছে তারা ছেলেমেয়েদের বিদেশে পাঠিয়ে নিশ্চিন্তে থাকছে। কিন্তু যাদের সামর্থ নেই তাদের ছেলেদের যদি এমন অবস্থা হয় তা হবে জাতিকে হতাশায় ডুবিয়ে দেওয়া। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যখন বছরের বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকে একদিকে যেমন অর্থের অপচয় হয় অন্যদিকে ছাত্রদের শিক্ষালাভে বিঘœতা সৃষ্টি করে। এর ফলশ্রুতিতে জাতির ভাগ্যে নেমে আসছে দুর্যোগ। শিক্ষাঙ্গনগুলোতে ক্রমাগত সেশনজট বৃদ্ধি পেয়ে এমন অবস্থা সৃষ্টি হয় যেখান থেকে বের হলে চাকরির বয়স শেষ হয়ে যায়। ফলে ঐ পাস করে আসা তরুণদের ভাগ্যে জোটে বেকারত্বের অভিশাপ। অথচ এমন হবার কথা ছিল না। একাত্তরের ত্রিশ লাখ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত বাংলার স্বাধীনতা জাতিকে যে গৌরব এনে দিয়েছিল সে গৌরব বয়ে নেয়ার উপযোগী শক্তি তথা ছাত্র সমাজ। যখন একটা ছেলে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় তখন তার পরিবার বিশেষ করে তার মা-বাবা আনন্দে বিভোর হয়ে পড়ে, কত স্বপ্নই তাদের বুকে বাসা বাঁধে, আর বলে ‘‘আমার আদরের খোকা একদিন অনেক বড় হবে।’’ কিন্তু পত্রিকার পাতা খুললে যদি দেখতে পায় সেই বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া ছেলেকে হারিয়ে মায়ের আহাজারি কান্নার চিত্র। যা আমাদের দেশের সুনাগরিকদের কাছে অস্বাভাবিক এবং কল্পনাতীত। প্রশ্ন রইল, পবিত্র শিক্ষাঙ্গনে আজ শিক্ষার্থী কতটুকু নিরাপদে? জীবনের নিরাপত্তা যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয় তখন এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কিছু হতে পারে না। সন্ত্রাস প্রতিকার সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত উদ্যোগ।

রাজনৈতিক দলগুলোকে বুঝতে হবে, সন্ত্রাস তাদের জন্যেও ডেকে আনবে ভয়াবহ পরিণতি। আমি মনে করি পরক্ষীায় অংশগ্রহণের জন্য ক্লাসে উপস্থিতি, টিউটরিয়ালসহ পড়াশোনার চাপ বৃদ্ধি করা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যুগোপযোগী আরো পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। ছাত্র, শিক্ষক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসন যদি সচেতন হয় তাহলে সন্ত্রাসের কলঙ্ক মুক্ত হবে আমাদের পবিত্র শিক্ষাঙ্গন এবং প্রিয়জন হারানোর বেদনা থেকে মুক্তি পাবে আমাদের পরিবার।

এডভোকেট মোঃ সাইফুদ্দীন খালেদ আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট