চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

কিছু মৃত্যু আমাদের কাঁদিয়ে যায়

অধ্যাপক রতন কুমার তুরী

১০ মে, ২০১৯ | ১:১৭ পূর্বাহ্ণ

নুসরাত হত্যাকা- নিয়ে বাংলাদেশে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। সারা দেশ থেকে জোর দাবি ওঠেছে, দৃষ্টান্তমূলক বিচার হতে হবে ফেনীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত হত্যার। নুসরাত মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনায় অধ্যক্ষ তার সঙ্গোপাঙ্গ দিয়ে নুসরাতকে গায়ে কেরোসিন দিয়ে হত্যা করে। এই ঘটনাটির নিন্দা এসেছে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে। এসেছে এ হত্যায় জড়িতদের বিচারের নিশ্চয়তা।
এ পর্যন্ত নুসরাত হত্যাকান্ডে জড়িত ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এদের মধ্যে অপরাধের কথা স্বীকার করেছে। এ হত্যাকা- সম্পর্কে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং এ হত্যাকা-ের সাথে জড়িত সবার বিচারের নিশ্চয়তা দিয়েছেন তাই এ হত্যাকা-ের বিচার অচিরেই হবে বলে আশা করা যায়। প্রকৃতপক্ষে নুসরাত হত্যাকা- যেমন আমাদের কাঁদিয়েছে তেমনি সমাজকেও কিছু শিক্ষা দিয়ে গেছে। অপরাধীদের আশেপাশে থাকা ক্ষমতাবানরা যে কতো নির্লজ্জ হতে পারে তা আমরা নুসরাত হত্যাকান্ডে প্রত্যক্ষ করলাম। এদেশে অনেক সময় বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে যেমন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের মেধাবী ছাত্রী তনু হত্যার কোনো সুরাহা হয়নি, আজ তিন বছর যাবৎ।
তনু হত্যার মামলাটি এখনও সিআইডিতে বন্দী রয়েছে। পুলিশ বলছে কাজ চলছে। আর তনুর পরিবারের অভিযোগ তাদের সাথে যোগাযোগই করছে না আইন শৃংখলা বাহিনী। ২০১৬ সালের ২০ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাসের একটি বাসায় পড়াতে গিয়েছিল তনু। পরে তার লাশ পাওয়া যায় পাশের একটি জঙ্গলে। এ নিয়েও সারা দেশে খুনিদের গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন এবং মিছিল হয়েছিল। আরো একটি আলোচিত ঘটনা ছিল চট্টগ্রামের সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকা-। গত আড়াই বছরেও এ মামলার তদন্তের অগ্রগতি নেই। কবে নাগাদ এই তদন্তের শেষ হবে কেউ জানে না। ২০১৬ সালের ৫ জুন চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় মিতুকে।
এই ঘটনায় মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার সে সময়ে ব্যাপক সহানুভূতি অর্জন করলেও পরে তিনি চাকুরি ছেড়ে দেয়ায় জনমনে ব্যাপক প্রশ্নের জন্ম দেয়। যা এখনও রহস্যেই রয়ে গেছে।
অপরদিকে, বিগত ১৬ বছরেও শেষ হয় নি মডেল তিন্নি হত্যার বিচার। ২০০২ সালের ১০ নভেম্বর বুড়িগঙ্গার বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর নীচ থেকে উদ্ধার করা হয় মডেল তিন্নির লাশ। এই মামলা উচ্চ আদালতে রিটের কারণে আটকে আছে। আরেক আলোচিত হত্যা মামলা হচ্ছে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশা হত্যা। এর বিচার কাজ চলছে ঢাকার ৬ নং নারী নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে।
এই ট্রাইব্যুনালে দ্রুত বিচারের কথা থাকলেও প্রায় তিন বছরেও রায় হয় নি। ২০১৬ সালের ২৪ আগষ্ট রিশাকে তার বিদ্যালয়ের সামনে ছুরিকাঘাত করে হত্যার অভিযোগ রয়েছে দর্জি দোকানের কর্মচারী ওবায়দুল খানের বিরুদ্ধে। অবশ্য মূল আসামি ওবায়দুল খান এখনো জেল হাজতে রয়েছে। অন্যদিকে, গত ২০১৮ সালের ৩ নভেম্বর ভিকারুননিসা নুন স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী অরিত্রীর আত্মহননের ঘটনাটিও সেসময় বেশ আলোচিত ছিল। ঐ স্কুলের গুটিকয়েক শিক্ষিকার অন্যায় আচরণে অরিত্রী আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
এ সময় পুলিশ একজন শিক্ষিকাকে গ্রেফতারও করে। তিনি জামিনে মুক্ত হয়। অরিত্রী আত্মহননের তদন্ত রিপোর্ট জমা পরলেও এখনও বিচার কাজ শুরুই হয় নি। আসলে কিছু মৃত্যু আমাদের বাকরুদ্ধ করে দেয়। আমরা প্রতিনিয়তই এদের জন্য অশ্রুসিক্ত নয়নে বিচারের প্রার্থনা করে যাই। আমরা সবসময় প্রার্থনা করি এমন মৃত্যু যেনো এদেশে আর না হয়।
নিষ্পাপ নুসরাত, মিতু, তনুদের হত্যাকারীদের বিচার যেনো বাংলার মাটিতেই হয় সেই অপেক্ষায় থাকি প্রতিদিন। আসুন, সোচ্চার হই এবং সংঘটিত হই এইসব নরপশুদের বিরুদ্ধে যারা হত্যা করে আগুনে পুড়িয়ে মারে আমাদের বোনদের, আমাদের কন্যাদের।

লেখক : কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক, মানবাধিকারকর্মী।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট