চট্টগ্রাম রবিবার, ০৬ অক্টোবর, ২০২৪

এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল

শ্রেণীকক্ষে পাঠদান নিশ্চিত করুন

১০ মে, ২০১৯ | ১:১৪ পূর্বাহ্ণ

নকল ও প্রশ্নফাঁস বন্ধের ইতিবাচক প্রভাবে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় এবার পাসের হার বেড়েছে। ১০ শিক্ষাবোর্ডে এবার পাসের হার বেড়েছে ৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ। তবে গণিতের ‘কঠিন প্রশ্নে’ ধরাশায়ী না হলে পাসের হার আরো বাড়তো, সন্দেহ নেই। কমতো না জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও। চতুর্থ বিষয়ের নম্বর যোগ না হওয়ার পাশাপাশি গণিতের ‘কঠিন প্রশ্ন’ জিপিএ-৫ এর ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব রেখেছে। এবার জিপিএ-৫ কমেছে ৫ হাজার ৩৫টি। তবে সব শিক্ষার্থী পাস করেছে এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেশি। কমেছে শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠানও। নানাবিষয় বিবেচনায় নিলে এবারের পরীক্ষার ফলকে তুলনামূলক ভালো হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। তবে পাসের হার বাড়ানোর চেয়েও বেশি জরুরি শিক্ষার মান বাড়ানো। কিন্তু শিক্ষার মান কি আদৌ বেড়েছে? যদিও শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষার মান বৃদ্ধির দাবি করেছেন, তবে মানের নানা শর্ত বিবেচনায় নিলে তাঁর দাবির সাথে দ্বিমত পোষণের যথেষ্ট সুযোগ আছে।
ফল বিশ্নেষণে দেখা যাচ্ছে, এবার মাধ্যমিকে পাসের হার বাড়লেও কাক্সিক্ষত ফল থেকে বঞ্চিত অনেক শিক্ষার্থী। গণিতের ‘অতি কঠিন প্রশ্নকেই’ এজন্যে দায়ী করা হচ্ছে। গণিতের কঠিন প্রশ্ন বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য খুব একটা সমস্যা না হলেও এর প্রভাব মানবিকের শিক্ষার্থীদের ওপর পড়ে। এবারও তাই হয়েছে। সবচেয়ে নাজুক অবস্থা মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার ছাত্রছাত্রীদের। অঙ্ক মেলাতে না পারায় এ দুই শাখার শিক্ষার্থীদের ফেলের হার বিজ্ঞান শাখার চেয়ে বেশি। সার্বিক পাসের হার এবং জিপিএ প্রাপ্তিতেও এর ধাক্কা লেগেছে। গণিতের প্রশ্নপদ্ধতি সৃজনশীল হওয়ায় সারাদেশে এ বিষয়ে ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর মতো উপযুক্ত ও দক্ষ শিক্ষকের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। আবার গণিতের প্রশ্নপত্র কঠিন হওয়ায় সার্বিক ফলে প্রভাব পড়েছে। এর সঙ্গে জিপিএ নির্ধারণে চতুর্থ বিষয়ের নম্বর যোগ না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের অনেকেই কাক্সিক্ষত ফল পেতে ব্যর্থ হয়েছে। আবার বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ফেল করার মূল কারণ হচ্ছে গণিত। আর প্রতিটি বোর্ডেই গণিতে ফল খারাপ করেছে মূলত মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা। প্রসঙ্গত, মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা বেশিরভাগই গ্রামাঞ্চলের। তৃণমূল পর্যায়ে যোগ্য শিক্ষকের সংকট রয়েছে। বিষেশত ইংরেজি ও গণিতে দক্ষ শিক্ষকের চরম অভাব রয়েছে। পরীক্ষার ফলে এর প্রভাব পড়েছে। বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। এবারের ফলে সারাদেশে জয়জয়কার মেয়েদের। পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তি, দু’দিকে তারাই সেরা। অবশ্য পরীক্ষায় অংশ নেয়ার দিক থেকে ছেলেরা এগিয়ে আছে। উল্লেখ্য, এ বছর মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্য ছাত্রছাত্রীরা কড়াকড়ির কারণে বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। এ রকম ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা সাড়ে পাঁচ লাখ। এরা কোনোভাবে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারলে অকৃতকার্যের হার আরও বাড়ত নিশ্চয়ই।
পাসের হার বৃদ্ধি, মেয়ে শিক্ষার্থীদের এগিয়ে যাওয়া, শতভাগ পাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধি নিশ্চয়ই সুখবর। তবে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার গুণগত মান কতটা বেড়েছে তাও বিবেচনায় নেয়া জরুরি। শিক্ষার গুণগত মান না বাড়লে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিযোগিতায় তারা পিছিয়ে পড়বে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বারবার কারিকুলাম, পাঠ্যবই ও পরীক্ষাপদ্ধতি পরিবর্তন-পরিমার্জনের কুফল নিয়েও ভাবতে হবে। একটি বিষয় পুরোপুরি আয়ত্ত করার আগেই আবার নতুন পদ্ধতি চালু হচ্ছে। শিক্ষকরা নতুন পদ্ধতিগুলো মানিয়ে নিতে পারছেন না। পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নেই। নেই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পর্যাপ্তসংখ্যক শিক্ষকও। ফলে পাঠদান যেভাবে হওয়ার কথা তা হচ্ছে না। এর প্রভাব পড়ছে পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে। পরীক্ষার আগেই অনেক শিক্ষার্থী ঝরে যায়। কেনো ঝরে যায় তা সবারই জানা আছে। কার্যকর পদক্ষেপ থাকতে হবে এসব বিষয়ে। আনন্দদায়ক করতে হবে শ্রেণিকক্ষের পাঠদান। যোগ্যরাই যাতে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, উচ্চশিক্ষার ভিত্টি তৈরি হয় মাধ্যমিক পর্যায়েই। শিক্ষার এ পর্যায়ে কোনো গলদ থাকলে উচ্চশিক্ষায় তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। তাই ঘাটতিগুলো শনাক্ত করে জোরালো প্রতিবিধান উদ্যেগ থাকতে হবে। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সবার প্রতি রইল আমাদের অভিনন্দন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট