চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বৌদ্ধ ধর্মে ত্রিদ্বার সংযতে দুঃখ মুক্ত হয়

সমীরণ কুমার বড়–য়া

২১ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:০৩ পূর্বাহ্ণ

এক বৈশাখী পূর্ণিমাতে উদিল বুদ্ধ আত্মা, মুক্ত করিতে মোক্ষ দ্বার, আজিকে জুড়িয়া অর্ধ জগৎ ভক্তি প্রণতিচরণে তাঁর। কোনু হাসো কিমানন্দ নিচ্চং পজ্জলিতে সতি, অন্ধকারেন ওনদ্ধা পদীপং নগবেস সথ? হে মানবগণ, তোমরা লোভ দ্বেষ ও মোহরূপ অগ্নিতে এবং জরা ব্যাধিও মরণরূপ দুঃখানলে নিত্য প্রজ্জলিত থেকে তোমাদের মধ্যে কিসের হাস্য এবং কিসের আনন্দ? জন্ম হতে জন্মান্তরে এবং ভব হতে ভবান্তরে এত দুঃখ ভোগ করেও কেন তোমরা জ্ঞানের সন্ধান করতেছ না? দুঃখ মুক্ত হতে প্রথমে পাপকে ঘৃণা করতে হবে। যে চিন্তা চিত্তকে কলুষিত করে তাহা পাপ। লোভ দ্বেষ ও মোহ পাপের মূল। পাপ হতে মানুষের দুঃখের উৎপত্তি। পাপ কর্মের ফল বিলম্বে ফলে এবং পাপীকে সর্বনাশ করে। লোভদ্বেষ ও মোহে বশীভূত হয়ে লোভী ব্যক্তি কায়দ্বারে প্রাণী হত্যা, চুরি করা, মিথ্যা কামাচার, নেশাপান, বাক্যদ্বারে মিথ্যা কথা, কর্কশ বাক্য, পিসুন বাক্য অর্থাৎ দুই ব্যক্তির মধ্যে সু-সম্পর্ক নষ্ট করা, গুরুজনকে উপহাস করা, অনর্থক কথা বলা এবং মনদ্বারে পরের সম্পদ পাওয়ার ইচ্ছা করা, পরশ্রীকাতর হওয়া অর্থাৎ অন্য ব্যক্তির সুখ, সুনাম ও উন্নতি দেখে সুখি না হয়ে হিংসা করা। মনে হিংসা উৎপন্ন হয়ে নানা রকম পাপকর্মে লিপ্ত হয়। মোহগ্রস্ত ব্যক্তি বিবিধ পাপকর্মে রত হয় এবং চিরকাল দুঃখ ভোগ করে। হিংসা করলে মানুষ দিন দিন গরীব হয়। একে অন্যকে ব্যথা দিয়ে কখনো সুখী হতে পারে না। যতই মনের হিংসা দূর হবে, ততই আসবে মনে শান্তি। পুণ্য কর্মে সব কামনা পূর্ণ হয় এবং পাপকর্মের সব কামনা ছিন্ন হয়। অতএব, জীবনে সুখী হতে কায় বা শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দ্বারা, বাক্যের দ্বারা ও মন দ্বারা সংযত হওয়া উত্তম, যাতে নিজের এবং অপরের উপকার ব্যতীত অপকার সাধিত না হয়। দান, ধর্ম, পূজা অর্চনা, উপবাস ব্রত পালন, গেরুয়া বসন ধারণ, তীর্থ স্থানে পরিভ্রমণ সবই অর্থহীন হয়ে যাবে যদি না মানুষ কায় কর্ম, বাককর্ম ও মনকর্ম সম্পাদনে সংযত না হয়। এমন কোন অদৃশ্য মহাশক্তি নেই যাকে পূজা নৈবেদ্য দিয়ে তুষ্ঠ করতে পারলে মানুষকে তিনি দেবেন স্বর্গ, মোক্ষাসুখ। মানুষ নিজেই নিজের ত্রাণকর্তা। নিজেই নিজের প্রভু। মানুষ নিজের মধ্যেই নিজের জ্ঞানপ্রদীপ জ¦ালাতে হবে এবং দূর করতে হবে পুরুষনাক্রমে সঞ্চিত অন্ধ বিশ^াসের জমাট অন্ধকার। ধর্মই শ্রেষ্ঠ শরণ, অন্যকোন শরণের প্রয়োজন নেই। একজন প্রয়োজন, সৎ সংকল্প, সৎ দৃষ্টিভঙ্গি এবং শুভবিষয়ে চিত্তের একাগ্রতা। বুদ্ধ মানুষের দুঃখ মুক্তির পথ প্রদর্শক মাত্র। সুখ-শান্তি ও দুঃখ মুক্তির জন্য কাজ আমাদেরই করতে হবে। বুদ্ধ দুঃখরূপ রোগের চিকিৎসক। বুদ্ধের ধর্ম ঔষধ এবং মানবজাতি রোগী। রসগোল্লা মিষ্টি এটা শুধু জানলেই আমাদের মুখ মিষ্টি হবে না। এ জন্য রসগোল্লাকে জিবের উপর রাখতে হবে। ধর্মকথা শ্রবণ করা, জানা, পড়া সহজ, কিন্তু সেগুলো কর্মজীবনে প্রয়োগ করা কঠিন। কঠিন বলে কেউ তা করতে চায়না।

সম্যক ধর্ম আমাদের থেকে দূরে সরে থাকে।

ধর্মকে জীবনে প্রয়োগ করতে পারলে সুখী হওয়া যায়। মানুষ যদি চিন্তা করে আমাকে বৃদ্ধ হতে হবে, বৃদ্ধ হলে রোগ ভোগ করতে হবে এবং প্রিয়জন ও ধন-সম্পদ ত্যাগ করে পরকালে যেতে হবে, এসব চিন্তা করলে পাপ কর্ম বন্ধ হয়ে যায়। কর্মই হবে আমার একমাত্র নিজস্ব সম্পদ এবং আমি আমার কর্মের উত্তরাধিকারী। যেমন-সহ¯্র গাভীর মধ্যে বাছুর আপন মাতাকে বেছেলয়, তেমনি পূর্বকৃত কর্ম অসংখ্য জীবগণের মধ্যে কর্তাকেই অনুসরণ করে। কর্ম তাকে বিপাক দান করবেই। তৃষ্ণাই জন্মের জননী। যদি কেউ তৃষ্ণা ক্ষয় করেন কামনা, অবশ্যই করতে হবে বিদর্শন ভাবনা। যে গৃহ উত্তমরূপে আচ্ছাদিত উহাকে ভেদ করে যেমন বৃষ্টি প্রবেশ করতে পারে না, সেরূপ যে ব্যক্তির চিত্ত ভাবনার রত থাকে, তাঁর চিত্তে লোভ, দ্বেষ ও মোহ প্রবেশ করতে পারে না। কাপড়ের ময়লা পরিষ্কার হয় জলে, সেরূপ মানুষের মনের ময়লা পরিষ্কার হয় শীলে বা চরিত্রে।

চরিত্র এমনই অদৃশ্য জিনিস যা অর্থের বিনিময়ে পাওয়া যায় না। এটা নিজেকে অর্জন করতে হয়। সন্তান পরিবারের সদস্য ও মাতাপিতার নিকট হতে এই চরিত্র গঠনের পর্ব শুরু হয়। সুতরাং ঈযধৎরঃু নবমরহং ধঃ যড়সব, মাতাপিতার চরিত্রকে সন্তান অনুসরণ করে। অতএব ঐড়সব রং ঞযব নবংঃ ংপযড়ড়ষ ধহফ সড়ঃযবৎ রং ঃযব নধংঃ ঃবধপযবৎ. সংসার ধর্মে পঞ্চনীতি অক্ষত ভাবে পালন করলে কেউ গরীব থাকতে পারে না। পঞ্চনীতি পালনে ব্যক্তির ধন-সম্পদ ও যশোরাশি শুক্ল পক্ষের চন্দ্রের মত দিন দিন বাড়তে থাকে। মানুষের মন হতে অন্ধবিশ^াস ও কু-সংস্কার দূর হয়ে সম্যক ধর্ম উপলব্ধি হোক।

মানুষের মধ্যে প্রতিহিংসার বহ্নি নির্বাপিত হোক। মানুষ মানুষকে ভালবাসুক, মানুষের সৌভাগ্যে মানুষ আনন্দিত হোক।

সমীরণ কুমার বড়–য়া শিক্ষক

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট